প্রসঙ্গ টি-২০ বিশ্বকাপ: একটি পর্যবেক্ষণ

দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে সুবর্ণ সুযোগছবি: রয়টার্স

টি-২০ বিশ্বকাপে সুপার এইট থেকে বাংলাদেশের বিদায় এবং আফগানিস্তানের সেমিফাইনাল, অবশেষে আফগানদেরও বিদায়ে আমি খুব একটা মর্মাহত কিংবা হতাশ হইনি। ইতিমধ্যে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালে পৌঁছে গেছে।

বাংলাদেশ দল নিয়ে অনেকেই অনেক রকম সমালোচনা–আলোচনা, পক্ষে–বিপক্ষে কথা বলছেন। অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিও এবারের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। তাই বাংলাদেশ দলের বিদায়ে আমি মোটেও হতাশ নই। আমাদের ছেলেরা এমনিতেই শারীরিকভাবে দুর্বল, তার ওপর ভিন্ন আবহাওয়া, এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে ওড়াউড়ি।

এ সবকিছুই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বাজে পারফরম্যান্সের জন্য দায়ী। সে তুলনায় আফগান ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট এবং যেকোনো প্রশ্নের উত্তর যথেষ্ট প্রজ্ঞার সঙ্গে দিতে সক্ষম। আমার কাছে মনে হয়েছে, আফগান ক্রিকেটাররা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাই তো অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকেও তাঁরা হারাতে পেরেছেন। শেষ খেলায় সেমিতে আফগানদের সঙ্গে ১২ দশমিক ১ ওভারে জেতাটা বাংলাদেশের জন্য সহজ ছিল না। তবে খেলাটাকে বাংলাদেশ নিজে থেকেই কঠিন করে ফেলেছিল। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়াকে ২৪ রানে হারিয়ে ভারতের সেমিফাইনালে যাওয়াটা ন্যায্যই ছিল বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিতে আসুক, আমিও এমনটাই চেয়েছিলাম। ৫৮ বলে অসাধারণ ১০ উইকেটে জিতে সেমিতে ইংল্যান্ড, আমার খুব ভালো লেগেছে। বাংলাদেশ–ভারতের খেলাটা আমার কাছে খুব সুখকর ছিল না। তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শান্তর খেলা উপভোগ করেছি।

ক্রিকেটের কোনো অবকাঠামোই আফগানিস্তানে নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি পাহাড়ি দেশ। সেই দেশ সেমিফাইনালে গেছে, ভাবা যায়? তার পরও কেন জানি মনের দিক থেকে তাদের মেনে নিতে আমার কষ্ট হয়। কেননা ওদের দেশের মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে না। স্কুল–কলেজে যেতে পারে না। তার পরও আফগানদের বলি, ইটস ওকে, নেক্সট টাইম।

এবার নবাগত যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে দু–একটা কথা বলি। যুক্তরাষ্ট্র মূলত একটি মাল্টিন্যাশনাল কান্ট্রি, হরেক জাতির দেশ। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে আমেরিকান ক্রিকেট দল গঠন করা হয়েছে। শুরুতেই তারা বাংলাদেশকে হারিয়ে খুব চমক দেখিয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরেক ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারিয়ে দিলে তাদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী বলে মনে হয়েছে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে মাত্র ১৮ রানে হেরে দলটি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছে।

এবার বাংলাদেশ দল প্রসঙ্গে আমার নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরব। কিছু খেলোয়াড়কে দেখলে মনে কোনো প্রেম–ভালোবাসার উদয় হয় না। কেন জানি এই ঢঙে তাঁদের ভালো দেখায় না। বাংলাদেশ দলকে আরও পরিশ্রমী হতে হবে, ধৈর্য ও লক্ষ্য স্থির করতে হবে। সব সময় আমাদের টার্গেট যদি নেক্সট ওয়ার্ল্ড কাপ হয়, তাহলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এত এত অর্থ খরচ করে বিদেশে খেলতে আসার কী মানে আছে? বিসিবিরই–বা কাজ কী? একেকজন ১০–১৫ বছর ধরে পদ দখল করে বসে আছেন, কেন? পরিবর্তন হলে যদি দেশের/দলের জন্য ভালো হয়, তাহলে পরিবর্তন নয় কেন?

আমি বুঝতে পারি না, পুরো বিশ্বকাপে একটা উইকেটও পাননি, সেই শেখ মেহেদী সুযোগ পান, অথচ অলরাউন্ডার মেহেদী মিরাজের জায়গা হয় না! ইটস শেইম। বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে বারবিকিউ পার্টি, ফান্ড্রাইজিং, শপিংয়ে ব্যস্ততার কথা গণমাধ্যমে এসেছে। নেপালের সঙ্গে খেলায় নেপাল অধিনায়কের সঙ্গে তানজিম হাসান সাকিবের অসৌজন্যমূলক আচরণ বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে। অবশ্য এমন আচরণের জন্য তাঁকে ১৫ শতাংশ জরিমানাও করা হয়েছে। এটি দেশের জন্য কোনোভাবেই সুনাম বয়ে আনবে না।

যাহোক, আমি চাই দক্ষিণ আফ্রিকা এবার অনন্ত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হোক।