কানাডা লাল পপি ফুল বুকে নিয়ে স্মরণ করছে জাতীয় বীরদের

ছবি: লেখকের পাঠানো

প্রতিবছরের মতো এবারও আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) কানাডাজুড়ে পালিত হচ্ছে রিমেমব্রান্স ডে—একটি দিন যা উৎসর্গ করা হয় দেশের সেই সৈনিক ও শান্তিরক্ষীদের প্রতি, যাঁরা অতীতের যুদ্ধ ও মিশনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাজধানী অটোয়া থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি প্রদেশে আজ সকালে বেজে উঠেছে স্মৃতির ঘণ্টা, আর জাতি নীরবে দাঁড়িয়ে পড়েছে ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধায়।

দিবসটির ইতিহাস

দিবসটির সূচনা হয় ১৯১৯ সালে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক বছর পর। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর বেলা ১১টায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়—যাকে বলা হয় ‘দ্য ইলেভেনথ আওয়ার অব দ্য ইলেভেনথ ডে অব দ্য ইলেভেনথ মান্থ।’ এ সময় থেকেই কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো, বিশেষ করে কানাডা, দিনটিকে পালন করে আসছে বীর শহীদদের স্মরণে। দিনটি কানাডার সরকারি ছুটির দিন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কানাডার প্রায় ৬৬ হাজার সেনা নিহত হন আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ দেন আরও প্রায় ৪৫ হাজার সেনা। আফগানিস্তান, কোরিয়া ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে আরও বহু কানাডীয় সেনা তাঁদের দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যুবরণ করেন।
কানাডার সামরিক ইতিহাসে এক লাখের বেশি বীরযোদ্ধা দেশের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছেন।

দূর পরবাস-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

কেন দিনটি গুরুত্বপূর্ণ

এই দিনে কানাডীয়রা তাঁদের ঘর, স্কুল, অফিস ও জনসমাগমস্থলে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করেন বেলা ১১টায়—যুদ্ধবিরতির প্রতীকী সময়টিতে। অটোয়ার ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে রাজপরিবারের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রী, সামরিক বাহিনীর প্রধান ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন শ্রদ্ধা নিবেদনে।

বিভিন্ন প্রদেশে সরকারি অফিস বন্ধ থাকে এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত হয় স্মৃতি ও শান্তির বার্তা।

ছবি: লেখকের পাঠানো

লাল পপি ফুলের ইতিহাস ও অর্থ

রিমেমব্রান্স ডের সবচেয়ে পরিচিত প্রতীক হলো লাল পপি ফুল। এই ফুলের প্রতীক আসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্ল্যান্ডার্স ফিল্ডসের রক্তে ভেজা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে।

১৯২১ সালে রয়াল কানাডিয়ান লেগিন আনুষ্ঠানিকভাবে লাল পপি ফুলকে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে গ্রহণ করে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত চলে পপি প্রচারণা—যেখানে বিনা মূল্যে পপি ফুল বিতরণ করা হয় এবং মানুষ দান করে যুদ্ধাহত ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের সহায়তায়।

সাধারণত পপি ফুল বুকের বাঁ দিকে, হৃদয়ের কাছাকাছি লাগানো হয়—প্রাণের কাছে শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে।

এখন যেভাবে স্মরণের করা হয়

আজকের কানাডা শুধু অতীতের যুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে না, বরং এই দিনকে ব্যবহার করে শান্তি, মানবতা ও ঐক্যের বার্তা ছড়াতে। স্কুলে শিশুদের শেখানো হয় যুদ্ধের ভয়াবহতা ও শান্তির মূল্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় #LestWeForget হ্যাশট্যাগ দিয়ে মানুষ ভাগাভাগি করে প্রিয়জনদের স্মৃতি ও শ্রদ্ধা।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয়রাও আজকের দিনটিতে নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন—কেউ স্থানীয় স্মরণসভায়, কেউ অনলাইন ইভেন্টে।

এই দিনের প্রতীকী চিহ্ন নিয়ে নানা রূপ দেখা যায়—কেউ লাল পপি, কেউ সাদা পপি (শান্তির প্রতীক), কেউ কালো পপি (আফ্রিকান-ক্যারিবিয়ান সেনাদের স্মরণে) ব্যবহার করেন।

এ দিবস শুধু একটি সরকারি ছুটি নয়—এটি একটি নৈতিক আহ্বান, যাতে কানাডীয়রা মনে করেন, স্বাধীনতা, শান্তি ও মানবতার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের মনে রাখা। ছোট্ট লাল পপি ফুলটি মনে করিয়ে দেয়, শান্তি কখনোই বিনা মূল্যে আসে না।