শুভ বাবা দিবস আর বলা হলো না
আমার দীর্ঘ দুই যুগের প্রবাসজীবনে সবচেয়ে খারাপ খবর পেলাম দেশ থেকে। প্রাণের প্রিয় বাবা হঠাৎই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। পরদিন, ২০২৩ সালের ১৮ জুন ছিল বাবা দিবস। তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ আর পেলাম না।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার বিকেলে আমার অফিস শেষে বাবাকে ফোন দিতাম। বাবাও ওই দিনটাতে মুঠোফোন নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন। এক ঘণ্টারও বেশি কথা হতো; পারিবারিক, রাজনীতি, বিশ্ব পরিস্থিতি—সব বিষয়ে তাঁর যেমন ছিল জ্ঞান, তেমনি ছিল জানার আগ্রহ। দেশে তার মুঠোফোন ঘেঁটে দেখলাম, লাস্ট রিসিভড কলটি ছিল আমারই। সব সময়ই তাঁর কথা মনে হয়। তাঁর শূন্যতা অনুভব করি। প্রতি শুক্রবার তাঁকে খুব বেশি মিস করি। নিজেকে প্রচণ্ড অসহায় মনে হয়। আর তাঁর সঙ্গে কথা বলা হবে না, দেখা হবে না।
আমার বাবা ছিলেন সৎ, ধার্মিক ও মেধাবী একজন মানুষ। ১৯৭০-র দশকে বুয়েটের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট রেজাল্ট করা একজন ইঞ্জিনিয়ার, সেই সময় শুধু সিভি দেখেই বিশ্বখ্যাত সৌদি আরবের আরামকো কোম্পানি তাঁকে চাকরির অফার দিয়েছিল। তিনি ইচ্ছা করলেই সারা জীবন প্রবাসেই কাটাতে পারতেন।
কিন্তু তিনি দেশকে ভালোবাসতেন, পাঁচ বছর আরামকোতে চাকরি করে তাই দেশে ফিরেছিলেন। দেশে ব্যবসা করতেন, কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত এ সমাজে পদে পদে বাধার মুখে পরতেন তাঁর সততার জন্য, কষ্ট পেয়েছেন শেষ পর্যন্ত। হয়তোবা এ কারণেই এইচএসসি পাসের পর যখন বিদেশে যেতে চাইলাম, তিনি না করেননি।
আমার প্রবাসজীবনের বড় কষ্ট হলো, বাবার পাশে থাকতে পারিনি, যখন আমাকে তাঁর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। প্রবাসী ভাইবোনদের প্রতি আমার অনুরোধ, যখনই সুযোগ পাবেন, দেশে মা-বাবাকে দেখতে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে যতটা সম্ভব সময় কাটাবেন। তাঁরা চলে গেলে যে শূন্যতা আসবে, সেটা কোনো দিনই পূরণ হওয়ার নয়।
লেখক: মারুফ দেওয়ান, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এরিকসন, ফিনল্যান্ড