হিরো আলম এবং আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সমাজ

আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম
ছবি: প্রথম আলো

হিরো আলমকে নিয়ে লেখার কারণটা আগেই বলে নেওয়া দরকার। হিরো আলম ও আমি—দুজনই সমাজের একেবারে প্রান্তিক অংশের প্রতিনিধি পাশাপাশি দুজনের বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাও মোটামুটি একই রকম, যদিও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমাদের বড় আব্বার (দাদির বাবা) গায়ের রং এমন কালো ছিল যে সেটা বাদামি টাইপের অন্য একটা বর্ণের মতো হয়ে গিয়েছিল। সে কারণেই হয়তোবা আমার দাদির গায়ের রং-ও ছিল একই রকম কালো। তাঁরই বড় ছেলে আমার আব্বারও গায়ের রং যথারীতি কালো ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আমারও গায়ের রং মাশা আল্লাহ কালোই। তবে হ্যাঁ, আমার নানা-নানি ও আমার মায়ের গায়ের রং ছিল খুবই ফরসা। আমি আমার জীবনে আমার মায়ের মতো গায়ের রঙের কোনো মেয়ে এখনো দেখিনি। কেন যে আমি মায়ের দিকে না গিয়ে বাবার দিকে গেলাম, সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু আমি আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে কখনোই বুঝতে পারিনি, গায়ের রং আবার আলোচনার বা বঞ্চনার একটা বিষয় হতে পারে। কারণ, আমি আমার দাদির বংশের সবচেয়ে বড় নাতি ছিলাম। তাই আদরযত্নের কমতি কখনোই ছিল না। দাদির ছয় চাচার একদঙ্গল ছেলেমেয়ে ও তাঁদের ছেলের বউদের আমি জন্মগতভাবেই দাদা-দাদি হিসেবে পেয়েছিলাম। তাঁরা আমাকে কখনোই কোলছাড়া করতেন না। এটা আমি ছোটবেলায় খুবই উপভোগ করতাম।

এরপর নদীভাঙনে আমাদের ভিটামাটিসহ প্রায় সব সম্পত্তিই কয়েক রাতের ব্যবধানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল। তখন আবার নতুন করে আমাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে হলো। এ সময় আমার দাদি তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুঃসাহসী ও ভালো সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। যেহেতু এভাবে নদীভাঙন লেগেই থাকবে, তাই একটা স্থায়ী বাসস্থান করার জন্য তিনি শহরে একটা জায়গা কেনার কথা চিন্তা করেন। তখন আমাদের জন্য শহরতলিতে একটা জায়গা কেনা হলো, আর আমার আব্বাকে আমাদেরসহ পাঠিয়ে দেওয়া হলো ওই জায়গায় বসবাস করার জন্য। আর অন্য সবাইকেসহ দাদি থেকে গেলেন গ্রামের নতুন বাড়িতে।

শহরতলিতে এসে প্রথমবারের মতো অনুভব করলাম, আমার গায়ের রং অন্যদের থেকে আলাদা, আর সেটা হচ্ছে আমি বেজায় কালো। আমার চেহারা ও গায়ের রং নিয়ে ঠাট্টা করে যে নামগুলো আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তার দু-একটা এমন ‘কালো ভূত’, ‘কালিনী’, ‘কালীর স্বামী’, ‘কালো কুত্তা’ ইত্যাদি। এসব শুনে আমি অনেক মন খারাপ করতাম এবং হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। কারণ, এর আগে আমাকে কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়নি যে আমি অন্যদের তুলনায় গায়ের রঙে নিচু এবং সমাজে আমার অবস্থানও হবে সবার নিচে। আর আমাকে সব সময় সবার খোঁটা সহ্য করেই বেড়ে উঠতে হবে। ব্যাপারটা আমার মাকেও আঘাত করেছিল। কারণ, মা–ও আড়ালে এটা নিয়ে কান্নাকাটি করতেন এবং আমার সামান্য অপরাধের শাস্তি হতো মারাত্মক। কারণ, গায়ের রঙের কারণে আমাকেও অনেক খোঁটা হজম করতে হতো। এ ছাড়া আমার আরও কিছু উপাধি ছিল, যেমন তিন মাথারি (আমার মাথার আকৃতি তিন কোনাকার বলে), শিংওয়ালা (আমার মাথার পেছন দিকে দুটি শিং আছে), বান্টা (দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমি ছিলাম বেশ খর্বকায়)।

এবার আসি আমার পোশাক–পরিচ্ছদের বিষয়ে। আমাদের সময়ে তৃতীয় অথবা চতুর্থ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তক ‘আমার বই’–এ শেখ সাদির একটা গল্প ছিল। গল্পের নামটা এখন আর মনে নেই। তবে গল্পের বিষয়বস্তুটি এখনো খুব পরিষ্কার মনে আছে। শেখ সাদিকে কোনো একটা অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছিল। তিনি খুব সাধারণ পোশাক পরে সেই দাওয়াত খেতে গেলেন। তখন তাঁকে আর দশজন সাধারণ অতিথির মতোই আপ্যায়ন করা হলো। কিছুদিন পর আবার তাঁকে সেই একই অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়। এবার তিনি অনেক সুন্দর পোশাক পরে সেই দাওয়াত খেতে গেলেন। তখন তাঁকে অনেক ভালো ভালো খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো। শেখ সাদি তখন সেই ভালো ভালো খাবার তাঁর পোশাকের মধ্যে ভরতে শুরু করলেন। (আমি তখন কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারিনি, কেন উনি এমন করেছিলেন।) তখন উপস্থিত সবাই এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উনি বললেন, আগের দিন আমি সাধারণ পোশাক পরে এসে এসব খাবার পাইনি। আজ এই সুন্দর পোশাক পরে আসার কারণেই এত ভালো ভালো খাবার পাওয়া যাচ্ছে, তাই এসব খাবার এই পোশাকেরই প্রাপ্য। এই গল্প এবং এর সঙ্গে হাশেম খানের আঁকা একটা ছবিও ছিল। এখনো আমার পরিষ্কার মনে পড়ে সেগুলো।

নিজের গায়ের রং ও চেহারা নিয়ে আমার মনে কখনোই কোনো জটিলতা ছিল না, এখনো নেই। আর পোশাক আমার কাছে সারা জীবনই লজ্জা নিবারণের বস্তু হিসেবেই বিবেচ্য, কিন্তু একটু বড় হয়ে যখন শহুরে ভদ্রসমাজে ঢুকে পড়লাম, মুশকিলটা শুরু হলো তখন থেকে। আমার চেহারা ও পোশাক–পরিচ্ছদ দেখেই সবাই ধরে নেয়, আমি সর্বোচ্চ গরুর রাখাল হতে পারি, এর বেশি কিছু নই। বিশেষ করে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেকবারই এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যেটা নিয়ে পরে অনেকবার হেসেছি। একবার উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ের নামকরা এক শপিং মলের একটা দোকানে গিয়েছি প্যান্ট কিনতে। দোকানি ছেলেটা প্যান্ট দেখানো শুরু করল। আমি ‘একটু ভালো কিছু দেখাও’ বলে অন্য দিকে রাখা প্যান্টগুলোর দিকে ইঙ্গিত করতেই সে উচ্চ স্বরে বলে উঠল, সেগুলোর দাম এত টাকা। মানে ব্যাপারটা হচ্ছে ‘তুমি বাপু রাখাল মানুষ, এই প্যান্ট তুমি কিনতে পারবে না।’ আমি ছেলেটাকে কোনো দোষ দিই না। এটাই আমাদের ভদ্রসমাজের ভদ্রলোক মাপার মাপকাঠি। যার পোশাক যত ভালো, তার স্ট্যাটাস তত উঁচু। আমি যেহেতু কখনোই ভালো কোনো পোশাক পরিনি, তাই আর একজীবনে ভদ্রলোক হতে পারলাম না এখনো। এটা ছিল আমার নিজের জীবনের গল্প।

এবার আসি হিরো আলম প্রসঙ্গে। হিরো আলমের যখন প্রথম ভিডিওটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলো, তখন থেকেই আমি এই মানুষটার সব কর্মকাণ্ড অনুসরণ করতে শুরু করলাম। ফেসবুকে তাঁর পেজ খুঁজে বের করে লাইক দিয়ে রাখলাম, যাতে তাঁর কর্মকাণ্ডের নিয়মিত আপডেট পেতে পারি। শুরুতেই বাংলাদেশের মিডিয়া ও সেলিব্রিটিরা তাঁকে নিয়ে যাচ্ছেতাই ভাষায় তিরস্কার করা শুরু করলেন। কারণ তাঁর প্রথমত চেহারায় তথাকথিত হিরোসুলভ কোনো ব্যাপার নেই। দ্বিতীয়ত, তাঁর পোশাক ও ভাষা আমাদের শহুরে সমাজের ভাষায় প্রচণ্ড ‘ক্ষ্যাত’ বা ‘গাইয়া’। আমি শুধু তাঁর ভিডিওগুলো দেখতাম আর ভাবতাম, একজন মানুষের মনে ঠিক কতখানি শক্তি থাকলে পুরোপুরি স্রোতের প্রতিকূলে চলতে পারেন। আমি আগের অনুচ্ছেদগুলো লিখেছি সে কারণেই। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় শহর ও গ্রামের জীবনযাপন–প্রণালির মধ্যে বিস্তর ফারাক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, শহর ও গ্রামের মধ্যে একটা দেয়াল আছে, যেটা ভেদ করে শহুরে আভিজাত্য যেমন গ্রামে ঢুকতে পারে না, ঠিক তেমনি গ্রামের স্নিগ্ধতা শহরকে স্পর্শ করে না।

শহরের সবকিছুই কেন জানি বড্ড মেকি, বড্ড লোকদেখানো। শহরের কাজকর্মের বেশির ভাগই করা হয় স্ট্যাটাস রক্ষা করতে বা ‘পাছে লোকে কিছু বলবে’র ভয়ে। এ ছাড়া তৈরি হয়েছে একটা মেকি সভ্যতা। শহুরে মানুষদের ধারণা, এ ধরাধামে শুধুই তাদের রাজত্ব আছে, বাকিদের কোনো অস্তিত্বই নেই। শহরের মানুষজন বাজারে গিয়ে বইয়ের পাতার রঙের ফল খোঁজে। তাই আম, লিচু, কলা বিক্রেতারা তাঁদের ফলে কার্বাইড মেশান, যদিও প্রকৃতিগতভাবে তখনো সেই আম বা কলার পাকার বয়স হয়নি। তরমুজ বিক্রেতা সিরিঞ্জের মাধ্যমে লাল রং পুশ করেন যাতে তরমুজ হয় টকটকে লাল আর খুচরা শসা বিক্রেতা শসাটা কেটে সবুজ রঙের মধ্যে চুবিয়ে নেন। এ ছাড়া মাছ বিক্রেতা মাছের কানকো লাল করেন রং দিয়ে আর পশু বিক্রেতা পশু মোটাতাজা করেন ক্ষতিকর ইনজেকশন দিয়ে। এ অভ্যাস এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে এখন আর এর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। এসবের জন্য আবার দোষ দেওয়া হচ্ছে বিক্রেতা বা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষককে। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, একজন কৃষক তাঁর খেতের সবচেয়ে ভালো সবজি বা ফলটাই বাজারে পাঠান বিক্রি করতে, আর খারাপগুলো রেখে দেন নিজের সংসারে খাওয়ার জন্য। যা হোক, এখন মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হচ্ছে, এটাই আশার কথা। এসব কৃত্রিম রং মেশানো জিনিসের বাজার চাহিদা না থাকলে সেগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম। হিরো আলমের সমালোচনা করে যখন তাঁকে আর আটকানো গেল না, তখন তাঁকে পণ্য বানিয়ে ফেলা হলো। কারণ, পুঁজিবাদের অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে নেগেটিভ মার্কেটিং। এতে তাঁকে নিয়ে যাঁরা শুরুতে নাক সিটকাত, সেই সব মানুষই তাঁর পাশে দন্ত বিকশিত করে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে রাতারাতি নিজেকে উদার ও সংস্কৃতিমনা প্রমাণ করতে শুরু করল। তাঁর অনেক সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু হলো। এসব সাক্ষাৎকারে তিনি কোনো প্রকার রাখঢাক না করেই একেবারে বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করলেন এবং নিজের জীবনের সংগ্রামের কথা বলা শুরু করলেন অকপটে। এতে শহুরে শিক্ষিত মানুষেরা আহা–উঁহু করা শুরু করল। ব্যাপারটা এমন, ‘তাই নাকি, গ্রামের জীবনযাপন তো আসলেই অনেক কঠিন।’ অথচ তাদের সবারই শিকড় কিন্তু সেই গ্রামেই গ্রথিত। মাত্র দু–এক প্রজন্ম পেছনে ফিরে গেলেই দেখা যাবে, তাঁদের বাপ–দাদারা কেউ না কেউ কৃষক ছিলেন। এখন পর্যন্ত আমি হিরো আলমের মোটামুটি সব কটি সাক্ষাৎকার দেখেছি। বরাবরই তিনি সৎ ও সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। আর একটা কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি, ‘আমি আপনাদের ভালোবাসায় আজ হিরো আলম।’ সম্প্রতি তিনি ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সেখানেও একটা স্টেজ শোতে একই কথা বলে এসেছেন।

একসময় জানতে পারলাম, হিরো আলম একটা বই লিখেছেন। জেনে খুবই উৎসাহিত বোধ করছিলাম। আর প্রহর গুনছিলাম, কবে তাঁর বইটি হাতে পাব। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বই নিয়ে আসা একই সঙ্গে খুবই ঝক্কির ও খরুচে। বইয়ের যা দাম, তার চেয়ে বহুগুণ খরচ পড়ে ডাকে বই আনতে। তাই আমি যে–ই দেশে যায়, তাকেই হিরো আলমের বইটি আনতে বলতাম। বিপুল দাদা দেশে গিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তাঁর কাছে আবদার করলাম। দাদাও সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন এবং বইটি এনে রেখেছেন তাঁর কাছে। কিন্তু সিডনির যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় আমাদের দুজনের আর দেখা হয়নি এরপর। এ ছাড়া আমি শ্যালক আদনানকে বলে রেখেছিলাম বইটি আনার জন্য। অবশেষে তাঁর কাছ থেকে হাতে পেলাম ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান আমরা সমাজকে বদলে দেব’। এ ছাড়া প্রচ্ছদে আরও একটা লাইন লেখা আছে, ‘বিখ্যাত হতে আসিনি, শুধু দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চেয়েছি’।

হিরো আলমের বইটি পড়ার পর থেকেই ভাবছিলাম, তাঁকে নিয়ে লিখব কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় আর সময় হয়ে উঠছিল না। অবশেষে করোনার এই লকডাউনের সময়ে হাতে অখণ্ড অবসরটা বেছে নিলাম। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর যখন সব বড় বড় নেতা নিজেদের ঘরে বন্দী হয়ে বড় বড় বাণী আওড়ে যাচ্ছেন, সেখানে হিরো আলম তাঁর সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। এমন কাজ তিনি অতীতেও করেছেন। তিনি এই কাজগুলো করেন নির্বাচনের সময় ভোটের হিসাব না করেই। তিনি এই কাজগুলো করেন অন্তরের তাগিদে। তাঁর কথা হচ্ছে, ‘আমি যেভাবে কষ্ট করে বড় হয়েছি, সেই জীবন আমাকে শিক্ষা দিয়েছে অভাবী–দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’ জানি না এতে সেই অভাবী মানুষদের কতটা উপকার হবে, কিন্তু শহুরে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কাছে অপাঙ্‌ক্তেয় একজন মানুষ যিনি নিজেকে ‘হিরো’ বলে দাবি করেন, তথাকথিত হিরোসুলভ চেহারা ও ভাষা না জানা সত্ত্বেও একজন মানুষ নিজে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং পাশাপাশি তাঁর শিকড়কে ভুলে যাচ্ছেন না, এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কারণ, আমরা শিক্ষিত সম্প্রদায় রাতারাতি নিজেদের শহুরে প্রমাণ করতে আদাজল খেয়ে লাগি।
আমি ঠিক জানি না, মানুষটিকে শহুরে শিক্ষিত মানুষেরা পণ্য বানিয়ে ঠিক কত দিন ধরে তাঁর লভ্যাংশ গুনবে, তবে হিরো আলম শিক্ষিত মানুষদের সামনে একটা দরজা খুলে দিয়েছেন। সেই দরজা দিয়ে তারা চাইলেই দেখতে পারেন গ্রামের অশিক্ষিত, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের শরীর ও গায়ের রং দেখতে কেমন হয়। ঠিক কোন ভাষায় আর মূল্যবোধে গ্রামের মানুষ কথা বলেন। এ ছাড়া আমরা মুখে মুখে বাংলাদেশের শিক্ষা ও সমাজমানের যে উন্নয়নের কথা বলি, তাঁর মুখেও ঝামা ঘষে দিয়েছেন। আমার কাছে একটা বিষয় খুবই খারাপ লাগে, সেটা হলো, আমরা এখনো সব মানুষকে সমান চোখে দেখতে পারছি না। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তার চেয়ে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তির পূর্বপুরুষের পরিচয়, তাঁর পরিবেশ, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর ভাষা–পোশাক। আমি আমার পরিচিত মানুষদের কাছে হিরো আলমের কথা বলে ইতিমধ্যেই বিরাগভাজন ও তির্যক দৃষ্টিবাণের স্বীকার হয়েছি এবং আমি নিশ্চিত, এই লেখা ছাপা হওয়ার পর মানুষজন আবারও আমার বংশ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। দেশ–কাল–পাত্রভেদে এটাই বাংলাদেশিদের সমাজব্যবস্থার রূঢ় বাস্তবতা।