হিমালয়ের কোলে সারাঙ্গকোটে সূর্যোদয়

ভিউ পয়েন্ট থেকে অন্নপূর্ণার দৃশ্য রহস্যময়
ছবি: লেখক

ভোর পাঁচটায় নেপালের সারাঙ্গকোটে সূর্যোদয় দেখার কথা।

আমাদের গাড়িচালক অনুজ ঠিক সময়ে আমাদের হোটেল থেকে উঠিয়ে নিতে এল। ভোরের আঁধার তখনো কাটেনি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ, বেশ ঠান্ডা। হালকা গরম জামা গায়ে আমরা বেরিয়ে এলাম।

গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে ছুটে চলে অনুজ। প্রায় এক ঘণ্টার পথ। বড় রাস্তাগুলো ফাঁকা, তবে সারাঙ্গকোটের দিকে বাঁক নিতেই গাড়ি ছুটে চলে বিপদসংকুল পথে। পাহাড়ের মাথায় উঠছে গাড়ি।

চারপাশ অন্ধকার, অন্ধকার ভেদ করছে হেডলাইটের জোরালো আলো। পথ ভালো নয়। পাহাড় ঘুরে ঘুরে গাড়ি ওঠার ফলে মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। মনে হলো, দুর্গম পথ বুঝি শেষ হবে না। হয়তো আমরাই শেষ হয়ে যাব। গাড়ির ভেতরে আমাদের চারজন আতঙ্কে। চারদিকে তাকাতে ভয় হলো। আমাদের উঠতে হবে ১ হাজার ৬০০ মিটার।

রেস্তোরাঁয় কাঠের কুণ্ডলী জ্বালানো আগুনের পাশে বসে হাত গরম
ছবি: সংগৃহীত

পাহাড়ের মাথা কেটে সমতল করা হয়েছে। পাহাড়ের কোলে গাড়ি রাখার জায়গা, কয়েকটি বাড়ি আর দু–চারটি চা ও খাবারের দোকান। আঁধার তখনো কাটেনি। পাহাড়ের মাথায় বেশ ঠান্ডা। আমরা একটি চায়ের দোকানে বসে ঠান্ডা কাটাতে চেষ্টা করলাম। দোকানি চেয়ার এগিয়ে দিয়ে কিছু বিক্রয়ে সচেষ্ট হলেন। চা হলে মন্দ নয়, মাসাল্লা–টি নেপালি ৬০ রুপি। ঠিক হলো সূর্যোদয় দেখার পর চা পানের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু সূর্যোদয় দেখতে হলে ৫২টি সিঁড়ি পেরিয়ে যেতে হবে ভিউপয়েন্টে। পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গেছে সিমেন্ট–বাঁধানো সিঁড়ি। সিঁড়িগুলো চওড়া হলেও রাতের কুয়াশায় ভেজা। সিঁড়ির পাশে স্টিলের রেলিং ঠান্ডায় জমে আছে। গাছের পাতায় শিশির। ওপরে অক্সিজেনের সমস্যা হবে কি না, কে জানে। সে সর্ম্পকে নির্দেশনা নেই। মেয়েরা তরতর করে ওপরে উঠে গেল। পা ফেলে ফেলে আমিও এলাম কিছু পর।

এখান থেকে হিমালয়ের চূড়াগুলোর এক মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। পশ্চিমে ৮ হাজার ১৬৭ মিটার উঁচু মাউন্ট ধৌলগিরি, ৭ হাজার ৯৩৭ মিটার উঁচু মাউন্ট অন্নপূর্ণা, ৬ হাজার ৯৯৭ মিটার উঁচু মাউন্ট মাচাপুচরে এবং পূর্বে ৬ হাজার ৯৪৮ মিটার উঁচু মাউন্ট মানাসলু। পাহাড়ের চূড়ায় আরোহন কঠিন, তবে অপরূপ দৃশ্য ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। পাহাড়ের ওপর শীতল ও বিশুদ্ধ বাতাশ, তবে ফেব্রুয়ারি বলেই বেশ ঠান্ডা।

আমি ও হাবিব এসে দেখি, ওরা একটি রেস্তোরাঁর কাঠের কুণ্ডলী জ্বালানো আগুনের পাশে বসে হাত গরম করে নিচ্ছে, মাশাল্লা-টির অর্ডার হয়ে গেছে, অনুজকে নিয়ে আমরা পাঁচজন। প্রতি কাপ মাসাল্লা-টি ১৪০ নেপালি রুপি অথচ আর ৩–৪ ধাপ নিচের দোকানটিতে ৬০ নেপালি রুপি। মনে হলো, দোকানি পর্যটক ভেবে এক্সপ্লয়েড করছেন।