বিদেশে স্বপ্নের দাম এত বেশি কেন

‘দূর পরবাস’–এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বাংলাদেশের লাখো তরুণ–তরুণীর স্বপ্ন—বিদেশে গিয়ে ভালো আয় করবেন, পরিবারের ভাগ্য বদলাবেন ও দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ছিন্ন করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্নের পেছনে যে ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়, তা অনেক সময় তাঁদের জীবন দিয়েই চোকাতে হয়।

প্রথমত, বিদেশগমনের প্রক্রিয়ার খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেশি। বৈধ ও অবৈধ দালাল চক্রের কারণে একজন শ্রমিককে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে যেতে প্রায়ই কয়েক লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়। এই টাকা জোগাড় করতে তাঁরা জমি বিক্রি করেন, উচ্চ সুদে ঋণ নেন বা সব সঞ্চয় শেষ করে দেন।

দ্বিতীয়ত, বাস্তবতা আর স্বপ্নের ফারাক। দালালেরা বড় অঙ্কের বেতনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে অনেকেই কম মজুরি, অতিরিক্ত পরিশ্রম আর অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। অনেক সময় ঠিকমতো খাবার, থাকার জায়গা বা স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত পান না।

তৃতীয়ত, চরম চাপ ও হতাশা। ঋণের টাকা শোধ না করতে পারার আতঙ্ক, বিদেশে অপমান–অবহেলার শিকার হওয়া, শারীরিক পরিশ্রম আর মানসিক যন্ত্রণা—সব মিলিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ কাজের জায়গায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান, আবার চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে মৃত্যুর পথ বেছে নেন।

ফলাফল হিসেবে পরিবার তখন শুধু স্বপ্নভঙ্গের শোকেই ডুবে না, ঋণের বোঝাও বইতে থাকে আরও অনেক বছর।

বিদেশগামী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, স্বচ্ছ রিক্রুটমেন্টের প্রক্রিয়া ও ঋণমুক্ত প্রবাস–যাত্রা নিশ্চিত না হলে এই দুঃখজনক পরিস্থিতি থামবে না। বিদেশে স্বপ্ন দেখার অধিকার সবার আছে, কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন মৃত্যুর কারণ না হয়, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।