আমার ভ্যালেন্টাইন: ৩য় পর্ব

অলংকরণ: আরাফাত করিম

দীপান্বিতার ফোন নম্বরসহ বইটি হারিয়ে ফেলেছি শোনামাত্রই মায়ের চেহারায় একটা কষ্টের ছাপ ফুটে উঠল। এ মুহূর্তে যে কেউ মায়ের চেহারা দেখলে ভাববে, তিনি এইমাত্র তার কোনো আপনজনের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। আমি মায়ের কান্না কান্না ভাব দেখে বললাম,
মা প্লিজ, আর যা–ই করো সিরিয়ালের মায়েদের মতো কান্না শুরু করো না।
আমার কথা শেষ না হতেই মায়ের চেহারাতে রাগের আভাস ফুটে উঠল। মা কখনো আমাকে ধমক দিয়েছেন, এমন স্মৃতি আমার মনে নেই। মা চিৎকার দিয়ে বললেন,
বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? দৌড় দে। দেখ রিকশাটা খুঁজে পাস কি না।
আমি দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।
রাস্তায় বের হয়ে আশপাশের কয়েকটি রিকশাওয়ালাকে প্রশ্ন করলাম, ভাই আমি কি একটু আগে আপনার রিকশায় এসেছিলাম?
সবাই না–সূচক উত্তর দিল। আসলে মনের আনন্দে এতটাই বিহ্বল ছিলাম যে রিকশাওয়ালার চেহারাও ঠিকমতো তখন দেখিনি। রিকশাটা দেখতে কেমন, তা–ও খেয়াল করিনি।
অন্য একটি রিকশা নিয়ে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনের ওখানে গেলাম। আশপাশের সব কটি রিকশাকেই জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারল না। মনে হলো যাকে সারা জীবন খুঁজেছি, তাকে পেতে পেতেও হারিয়ে ফেললাম। খেয়াল করলাম আমার চোখ দুটি ভিজে যাচ্ছে।
বাবা-মা ফোন দিচ্ছেন। কিন্তু ধরতে ইচ্ছে করছে না। কেন জানি কারও সঙ্গেই এখন কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। শুধু বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছে, দীপান্বিতা মেয়েটি হয়তোবা আমার ফোনের অপেক্ষায় ফোন হাতে বসে আছে।
ঘণ্টাখানেক পর বাসায় ফিরলাম। ঘরে ঢুকতেই মা বললেন,
কিরে বইটা পেলি?
না।
বই হারানোর কথা শুনে তোর বাবা রেগে আগুন হয়ে আছে।
মা এখন বাবার কথা শুনতে ভালো লাগছে না। তুমি দরজা থেকে সরো আমাকে ঘরে ঢুকতে দাও।
না। তুই ঘরে ঢুকতে পারবি না। তোর বাবা বলেছে, তোকে বই ছাড়া ঘরে ঢুকতে না দিতে।
মা, আমি এমনিতেই মানসিক কষ্টে আছি। প্লিজ এ সময় মজা কইরো না।
আমি মোটেও মজা করছি না। আমি আমার স্বামীর দেওয়া আদেশ পালন করছি।
মা, আমি তোমার সন্তান!
তো? সেই জন্য কি আমি তোর বাবার কথা অমান্য করব?
আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। স্বামী–অন্তঃপ্রাণ এই ভদ্রমহিলাকে কী বলব, বুঝতে পারলাম না। এ সময় মা ফিসফিস করে বললেন,
বেশি কথা বলিস না। কোনো শব্দ না করে চুপচাপ তোর রুমে চলে যা। তোর বাবা যেন টের না পায়।
এরপর মা চিৎকার করে বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,
এই বাসায় তোর কোনো জায়গা নেই। তুই বের হয়ে যা বাসা থেকে।
আমি মাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতে যাব, এ সময় বেডরুম থেকে বাবা চিৎকার করে বললেন,
বলদটাকে আমার সামনে নিয়ে আসো।

এই যেমন তুই ক্লাস এইট পর্যন্ত প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় পেশাব করতি সেটা বলেছি।
খেয়াল করলাম মা মুখ চেপে হাসছেন। আমি অবাক ও হতভম্ব হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আমি আর মা দুজনে মা–বাবার বেডরুমে ঢুকলাম। বাবা বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছেন। মা গিয়ে বাবার পাশে বসলেন। আমি বিছানার একধারে বসতে গেলাম। বাবা ধমক দিয়ে বললেন,
খবরদার আমাদের বিছানায় তুমি বসবে না। এটা মানুষের বিছানা। বলদের না।
আমি না বসে দাঁড়িয়ে রইলাম। বাবা সাধারণত আমাকে তুই করেই বলেন। তবে যখন আমার ওপর রেগে যান, তখন তুই তুমি দুটিই চলে।
তোমার মায়ের কাছে বই হারানোর কাহিনি শুনলাম। তা বই কী খুঁজে পেয়েছ?
না।
তুমি কি বই খুলে ফোন নম্বরটা দেখেছিলে? সেই নম্বরের দু–একটা ডিজিটও কি তোমার মনে আছে?
না, বই খুলে দেখিনি।
একটা মেয়ে তোমাকে বইয়ের পাতায় কিছু লিখেছে, সেটা তোমার সঙ্গে সঙ্গে দেখার আগ্রহ হলো না?
ভেবেছিলাম বই তো আর চলে যাচ্ছে না। বাসায় গিয়ে গোসল করে, খাওয়াদাওয়া করে তারপর দেখি।
অপদার্থ, অপদার্থ এবং অপদার্থ।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বাবা একজন মানুষকে একই গালি তিনবার দেওয়ার কোনো মানে নেই। তার চেয়ে বরং তিনটি ভিন্ন ভিন্ন গালি দাও। এতে তোমার ক্রোধ কমবে।
আমি তিনটি গালি একজনকে না, তিনজনকে দিয়েছি। প্রথমবার অপদার্থ বলেছি নিজেকে। কারণ, আমি তোমার মতো একজন অপদার্থ সন্তানের বাবা। দ্বিতীয় অপদার্থ বলেছি তোমার মাকে। কারণ, সে তোমার মতো একজন অপদার্থের মা।
আর তৃতীয় অপদার্থ কাকে বলেছ? আমাকে?
না। সেটা একসঙ্গে তোমার মা এবং আমাকে বলেছি। কারণ, আমি কষ্ট করে তোমার জন্য বাজার করে আনি। আর তোমার মা সেটা রান্না করে তোমাকে খাওয়ায়।
বাবা, তুমি তো কৌশলে তিনবারই আমাকেই গালি দিলে।
তুমি সেটা বুঝতে পেরেছ? বাব্বা তুমি তো দেখি অনেক মেধাবী।
বাবা, আমি কি এখন আমার রুমে যেতে পারি? এ মুহূর্তে তোমার পচা পচা গালি শুনতে ইচ্ছে করছে না।
এ বাসায় তোমার রুম বলে কিছু নেই। এটি আমার আর তোমার মায়ের বাসা। তোমাকে একটা কথা বলি। তুমি যে করেই হোক দীপান্বিতাকে খুঁজে বের করবে। তোমাকে আমি এক মাস সময় দিলাম। এক মাসের মধ্যে খুঁজে না পেলে, তুমি এই বাসা থেকে অপসারিত হবে।
বাবার কথা শুনে মনে হলো না তিনি ফান করছেন। তিনি আসলেই সিরিয়াস। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন,
এখন রুমে গিয়ে সারা রাত চিন্তা করে একটা প্ল্যান করো কীভাবে ওকে খুঁজে বের করবে। কাল সকালে আমি তোমার কাছে প্ল্যান শুনতে চাইব।
আমি আর কিছু না বলে আমার রুমে চলে গেলাম। সারা রাত দীপান্বিতাকে খুঁজে পাওয়ার কৌশল নিয়ে ভাবলাম।
সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নাশতার টেবিলে গেলাম। সেখানে বাবা-মা আগেই বসা ছিলেন। আমি বসতেই বাবা বললেন,
কোথায় যাচ্ছ?
কেন অফিসে?
আগামী এক মাস তোমাকে আমি অফিস থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম। এই এক মাস তোমার একটাই কাজ, আমার মেয়েকে খুঁজে বের করা।
অফিসে কত কাজ। না গেলে কেমনে হবে?
তোমার অফিসে যাওয়া আর না যাওয়ার কারণে অফিসের কিছুই হবে না। কারণ, তুমি যে অফিসে গিয়ে কাজ না করে শুধু ঘুমাও, সেটা আমি জানি। এখন বলো দীপান্বিতাকে খোঁজার জন্য কি কৌশল ঠিক করলে?

ভাবছি একজন পথশিল্পীকে মাইকসহ রিকশায় তুলে দেব। সে রিকশায় করে পুরো ঢাকা শহরে ঘুরবে আর গান গাইবে। গান গেয়ে গেয়ে সে দীপান্বিতাকে খুঁজবে। গানও ঠিক করে ফেলেছি। কলকাতার বাংলা সিনেমার একটা গান, ‘ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও, এ গান আমার, এই গান আমার’
তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি করতেছ?

জি বাবা। আসলে কীভাবে কী করব, বুঝতে পারছি না। আমি তো ওর নাম ছাড়া আর কোনো তথ্যই জানি না। কোথায় পড়াশোনা করে বা বাসা কোথায় কিছুই জানি না।
এটা কী বললা? তুমি একটা মেয়ের সঙ্গে এতক্ষণ গল্প করলা তার নাম ছাড়া কিছুই জানলা না। তোমাকে আমি বলদ কেন বলি, সেটা কি বুঝতে পারছ?
বাবা আমি তো বলদ। কিন্তু তুমি তো বুদ্ধিমান। তুমি তো ঘণ্টাখানেক ওর সঙ্গে কথা বলেছ। তা তুমি কি ওর কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছ?
আরে আমি তথ্য সংগ্রহ করব কী? ও যাতে তোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়, সে জন্য তোমার গুণগান করতে করতেই তো সময় শেষ করলাম।
তুমি! তুমি আমার সম্পর্কে গুণগান করেছ? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলো? আচ্ছা কী কী গুণগান করেছ একটু বলো তো শুনি।
এই যেমন তুই ক্লাস এইট পর্যন্ত প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় পেশাব করতি সেটা বলেছি।
খেয়াল করলাম মা মুখ চেপে হাসছেন। আমি অবাক ও হতভম্ব হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
বাবা একটা ভদ্রমহিলার সামনে এমন বিষয়ে কথা বলতে তোমার লজ্জা করল না?
ওই তুই দীপান্বিতাকে মহিলা বলছিস কেন? ও মহিলা না, তরুণী।
ঠিক আছে, মহিলা না তরুণী। তা একজন ভদ্র তরুণীর সামনে বিছানায় পেশাব করা নিয়ে কথা বলতে তোমার লজ্জা করল না?
আমার লজ্জা করবে কেন? বিছানায় তো আর আমি পেশাব করতাম না। তুই করতি।
তারপর আর কী বলেছ?
একবার রোলার কোস্টারে উঠে ভয়ে যে প্যান্ট নষ্ট করে ফেললি, সেটাও বলেছি।
দুনিয়ার সব বাবা ছেলের হবু বউয়ের কাছে ছেলের লেখাপড়া, খেলাধুলা বা এক্সট্রা কারিকুলাম সম্পর্কে বলে। আর তুমি কী বললা?
আমিও তোর লেখাপড়া নিয়ে কথা বলেছি। বলেছি, তুই দুবারে এসএসসি পাস করেছিস।
এটাও কি বলার দরকার ছিল?
মিথ্যা তো কিছু বলিনি। আমি ভাবলাম তোর নেগেটিভ দিকগুলো বলি। এরপরও যদি তোকে পছন্দ করে তবে বুঝতে হবে মেয়েটি তোকে মন থেকে পছন্দ করেছে।
আচ্ছা বুঝলাম, তুমি আমার অনেক গুণগান করেছ। এখন দীপান্বিতা সম্পর্কে কী জেনেছ, সেটা বলো।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

কথা বলে বুঝেছি মেয়েটির টাকাপয়সা, ধনসম্পদের প্রতি কোনো লোভ নেই। আমি যে শিল্পপতি, তা বলিনি। বলেছি আমি একটি অফিসে অল্প বেতনে চাকরি করি। তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাই। আর আমার গুণধর ছেলে সারা দিন ঘুমায়।

তুমি যে আমার বিষয়ে ভালো কিছু বলবে না, সেটা আমি জানি। আমার কথা থাক। তুমি দীপান্বিতার কাহিনি বলো। বলা যায় না ওর কাহিনির মধ্যে হয়তো ওকে খুঁজে পাওয়ার কোনো রাস্তা বের হয়ে আসতে পারে।

ও একটা সংগ্রামী মেয়ে। বাবা নেই। নানার ভবনে ওর মা একটা ছোট ফ্ল্যাট পেয়েছে। ওখানে মাকে আর ছোট ভাইকে নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পড়ছে, তবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটা জিজ্ঞেস করিনি। সারা দিন রাত টিউশনি করে কোনোরকমে সংসার চালায়। সামনে বিসিএস দেবে। চাকরি পেয়ে মা ভাইকে সচ্ছল জীবন উপহার দেবে। এটা তার একমাত্র লক্ষ্য।

তুমি এত কথা বললা তা–ও বাসার ঠিকানা বা ফোন নম্বর নিলা না? আমি তো তোমার ঘটনা বুঝলাম না।

নিজের দোষ অন্যের কাঁধে দিচ্ছিস কেন? আমি তো ভেবেছি কিছু কাজ তুই সেরে ফেলবি। ফোন নম্বর চাওয়া, ঠিকানা জানা, প্রোপজ করা—এসব তো পাত্র হিসেবে তোর দায়িত্ব। আমি বাবা হিসেবে যা করার তা করেছি।
বাবা সত্যি কি তোমার কাছে ওর ফোন নম্বরটা নাই?
যদি থাকত, তাহলে কি তোকে দিতাম না? শোন এখন একে অপরকে দোষ না দিয়ে বল কীভাবে মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যায়। ওকে আমার দরকার। তুই ওকে বিয়ে করবি কি করবি না, সেটা তোর ব্যাপার। তবে আমি ঠিক করেছি ওকে আমার কোম্পানিতে অনেক বড় পোস্টে নিয়োগ করব।
বাবা একটা পথ আছে। ওর বাসা তো উত্তরা। আমি বরং কয়েক দিন উত্তরা মেট্রোরেল স্টেশন গিয়ে অপেক্ষা করি। একদিন না একদিন তো আবার মেট্রোরেলে উঠবে। তুমি কি বলো?
আইডিয়া খারাপ না। কিন্তু তুই কি জানিস উত্তরাতে তিনটি স্টেশন আছে? তুই কোনটায় খুঁজবি?
এক কাজ করি প্রত্যেক স্টেশনে সাত দিন করে দাঁড়িয়ে থাকি। একটা না একটায় তো পাবই।
গুড। এটা করতে পারিস। তবে যা করবি, এই এক মাসের মধ্যেই করবি। এক মাসের মধ্যে না পেলে আমার ঘর থেকে তুই বহিষ্কার। এটা ফান করে বলছি না। আমি সিরিয়াস।
আমি উত্তরার তিনটি স্টেশনেই সারা দিন ধরে সাত দিন দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিন্তু দীপান্বিতার দেখা আর পেলাম না।

ঢাকা মেগা সিটি। এত বড় শহরে ঠিকানা ছাড়া একজন মানুষকে খুঁজে পাওয়া আসলেই অসম্ভব। জীবন তো আর নাটক বা সিনেমা নয়।

শুধু দীপান্বিতাকে না, এই এক মাস আমি ঢাকা শহরের নতুন-পুরোনো সব বইয়ের দোকানে গিয়ে দীপান্বিতার দেওয়া বইটিও খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি।

এক মাস পার হয়ে গেলেও যখন দীপান্বিতাকে পেলাম না। তখন একদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাবাকে আমার রুমে নিয়ে এলাম। দরজা বন্ধ করলাম। বাবাকে আমার বিছানায় বসালাম। তারপর বাবার পায়ের কাছে বসে বললাম,
বাবা শোনো, প্রতিটি মানুষই তার জীবনের কোনো না কোনো সময়ে বিশেষ করে তরুণ বয়সে, কল্পনায় তার জীবনসঙ্গীর একটা ছবি মনে মনে আঁকে। আমিও সবার মতো তেমনি ছবি এঁকেছি। সেই মনে আঁকা মানুষটিকে যখন সামনে পেলাম। তখন আনন্দে আত্মহারা হলাম। আবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজের ভুলে সেই মানুষটাকে হারিয়েও ফেললাম। এটা যে কত কষ্টের সেটা তুমি বুঝবে না। আমি জানি তুমি দীপান্বিতাকে অনেক পছন্দ করেছ। সে জন্য ওর জন্য তোমার কষ্টও লাগছে। তবে আমার কষ্টটা তোমার থেকে আমার অনেক অনেক বেশি সেটা কি বোঝো? এরপরও যদি তোমার মনে হয় আমাকে এ বাসা থেকে চলে যেতে হবে। তাহলে আমি কাল সকালে চলে যাব।
বাবা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন,
হতাশ হোস না। সৃষ্টিকর্তা যদি ওকে তোর জোড়া করে থাকে, তবে অবশ্যই তোর জীবনে ও আসবে। কখন আসবে কীভাবে আসবে, সেটা আমি জানি না। তবে আসবে। সবকিছু ঝেড়ে ফেলে কাল থেকে অফিস যাওয়া শুরু করো।

না আমি অফিসে যাওয়া শুরু করিনি। আমি এখনো এক এক দিন উত্তরার এক একটি স্টেশনের বাইরে দীপান্বিতার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। মাঝে মাঝেই বিনা কারণে দীপান্বিতার খোঁজে মেট্রোরেলে ঘুরি। উত্তরা থেকে মতিঝিল আর মতিঝিল থেকে উত্তরা। বাবা এখনো দীপান্বিতার জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তবে এখন আর সে কারণে আমাকে বকেন না। কারণ, তিনি জানেন তাঁর ছেলে দীপান্বিতাকে হারিয়ে ভালো নেই।

যদি কখনো দীপান্বিতার সঙ্গে আপনাদের কারও দেখা হয় যায়। ওকে বলবেন, আমি উত্তরার মেট্রো স্টেশনগুলোয় ওর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। চলবে...

*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]

*আগামীকাল পড়ুন: আমার ভ্যালেন্টাইন: ৩য় পর্ব

**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]