কথার আঘাত
ধরে নিন, আপনার প্রতিবেশী সদ্য বিধবা এবং তাঁর বয়সও বেশ কম। তাঁর ঘরে সদ্য কিশোরী একটি মেয়েও আছে। দুম করে আপনি ভদ্রলোক ওই মেয়েকে প্রশ্ন করে বসলেন, ‘আচ্ছা, তোমার তো বাবা নেই, সংসার চলে কী করে? আর তোমার মা-ও তো কিছু করেন না!’ যে ছোট্ট মেয়েটি মাত্রই বাবা হারাল, যে গৃহবধূ এখনো বৈধব্য কী তা-ও জানেন না, তাঁদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় আঘাত লাগল ওই এক প্রশ্নে। তার চেয়ে ওই নারীকে কোনো উদ্যোগ এর রাস্তা দেখান, মেয়েটির জন্য টিউশনি খুঁজে দিন। মা-মেয়ে কেউ কখনো ভুলবে না আপনাকে।
বিধবা কোনো নারীর কাছে গিয়ে বলা শুরু করলেন, ‘দেখ রে বোন, তোর নিজের দোষেই তোর কপাল পুড়ল।’ আচ্ছা রে ভাইজান/ আফা, ওই নারীর স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত কি না, জানেন আপনি? তার চেয়ে ওই নারীকে নতুন করে বাঁচার পথ দেখান, মেয়েটির দোয়ায় সব সময় থাকবেন। আপনার বান্ধবী অসুস্থ কিছুদিন ধরে। সে খুঁজে বেড়াচ্ছে আপনাকে, সময় খুঁজে ফিরছে আপনার কাছে। আপনি ফোঁস করে উঠলেন, ‘ওই, জানিস না আমি ব্যস্ত? আমার কাছে কী? দুই মিনিটও দিতে পারব না তোরে!’ বা দুই সেকেন্ড সময় দিয়ে বললেন, ‘ওই তোরে না টাইম দিলাম? ওই টুকুতেই শোকর কর!’ প্রত্যুত্তরে সে হয়তো বলল যে ‘মাত্র পেলাম আর কতক্ষণ থাক না!’ অমনি আপনি গেলেন খেপে, ‘ওই তোরে তো কত সময় দিই, শোকর নাই তোর? তুই আমার প্রতি কৃতজ্ঞ না!’ শোনেন ভাইজান, আপনার ওই দুই সেকেন্ডে এই মেয়ে খুশি, সেটা সত্যি, এবং সে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞও বটে, কিন্তু সে আপনাকে তার কাছের মানুষভাবে বলেই একটু অভিমানে আরও কতক্ষণ থাকতে বলে। আপনি ও রকম হুট করে ব্যস্ততা না দেখিয়ে বলতে পারেন যে ‘না দোস্ত, এখন তো কাজ আছে, আচ্ছা ফ্রি হয়ে তোরে কল দিচ্ছি।’ ওই অভিমানের মুখে এক মুহূর্তে হাসি ফুটবে।
ছয় মাসের তিড়িংবিড়িং সন্তান নিয়ে নাকানিচুবানি খাচ্ছেন এমন, যে সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই অফিস করতে হচ্ছে। পাশেই হয়তো কোনো এক সহকর্মী আছেন, যিনি সাত বছরেও সন্তানের মুখ দেখেননি। আপনি বলে বসলেন, ‘ধুর ওনার এত বছরেও সন্তান হয় না, মর্ম বুঝবে কী?’ আন্দাজ আছে আপনার? কী বলেছেন? তার চেয়ে বরং নিজের সন্তানকে পাশের জনের কোলে দিন দুটি ঘণ্টা, তার খুশি দেখে নিজেও খুশি হবেন। এ রকম অসংখ্য কথার আঘাত আমরা প্রায় করে থাকি। আঘাত না করে হয়তো সমমর্মিতাচর্চাই শ্রেয়। তা-ই নয় কি?