হ্যারি হুডিনির কান্না ও বাংলাদেশের জনগণ
যাঁরা জাদু কিংবা ম্যাজিকজগতের খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন, হ্যারি হুডিনি ছিলেন এই নেশায় ও পেশায় একজন অতি সফল ও সার্থক ব্যক্তিত্ব। তাঁর কর্মক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী তিনি আজও অনতিক্রম্য। গেল শতকের একেবারে গোড়ার দিকে হুডিনি যখন আপন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন লন্ডনের এক ম্যাজিক শোতে তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে জটিল ও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত হুডিনি যখন ‘গোস্ট হাউস’ (স্টেজের ওপরে ঘন কালো পর্দা নিয়ে ঘেরা ছোট্ট বুথ) থেকে মঞ্চে বেরিয়ে আসেন, তখন হাজারো ভক্ত-দর্শক-শ্রোতার সামনে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। হুডিনি ম্যাজিক-কৌশলের সফলতায় খুশিতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন। আর বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ জাতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে দেশের বড় বড় নেতা-নেত্রী ও প্রশাসকদের ম্যাজিক দেখে দর্শক গ্যালারিতে বসে হরহামেশাই কাঁদেন ।
এই দুই কান্নার দুই সুর। একটি আনন্দের। আরেকটি বেদনার। কান্নার করুণ সুরের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবেই পরিচিত। তাঁরা দারিদ্রের কষাঘাতে কাঁদেন। চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজদের উৎপাতে কাঁদেন। র্যাব-পুলিশের অত্যাচারে কাঁদেন। রাজনৈতিক হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে কাঁদেন। বাম্পার ফলনে বাজারে আলু-মুলার দাম পড়ে গেলেও কাঁদেন। আর প্রকৃতি বিগড়ে গেলে তো কাঁদেনই। আজ এসব কান্না নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে আপনাদের মন খারাপ করতে চাই না, তবে সব শেষে আলতোভাবে বিষয়টি আরেকবার ছুঁয়ে যাব। আপাতত আনন্দের কান্না, অর্থাৎ হ্যারি হুডিনির কান্নার সুরের ঝঙ্কারে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আপনাদের হৃদয়-মন রাঙিয়ে দিতে চাই। জানি না, এ কঠিন কাজে কতটা সফল হব।
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে এক ইহুদি পরিবারে ১৮৭৪ সালের ২৪ মার্চ হ্যারি হুডিনির জন্ম। জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল এরিক ওয়াইজ। হুডিনি গবেষক জন কক্সের মতে পরে ১৮৯১ সালে তিনি ফরাসি ম্যাজিশিয়ান Jean-Eugene Robert-Houdin-র নামে নিজের নাম রাখেন- হ্যারি হুডিনি। Robert Houdin-কে আধুনিক জাদুশিল্পের জনক বলা হয়ে থাকে। হুডিনির বাবা ম্যায়ের স্যামুয়েল ওয়াইজ একজন ইহুদি ধর্মযাজক ছিলেন। মাত্র চার বছর বয়সে হুডিনি মা–বাবার সঙ্গে দেশ ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। এখানে তাঁরা প্রথমে বসতি শুরু করেন উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের অ্যাপলটন শহরে। পরে ১৮৮৭ সালে হুডিনি পরিবার চলে যান উত্তর-পূর্ব আমেরিকার নগরী নিউইয়র্কে। এরও ৪ বছর পর ১৮৯১ সাল থেকে মাত্র ১৭ বছর বয়সে হুডিনির ম্যাজিক জীবনের সূচনা। প্রথম দিকে তিনি খেলার তাস দিয়ে প্রথাগত ম্যাজিকের চর্চা করতেন। কিন্তু এতে তাঁর ক্যারিয়ারে তেমন কোনো সাফল্য আসেনি। অতঃপর তাসের খেলা বাদ দিয়ে হুডিনি ‘এক্ষেপ ট্রিকের’ ওপর মনোনিবেশ করেন। ১৮৯৩ সালে নিউইয়র্কে এ রকমই একটি শো’তে উইলহেলমিনা বিয়েট্রিস–এর (সংক্ষেপে বেস) সঙ্গে হুডিনির প্রথম পরিচয় হয়। পরে তিনি বেকে বিয়ে করেন। হুডিনি যতদিন বেঁচেছিলেন—বেস তত দিনই কেবল হুডিনির জীবনসঙ্গিনীই ছিলেন না, বরং ম্যাজিকের মঞ্চে স্বামীর সক্রিয় সহকারী এবং সহযোগীও ছিলেন।
এই জাদুবিশারদের প্রদর্শনীর মূল বিষয় ছিল তাঁর কঠিন কঠিন ‘এস্কেপ ট্রিক্স’। তাঁকে হাতে-পায়ে দড়ি, লোহার শিকল, ডান্ডাবেড়ি, চেইন, ইত্যাদি দিয়ে বেঁধে রাখা যেত না। তিনি নানা জাতের কসরত ও কৌশলের মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে সহজেই মুক্ত হয়ে হাসি মুখে বেরিয়ে আসতেন। হাতে-পায়ে বেঁধে বাক্সের ভেতর পুরে আলোবন্দী করে পানিতে ফেলেও হুডিনিকে কাবু করা যায়নি। সত্যি সত্যি এভাবে একবার হুডিনিকে ‘স্যানফ্রানসিস্কো বে’-তে ফেলা দেওয়া হয়েছিল। যথাসময়ে তিনি ঠিকই নিজেকে মুক্ত করে সাঁতরে তীরে উঠে আসেন। এক্ষেপ ট্রিক-এর চমকপ্রদ ম্যাজিক দেখিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই হুডিনি ইউরোপ-আমেরিকার ‘ম্যাজিক সম্রাট’-এ পরিণত হন। আর আজকের দুনিয়ায়ও তো তিনি ‘হ্যান্ডকাফ কিং’ হিসেবে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন।
১৯০৪ সালে লন্ডনের এক ম্যাজিক শো’তে হুডিনির নিয়তি তাঁকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সামনে ঠেলে দিয়েছিল। ওই বছর সে দেশের বার্মিংহাম শহরের এক তালাবিশারদ দীর্ঘ ৭ বছর পরিশ্রমের পর ভালাসহ একটি কঠিন লোহার
‘হ্যান্ডকাফ’ আবিষ্কার করেন। লন্ডনের বিখ্যাত কাগজ ‘দ্য ডেইলি মিরার’ হুডিনিকে ওই ‘হ্যান্ডকাফ’ থেকে মুক্ত হয়ে আসার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। পশ্চিমা দুনিয়ার ম্যাজিক-সম্রাট যথারীতি চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেন। চুক্তি অনুযায়ী একই বছর মার্চের ১৭ তারিখ লন্ডনের ‘হিপোড্রোম থিয়েটার হলে নতুন আবিষ্কৃত ভালাসহ শিকলটি হুডিনির দুই হাতে পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় সরেজমিন উপস্থিত ছিলেন ৪ হাজার দর্শক-শ্রোতা এবং ১০০ সাংবাদিক। শিকল পরে হুডিনি তাঁর ‘গোস্ট হাউসে’ গিয়ে ঢুকেন। এক ঘণ্টা পর ক্লান্ত হুডিনি হতাশ হয়ে মঞ্চে বেরিয়ে আসেন এবং কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আবদার করেন, তিনি তাঁর পায়ের জ্যাকেটটি খুলতে চান। তালাটা আলগা করে দিলে তিনি জ্যাকেট খুলবেন, তারপর আবার তালাসহ হাতের শিকল হাতেই পরে নেবেন। প্রথম দফা বিফল হলেও, হুডিনি সহজে হার মানার পাত্র নন। আর ম্যাজিকে চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করা তো তাঁর পক্ষে কল্পনারও বাইরে।
খেলার মাঝখানে নিয়ম বদলে দিলে হুডিনি অযাচিত সুবিধা পেয়ে যেতে পারেন, এ আশঙ্কায় ম্যাজিক কর্তৃপক্ষ তালা খুলতে রাজি হয়নি। এমন সময় অসহায় হুডিনি ক্ষুধার্ত বাঘের মতো রাগে, দুঃখে এবং ক্ষিপ্রতায় একটি ছোট্ট ছুরি দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে গায়ের জ্যাকেট কেটে ছিড়ে টুকরা টুকরা করে মঞ্চে ছুঁড়ে মারেন। এর ঠিক ৫৬ মিনিট পর হুডিনির স্ত্রী বেস নাটকীয়ভাবে মঞ্চে আবির্ভূত হন এবং তাঁর অন্তরের আদর ও ভালোবাসার সবটুকু নির্যাস ঢেলে দিয়ে প্রিয়তম স্বামীর ঠোঁট দুটো সিক্ত করে দেন। স্ত্রীর মধুময় স্পর্শ ও আশীর্বাদ নিয়ে নতুন উদ্যমে হুডিনি আবার ‘গোস্টহাউস’-এর ভেতরে ঢুকেন এবং দীর্ঘ ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট কসরতের পর মুক্ত হুডিনি বীরবেশে স্টেজে বেরিয়ে আসেন। দর্শক-শ্রোতাদের উচ্ছ্বাস, উল্লাস, আনন্দ আর করতালির মাঝে হুডিনি বাঁধ-ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সে কান্না–বেদনার নয়, ব্যর্থতারও নয়, সে কান্না ছিল সফলতার বিজয়মাখা আনন্দের অশ্রুঝরা কান্না। এতদসত্ত্বেও ওই দিন হুডিনি তাঁর দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন, এটা ছিল তাঁর ম্যাজিকজীবনের সবচাইতে সংকটময় ও কঠিন এক অগ্নিপরীক্ষা। সবচাইতে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাও বটে। কারণ মাত্র কিছুক্ষণ আগেও তিনি জানতেন না তাঁর জন্য চরম পরাজয়ের গ্লানি, নাকি মহাবিজয়ের মহা-মাহেন্দ্রক্ষণ অপেক্ষা করছে! এমনি বর্ণিল, বিচিত্র এবং বৈচিত্র্যময় ছিল হ্যারি হুডিনির গোটা ম্যাজিকজীবন!
তবে জীবন ঝুঁকির দিক থেকে এর চেয়ে মারাত্মক একটি কাজ তিনি করেছিলেন। বলতে গেলে বোকার মতো। ম্যাজিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে হুডিনি একবার মরতে মরতে বেঁচে উঠেন। ঘটনাটি ঘটেছিল ক্যালিফোর্নিয়ার লসএঞ্জেলেস অঞ্চলে। ১৯১৯ সালে। ওই পরীক্ষার অংশ হিসেবে হুডিনি স্বেচ্ছায় দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পরে ছয় ফুট মাটির নিচে কবরস্থ হন। দেহের ওপর মাটির ওজন হুডিনির হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় শুরুতেই তিনি চিৎকার করতে শুরু করেন। কিন্তু কার চিত্কার কে শোনে। এই অবস্থায় নির্ঘাত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও আশ্চর্যজনকভাবে হুডিনি মাটি ঠেলে প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। কী সাহস! কী বিস্ময়ভরা সাফল্য! অবশ্য এরপর আর কোনো দিন এই ম্যাজিকের ধারে কাছেও তিনি যাননি।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯২৬ সালের ২৪ অক্টোবর আমেরিকার মোটরনগরী ‘ডেট্রোয়েট’-এ জীবনের শেষ ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে হুডিনি অ্যাপেন্ডিসাইটিস জনিত কারণে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে হাজারো দর্শকের সামনে নির্ধারিত ম্যাজিকের চ্যালেঞ্জ মাথা পেতে নেন। অসুস্থ হুডিনি নিজের যাবতীয় কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে একপর্যায়ে সংজ্ঞা হারিয়ে মঞ্চে চলে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে ডাক্তার না দেখিয়ে তিনি স্বাভাবিকভাবে ম্যাজিক দেখানো শেষ করেন। তারপর চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হন। কিন্তু হায়, ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে! ডাক্তাররা শতচেষ্টা করেও এই অভূতপূর্ব ও অসাধারণ ম্যাজিশিয়ানকে বাঁচাতে পারেননি। এক সপ্তাহ পর তৎকালীন মার্কিন চিকিৎসাব্যবস্থাকে পরান্ত করে ৩১ অক্টোবর মাত্র ৫২ বছর বয়সে হ্যারি হুডিনি ডেট্রোয়েটের ‘মেস’ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। হুডিনি ম্যাজিকে জিতেছেন, কিন্তু হেরে গলেন মৃত্যুর কাছে—যে পরিণতি এ পৃথিবীতে কেউই এড়াতে পারে না।
ম্যাজিক-সম্রাট চলে গেছেন, কিন্তু সারা দুনিয়ায় তিনি রেখে গেছেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী-গুণগ্রাহী। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এতই পাগল এবং অন্ধভাবে হুডিনির বিস্ময়ে বিশ্বাসী, তাঁরা এখনো মনে করেন - হুডিনি মাটির নিচে অন্ধকার কবরে নয়, বরং তিনি মঞ্চে কালো কাপড়ে ঘেরা ‘গোস্টহাউসে’-ই আছেন এবং নিরন্তর মুক্তির কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন। একটু সুযোগ পেলেই মৃত্যুর ফাঁকফোকর গলিয়ে মৃত হুডিনি যে কোনো দিন জীবিত অবস্থায় লোকালয়ে ওঠে আসবেন। কিন্তু এ-ও কী সম্ভব?
জীবনে বেঁচে থাকতে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে। হুডিনিও করে গেছেন। কৌশলের সুড়ঙ্গ কসরত করে তিনি হাতে-পায়ে পুরোনো লৌহ শিকলের কঠিন বন্ধন থেকে বারবার নিজেকে গলিয়ে–পিছলিয়ে মুক্ত করে এনে হাজার হাজার মানুষকে চমকে দিয়েছেন। অভিভূত করেছেন। আনন্দ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে জাদুর মঞ্চে এর চেয়েও বহুগুণ কঠিন ও জটিল চ্যালেঞ্জ অন্য কোনো হুডিনির পক্ষে সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করাও অসম্ভব নয়। কিন্তু জন্ম, মৃত্যু ও মানবজীবনের শেষ পরিণতির যাবতীয় রহস্যের কূলকিনারা তো নিছক আবেগ আর ভক্তি দিয়ে পাওয়া যায় না। লেখাটা এভাবে এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত—কিন্তু আজকের শেষ কথা এখনো একটু বাকি।
হ্যারি হুডিনি তাঁর কৌশলী হাতের কারসাজি এবং সৃজনশীল মন ও মনন দিয়ে ম্যাজিক পেশাকে একটি শিল্পে রূপায়িত করে গেছেন। তাঁর ওই শিল্পীসত্তার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যও ছিল। তিনি কোনো দিন ম্যাজিকের কারিগরি কৌশল কিংবা কসরতের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেননি। বরং তাঁর সার্বক্ষণিক দৃষ্টি থাকত শ্রোতাদের মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ওপর। অনির্বচনীয় এক সম্মোহনী শক্তিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হুডিনি তাঁর দর্শকদের দেহ, দৃষ্টি ও মনকে একই ধারায় প্রবাহিত করে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রাখতে পারতেন। হুডিনির ‘ম্যাজিক’, ম্যাজিক নয়। বিজ্ঞানও নয়। অত্যন্ত জটিল ও কঠিন কারুকার্যখচিত ইতালীর ‘মুরানো’ গ্লাস ওয়ার্কের মতো একটি অতি উঁচুমানের সমৃদ্ধ শিল্প। বলাই বাহুল্য, এই শিল্পকর্মের সফল ও সার্থক চর্চা তিনি একবার দুইবার করেননি। করে গেছেন বারবার। আর এজন্যই আশ্চর্যজনকভাবে হ্যারি হুডিনি ম্যাজিকজগতের এক অতুলনীয় কিংবদন্তি পুরুষ!
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য দণ্ডমুণ্ডের কর্তারাও কোনো অংশে হুডিনির চেয়ে কম নন! যুগ যুগ ধরে তাঁরাও তাঁদের বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলী পারঙ্গমতার বদৌলতে দেশের লাখো কোটি জনতাকে হুডিনির নিয়মে কোনো এক অদৃশ্য জাদুর বলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বশ করে রেখেছেন। তফাত শুধু এইটুকুই—হুডিনি যতক্ষণ মঞ্চে থাকেন, তার দর্শক-শ্রোতাদের সম্মোহনী খ্যান ভাঙে না। রাজনীতিবিদদের মঞ্চ-নাটক শেষ হওয়ার আগেই তাদের অনুসারীদের ঘুম ভেঙে যায়। সোনালি স্বপ্ন খান খান হয়ে ধসে পড়ে। অথবা রাজনীতির অভিনেতারা আদৌ জানেন না—কখন নাটকের শেষ অঙ্ক শেষ করতে হয়। চরম পরিণতি এড়িয়ে চলতে হয়।
লেখক: আবু এন এম ওয়াহিল। অধ্যাপক টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি;
এডিটর - জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াস, Email: [email protected]