স্বপ্ন নয়, কোনো এক বোধ

অলিভিয়া চাও
ছবি: সংগৃহীত

কানাডার টরন্টো শহরের নতুন মেয়র নির্বাচিত হলেন অলিভিয়া চৌ। চীনা বংশোদ্ভূত কানাডীয় রাজনীতিবিদ তিনি। এর আগে টানা দুবার মেয়র ছিলেন জন টরি, ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। একেবারেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। টরন্টোর প্রথম নারী ও সংখ্যালঘু মেয়র। খুব ভালো লাগছে আর স্বপ্ন দেখছি, কবে আমাদের বাংলাদেশের কেউ একজন এমন পর্যায়ে যেতে পারবেন।

স্বপ্ন, স্বপ্ন, শুধু স্বপ্ন দেখে মন। ভালো লাগছে, এবারের মেয়র নির্বাচনেও আমাদের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এর আগেও মেয়র এবং এমপি নির্বাচনে আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।

শুধু চীনা নয়, পাকিস্তানি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপি, এমপিপি, কাউন্সিলরে ভর্তি কানাডা। অলিভিয়া চৌয়ের দল এনডিপির প্রধান জগমিত সিং ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ইশ! আমাদের কেন মাত্র একজন? কবে হবে আমাদের আরও জনপ্রতিনিধি? আমরা কি পারব আমাদের জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বাড়াতে? আমরা অনেক পরিশ্রমী, যোগ্য, সৎ—কানাডায় আমরা শুধু সংখ্যাতেই কম আর কিছু নয়।

লেখক
ছবি: সংগৃহীত

কানাডার হাউস অব কমন্সে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ১৬ এমপি সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্কারবোরো সেন্টারের এমপি সালমা জাহিদের নেতৃত্বে ১৬ এমপি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অনুরোধ করেছেন পাকিস্তান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে কানাডা যেন তার ভূমিকা অব্যাহত রাখে।

কানাডায় হাউস অব কমন্সে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ১৬ এমপি! যুক্তরাজ্যেও তাঁদের জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বেশ ভালোই। কানাডায় বাংলাদেশ থেকে আসা আমাদের এমপি বা এমপিপি কজন? মাত্র একজন এমপিপি সবেধন নীলমণি ডলি বেগম। ক্ষমা চাচ্ছি পাকিস্তান সম্পর্কে খুবই রেসিস্ট মন্তব্য করার জন্য। তবে এটি লিখেছি বাংলায়, কাজেই আমরা আমরাই জানব, পাকিস্তানিরা জানবে না, তাই না?

আল্লাহর কাছে গিবত করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। কানাডার পার্লামেন্টে আমাদের সাউথ এশিয়ান ইন্ডিয়ান, শ্রীলঙ্কান প্রতিনিধি অনেক আছে। কানাডার অন্যতম বিরোধী দল এনডিপির প্রধান জগমিত সিং ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ভারত বিশাল দেশ, জনসংখ্যায়ও তারা এখন চীনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ভারতীয়রা কানাডায় বহু আগে থেকেই আসতে শুরু করেছিলেন। এ দেশে ভারতীয়দের সংখ্যা প্রচুর, কাজেই তাঁদের জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বেশি হতেই পারে। কিন্তু পাকিস্তানিদের এত জনপ্রতিনিধি কীভাবে হলো?

শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে পাকিস্তান স্টুডেন্ট ডিরেক্ট প্রোগ্রামে ঢুকে পড়েছে—এত যাদের জনপ্রতিনিধি, তারা তো ঢুকবেই, তারা অনেক শক্তিশালী, তারা অনেক কিছুই করতে পারবে। তাদের সংখ্যাও অনেক বেশি।

এ ছাড়া পাকিস্তানিরা কানাডার মেইন স্ট্রিম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন অনেক দিন থেকেই। ফলে তাঁরা বড় দলগুলো থেকে নমিনেশন পাওয়ার তরিকাগুলো জানেন। বলতে দ্বিধা নেই, সাদাদের এবং অন্য আরও বিভিন্ন দেশের প্রার্থীদের মাঝখান থেকে মনোনয়ন পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। এমনকি যেসব এলাকায় আমরাই সংখ্যালঘু, সেসব জায়গা থেকেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদারাই নমিনেশন পেয়ে থাকেন। তাঁরা শুধু আমাদের ব্যবহার করেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো।

পাকিস্তানিরা নিজেরা এখানকার রাজনীতিতে কামড়াকামড়ি করেন না, খুবই একতাবদ্ধ, আর তাঁরা তাঁদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীকেই বাছাই করেন যাতে প্রথমে পার্টি এবং পরে জনগণের ভোট নিয়ে জিততে পারেন। আর এ কারণেই তাঁদের জনপ্রতিনিধির সংখ্যা এত বেশি এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

আমাদের জনপ্রতিনিধি যত বাড়বে, আমাদের অধিকার আদায়ে আমাদের কণ্ঠ ততই বলিষ্ঠ হবে। সুদিনের আশায় থাকলাম যখন আমাদেরও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো বেশি বেশি জনপ্রতিনিধি আসবেন। ধন্যবাদ সবাইকে, ভালো থাকুন আর ভালো রাখুন সবাইকে। শেষ করি আমার খুব প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বোধ’ কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে—

‘আলো-অন্ধকারে যাই—মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন্‌ এক বোধ কাজ করে’

  • লেখক: মাহমুদা নাসরিন, প্রিন্সিপাল কনসালট্যান্ট, ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস, ২০৫/৩০৯৮ ড্যানফোর্থ অ্যাভিনিউ, টরন্টো, শিক্ষক ও সমাজকর্মী। সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ও কিং খালেদ বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব