খাজুকো উয়েমাতসু ভূঁইয়া: বাঙালির ভিনদেশি আত্মীয়

খাজুকো ভূঁইয়া সেনসেই

আমার জাপানি ভাষার শিক্ষাগুরু ছিলেন খাজুকো ভূঁইয়া সেনসেই। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই আবুধাবিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাঁর এই অকালে চলে যাওয়ার খবরটা আমাদের জন্য অনেকটা বজ্রপাতের মতো ছিল। শুধু আমি নই, হাজারো শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাঁরা খাজুকো সেনসেইর কাছে জাপানি ভাষাশিখে জাপানসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছেন। তাঁদের সবার জন্যই সেনসেইর অকালমৃত্যু অনেক বেদনার।

খাজুকো সেনসেইর সঙ্গে আমার পরিচয় খুব একটা দীর্ঘ সময়ের নয়। অনেকটা বিদ্যুৎ চমকানো শুরু আর শেষ হয়ে যাওয়ার মাঝখানে যে ব্যবধান, তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগের পরিধিও ততটুকু। সংক্ষিপ্ত এই সময়ের জানাশোনা থেকেই আমি খাজুকো ভূঁইয়া সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করার চেষ্টা করব। তিনি ছিলেন আমার জাপানি ভাষাশিক্ষার গুরু। শিক্ষাগুরুকে জাপানি ভাষায় ‘সেনসেই’ বলা হয়।

খাজুকো ভূঁইয়া ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর জাপানের শিজুওকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি মমতাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং বাংলাদেশে আসেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শেষ তিনি জাপান অ্যাম্বাসি স্পনসরড ঢাকা-জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও পরিচালক ছিলেন।

সেনসেইর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ২০০৭ সালের মাঝামাঝি। আমি তখন বাংলাদেশের একটি ওষুধ কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। কর্মস্থল ময়মনসিংহে। ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতে করতে আমার বড় বোনের অনুপ্রেরণায় এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হই। জাপানে পড়তে যেতে হলে কী কী লাগবে আর কী কী লাগবে না, তার একটা তালিকা করতে গিয়ে দেখি, অনেক কিছুর সঙ্গে জাপানি ভাষাশিক্ষার অভিজ্ঞতাও লাগবে। তার কারণ হলো, আমি মার্কেটিং পড়তে জাপানে যেতে চাই, যা একটু ব্যতিক্রমই বলা চলে। বেশির ভাগ বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী জাপানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বা চিকিৎসাবিদ্যা পড়তে যান। আমার বড় বোনও জাপানে চিকিৎসাবিদ্যায় পিএইচডি করতে এসেছিলেন। আরেকটি অংশ যায় ভাষাশিখতে। কিন্তু আমি যেতে চাচ্ছিলাম মার্কেটিং পড়তে।

জাপানে মার্কেটিং পড়তে আসা বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। মার্কেটিং ব্যবসা অনুষদ বা কোথাও কোথাও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হওয়ায় জাপানি ভাষাশিক্ষার অভিজ্ঞতা ব্যতীত আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। এই একটি মানদণ্ড পূরণ করতে গিয়ে আমি ঢাকায় জাপানি ভাষাশিক্ষার জন্য খোঁজখবর নিতে থাকি। খোঁজখবর নেওয়া শেষ হলে, ঢাকার মণিপুরী পাড়ায় ঢাকা জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটের সন্ধান পাই, যা বাংলাদেশে জাপান দূতাবাস অনুমোদিত, সহায়তাপ্রাপ্ত এবং পরিচালিতও মনে হয়। আমি সেখানে যোগাযোগ করি। এই ইনস্টিটিউটই আমার জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের মানদণ্ড পূরণ করে। বর্তমানে আমি জাপানে এমবিএ ও পিএইচডি করে একটি কোম্পানির ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত আছি এবং বসবাস করছি। ঢাকা জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটের সুবাদেই খাজুকো সেনসেইর সঙ্গে আমার পরিচয়।

সেনসেইর সঙ্গে দেখা করতে একদিন ঢাকার মণিপুরী পাড়ার ইনস্টিটিউটে হাজির হই। আমি অবশ্য সেখানে যাওয়ার আগেই টেলিফোনে সাক্ষাতের অনুমতি ও সময় নিয়ে রেখেছিলাম। তাই তাঁর সাক্ষাৎ পেতে আমাকে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। তা ছাড়া তিনি বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় বসবাস করলেও সময়ানুবর্তিতায় ছিলেন জাপানি। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘হোয়েন ইন রোম, ডু অ্যাজ দ্য রোমানস ডু’; খাজুকো সেনসেইকে দেখে কিছু কিছু বিষয়ে সে রকম মনে হয়নি। যেমন সময়ানুবর্তিতা, আদর্শ, শিক্ষা প্রদানে একাগ্রতা, অন্যের প্রতি সহানুভূতি, অন্যের উপকার করা, সর্বোপরি মহানুভবতা। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে বসবাস করা সত্ত্বেও সময়ানুবর্তিতার অভ্যাস বা মানবিক গুণাবলি থেকে একটুও বিচ্যুত হননি তিনি। একান্ত অধ্যবসায় আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ না হলে এমনভাবে নিজেকে পরিচালনা করা এবং ধরে রাখা সত্যিই দুরূহ। সেনসেইর এ রকম গুণাবলি সম্পর্কে আমরা আরও বিশদভাবে জানতে পারি সেনসেইর স্বামী মমতাজ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রকাশিত বই ‘আমার বউ জাপানি’ থেকে।
যা–ই হোক, খাজুকো সেনসেই এলেন। প্রথম সাক্ষাতে তিনি জাপানি ভাষাশিক্ষার যেসব নিয়মকানুন আছে, সেসব সবিস্তার বললেন। তখন সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস হতো। শুক্র, শনি আর মঙ্গলবার। আমি সেনসেইকে বললাম যে আমার কর্মস্থল ময়মনসিংহে। আমি মাসে একবার বা দুইবার ঢাকায় আসি কোম্পানির মিটিংয়ে। তাই আমি জাপানি ভাষার ক্লাসে সপ্তাহে তিন দিন উপস্থিত থাকতে পারব না। শুক্র আর শনিবারে ক্লাস করব, মঙ্গলবারের যে বাড়ির কাজ থাকবে বা লেকচার শিট থাকবে, তা আমি নিয়ে যাব এবং বাসায় পড়ব। সেনসেই আমার সমস্যাটি অনুধাবন করলেন। আমি তাঁর সদয় অনুমতি পেলাম। প্রথম সাক্ষাতে যা উপলব্ধি করলাম তা হলো, সেনসেই তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা অনুধাবন করতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী আন্তরিকতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতেন, যাতে তাঁদের কোনো রকম অসুবিধা না হয়। আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়, উন্নয়নশীল একটি দেশের তরুণেরা জাপানি ভাষাশিখে উন্নত দেশ জাপানে যাবে, উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষা বা উপার্জন যা–ই হোক না কেন, সেনসেই সবাইকেই সহযোগিতা করতেন দায়িত্ব নিয়ে এবং অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে।

আমি যথারীতি জাপানি ভাষাশিক্ষার ক্লাস শুরু করেছি। প্রতি সপ্তাহে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসি। শুক্র ও শনি দুই দিন জাপানি ভাষার ক্লাস করি এবং শনিবার রাতে ময়মনসিংহে ফিরে যাই। এভাবে ছয় মাস চলল। আমি ভালোই করছিলাম। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল দুই জায়গায়। প্রথমত, আমার বস যাঁকে আমার জাপানি ভাষাশিক্ষার কথা বলেছিলাম। তিনি আমার শনিবারের কাজে অনুপস্থিতি এবং জাপানি ভাষাশিখে জাপানে চলে যাওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি হেড অফিসে নালিশ করলেন। আমার প্রমোশন আটকে দিলেন। এমনকি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করলেন। আমি উপলব্ধি করলাম যে আমার স্বপ্ন পূরণে, আমার চেষ্টায় একজন ভিনদেশি সেনসেই বিভিন্নভাবে উপকার করছেন, অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন; আর আমার দেশীয় সহকর্মী, যাঁর সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়, একসঙ্গে কাজ করি, একসঙ্গে বসে খাই, তিনি আমার চাকরি থেকে বিতারণের পথ তৈরি করছেন। সত্যিই পৃথিবীটা কত বৈচিত্র্যময়! আমি বিশ্বময় ঘুরে দেখলাম, মানুষ আরও বেশি বৈচিত্র্যময়। একই ধরার মানুষ আমরা, কেউ কারও জন্যে সুযোগ তৈরি করি, আবার কেউ সুযোগ কেড়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটি। যিনি আমার আত্মীয়, তিনি আচরণ করছেন অনাত্মীয়ের মতো, আর যিনি ভিনদেশি অনাত্মীয়, তিনি আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন আত্মীয়ের মতো। সেই উপলব্ধি থেকে আমার মনে হলো, খাজুকো সেনসেই শুধু আমার নন, আমার মতো হাজারো বাঙালির ভিনদেশি আত্মীয়। সেনসেইও বাংলাদেশকে ধারণ করেছিলেন আত্মার আত্মীয় হিসেবে।  

দেখতে দেখতে ২০০৭ সাল শেষ হয়ে গেল। জাপানি ভাষাশিক্ষার ৭৫ ঘণ্টার কোর্স শেষ করলাম। ২০০৮ সালের কোর্স শুরু হতে আরও কিছুদিন বাকি আছে। আমি সম্ভবত খাজুকো সেনসেইকে বলে রেখেছিলাম যে আমার আরও ৭৫ ঘণ্টার কোর্স করতে হবে। ভর্তির কোটা নির্ধারিত। কোটাটি নিশ্চিত করতেই আমার আগাম বলা। সিট না পাওয়ার আশঙ্কায় আমি শঙ্কিত ছিলাম। কারণ, আমি ময়মনসিংহ থেকে সময়মতো খোঁজখবর রাখতে পারব না। ভর্তির দিনক্ষণ চলে গেলে আমি মুশকিলে পড়ব। শঙ্কিত হওয়ার আরও একটি কারণ ছিল। তখন আমি ক্লাসে কিশোরগঞ্জের অনেককেই দেখতে পেতাম। তাঁরা ছিলেন সেনসেইর শ্বশুরবাড়ির এলাকার ছাত্র। জাপানে আসার জন্য কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আরও অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে ক্ষেত্রে সবাই যদি একযোগে জাপানি ভাষাশিক্ষার ক্লাসে হাজির হন, তাহলে আমার আসন পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। খাজুকো সেনসেইকে বলে রেখেছিলাম, তিনি আমাকে ২০০৮ সালেও ভর্তির সুযোগ করে দিলেন।

প্রতি সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস করি, এক দিনের বাড়ির কাজ, শ্রেণিকক্ষের উপকরণ নিয়ে যাই। এভাবে ভালোই চলছিল। ইতিমধ্যে জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের দিনক্ষণ চলে এসেছে। কিন্তু আবেদন করার মানদণ্ড পূরণে জাপানি ভাষাশিক্ষার যে সার্টিফিকেট লাগে, তা হাতে আসতে অনেক দিন বাকি। কারণ, কোর্স তখনো শেষ হয়নি। আমি সেনসেইকে আমার সমস্যার কথা বললাম। সেই সঙ্গে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমাও বলে রাখলাম। সেনসেই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। কিছুদিন যাওয়ার পর সেনসেই আমাকে তাঁর ইন্দিরা রোডের বাসায় যেতে বললেন। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট আমার ততটা চেনা নয়, যতটা আমি জাপানের রাস্তাঘাট চিনি। কারণ, ঢাকায় থাকতে আমার কখনোই ভালো লাগত না। আমার অফিস, বড় বোন ও দুলাভাইয়ের বাসা, যেখানে আমি থাকতাম এবং যেসব কাজকর্মে একেবারেই না গেলেই নয়, সে রকম কিছু জায়গা ছাড়া সম্পূর্ণ ঢাকা শহর আমার অপরিচিত। তাই আমি কখনোই জানতাম না যে ইন্দিরা রোড ফার্মগেটেরই কাছে! যা–ই হোক, নানাজনের কাছে জিজ্ঞেস করতে করতে পড়ন্ত বিকেলে আমি সেনসেইর বাসায় পৌঁছে গেলাম। ফার্মগেটের ঘিঞ্জি এলাকা আর সহস্র মানুষের স্রোত ঠেলে লাল ইটের ফ্ল্যাটটিতে প্রবেশ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি। সেনসেই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আর দেখছিলাম কত সুন্দর করে সেনসেই ফ্ল্যাটটিকে সাজিয়ে–গুছিয়ে রেখেছেন। তিনি আমাকে একটি অন্তবর্তী সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। এই অন্তর্বর্তী সনদ দিয়েই আমি জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করি এবং নানা ধাপ পেরিয়ে জাপানে উচ্চশিক্ষায় আসতে সমর্থ হই।

খাজুকো সেনসেইর এই অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কাছে সরাসরি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ না পাওয়াটা আমার জন্য অবশ্যই দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়। কারণ, সেনসেই ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই আবুধাবিতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। আমি তখন জাপানে। সেনসেইর মৃত্যু সংবাদ আমি জানতে পেরেছি তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে এবং পরোক্ষভাবে। পরোক্ষভাবে বলছি এ কারণে যে আমি এ সংবাদ জানতে পেরেছি সেনসেইর একমাত্র ছেলে মিস্টার তারেক রাফি ভূঁইয়া জুনের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। আমার পিএইচডি চলাকালীন ২০১৭ সালে মিস্টার জুন ডেটাসফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে একটি প্রতিনিধিদলহস আমার বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ করেন। তখন মিস্টার জুনের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং তার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু তখনো আমি জানতাম না যে মিস্টার জুন খাজুকো সেনসেইর ছেলে। কিংবা মিস্টার জুনও জানতেন না যে আমি তাঁর মা খাজুকো সেনসেইর ছাত্র বা এই লেখা পড়ার আগপর্যন্ত হয়তো তিনি জানেনও না।

আজকের আমিকে যে আমি একাই প্রস্তুত করেছি, এমনটি নয়। আজকের আমিকে তৈরি করতে মা–বাবা, ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক-শিক্ষিকা, পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি চলতি পথে যাঁদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, যাঁদের সঙ্গে একদণ্ড কথা বলেছি, তাঁদেরও অবদান রয়েছে। তাঁদের মধ্যে শিক্ষকদের অবদান তো অতুলনীয়। দেশে ও বিদেশে অনেক শিক্ষকের স্নেহ পেয়েছি। খাজুকো ভূঁইয়া সেনসেই ছিলেন তেমনই একজন, যিনি আমার স্বপ্নটাকে ধরতে পেরেছিলেন এবং বুঝতেও পেরেছিলেন যে আমি আমার স্বপ্নটাকে মুঠোয় পুরতে কতখানি সচেষ্ট ছিলাম। আমার সেই চেষ্টায় সেনসেই তাঁর সাধ্যমতো সহযোগিতা করে আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। আমি প্রথমেই বলেছি যে বিদ্যুৎ চমকানো শুরু আর শেষ হয়ে যাওয়ার মাঝখানে যে ব্যবধান, খাজুকো সেনসেইর সঙ্গে আমার যোগাযোগের পরিধিও ততটুকু। জীবনের এই সংক্ষিপ্ত সময়ের কারও অবদান যে বিশাল আকারে ধরা দিতে পারে, তা খাজুকো সেনসেইর সঙ্গে দেখা না হলে বুঝতে পারতাম না।

খাজুকো সেনসেইর সঙ্গে এমন হাজারো ছাত্রের হাজারো সফলতার গল্প মিশে আছে। আমি তাঁকে স্মরণ করছি একজন দায়িত্ববান, পরোপকারী, মহানুভব, হৃদয়বান এবং বাঙালির ভিনদেশি আত্মীয় হিসেবে। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।