টরন্টোতে আনন্দমুখর ষষ্ঠ বাংলাদেশ উৎসব

ছবি: ক্রিয়েটিভ টিএস ডট কম

কানাডার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত হলো ষষ্ঠ ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’। গত শনিবার (২০ মে) অনুষ্ঠিত আয়োজনের স্থল যেন হয়ে উঠেছিল এক খণ্ড বাংলাদেশ। আলোঝলমলে মিলনায়তনে ছিল নানা আনন্দ উৎসব। কবিতায়, গানে, কথামালায়, নাচে আর বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথি শিল্পীদের অংশগ্রহণে ছয় ঘণ্টা ধরে চলা অনুষ্ঠানটি আনন্দধারায় ভেসে চলছিল যেন। মিলনায়তনে বসে যারা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন, তাঁদের অনেকের মুখে শোনা যায়, ‘পুরো আয়োজনটি যেন একখণ্ড বাংলাদেশ।’

উষ্ণ সম্ভাষণে অতিথি বরণ
টরন্টো প্যাভিলিয়নের বাইরে পার্কিং লট থেকে শুরু করে প্রবেশপথ পর্যন্ত ছিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়া। দায়িত্বে ছিল টরন্টো পুলিশে বেশ কয়েকজন অফিসার। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অতিথিদের সম্ভাষণ জানান স্বেচ্ছাসেবকেরা। প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে যাওয়ার সময় আমন্ত্রণপত্র দেখে অতিথিদের হাতে ব্যান্ড পরিয়ে দিচ্ছিলেন দুজন। মিলনায়তের বাইরে লবিতে প্রবেশের পর দেখা মেলে আয়োজকদের কয়েকজনের। তাঁরা আগত ব্যক্তিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন হাসিমুখে।

ছবি: ক্রিয়েটিভ টিএস ডট কম

মেলা থেকে মিলনমেলা
টরন্টো শহরের অতিপরিচিত মুখ নাচে অন্তঃপ্রাণ অরুণা হায়দার ছিলেন একটি স্টলে। তাঁর হাসিভরা মুখ আর আন্তরিক সম্ভাষণে অনেকেই পুলকিত। শুধু তিনিই নন, মেলায় অংশ নেওয়া অন্যান্য স্টলগুলো থেকে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। মূল আয়োজন শুরুর আগে সবাই দোকানে দোকানে ঘুরেছেন। আড্ডা, হাসি, আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছিল পুরো মেলা প্রাঙ্গণ।

উৎসবের শুরু
আয়োজন শুরু হয় বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি নির্জলা প্রিয়দর্শিনীর শুভেচ্ছা জানানো মধ্য দিয়ে। এরপর আমন্ত্রিত অতিথি ও আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকদের নিয়ে মঞ্চে আসেন বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক ও এনআরবি টিভির সিইও শহিদুল ইসলাম মিন্টু।

ষষ্ঠ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান। এ ছাড়া শুভেচ্ছা জানান টরন্টো সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জেনিফার মেকেলভি, এমপি সালমা জাহিদ, এমপিপি ডলি বেগম, এমপিপি মিটজি হান্টার, সিটি অব টরন্টোর কাউন্সেলর ব্রাড ব্রাডফোর্ড, ড্যান মুইস প্রমুখ।

আয়োজনে পর্যায়ক্রমে পৃষ্ঠপোষকদের শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথি ও রাজনৈতিক নেতারা। এ বছর বিশেষভাবে সম্মানপ্রাপ্ত হলেন, আনিকা চৌধুরী, ব্যারিস্টার ওমর হাসান আল জাহিদ, গৌতম পাল, আরিফ হোসেন, শান দে, রনি হায়দার, আবুল আজাদ, নিতু দত্ত, মনজুর চৌধুরী, সাব্বির খান, আকমল সরকার, প্রণবেশ পোদ্দার ও সুজয় পোদ্দার, চিত্ত দাস, জামান ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার শামীম আরা, হিশাম চিশতি, মোর্শেদ নিজাম সিপিএ, ব্যারিস্টার শামস মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, বজলুর মারুফ, মোস্তফা হক, সূর্য চক্রবর্ত্তী, ফারজানা শারমীন, ফারাহ খান, আবদুল মান্নান, আনিসুর রহমান, মোহাম্মদ হাসান, আসাবউদ্দিন খান আসাদ, রায়হান চৌধুরী, মোহাম্মদ সুরুজ্জামান, আ স ম তোফাজ্জল হক, দুলাল ভৌমিক, তানভীর নাওয়াজ, জিসান আলী, এমডি আজিম, নিপা কর, মাহবুব ওসমানী, আবদুল আউয়াল, দীপু ইসলাম, মুন্নু সিরামিক কানাডা।

ষষ্ঠ বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল উৎসর্গ করা হয় প্লেব্যাক সম্রাট হিসেবে খ্যাত প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ও গুণী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী নিলুফার বানু লিলিকে।

দুই মুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া হয় সম্মাননা
একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই বসবাস এখন কানাডায়। তাঁদের মধ্যে থেকে দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাঁরা হলেন কাজী সারোয়ার ও রফিকুল ইসলাম।

বাচনিক পরিবেশনায় মুগ্ধ দর্শক
আবৃত্তি সংগঠন ‘বাচনিক’ মানেই ভিন্ন পরিবেশনা। উৎসবেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। দলটির প্রধান মেরী রাশেদীনের নেতৃত্বে মঞ্চে আসেন  কাজী হেলাল, নাজমা কাজী, ফারহানা আহমদ, ফ্লোরা নাসরিন ইভা। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা অবলম্বনে পুরো পরিবেশনাটি গ্রন্থনা করেন আবৃত্তিকার ও লেখক রবি শংকর মৈত্রী।

ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার, এনআরবি টিভির সঞ্চালক মাসুদ করিম তাঁর জাদুকরি কণ্ঠে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। তার পরিবেশনায় দর্শকেরা যেন ফিরে গিয়েছিল ঢাকার ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার মাঠে।

ছবি: ক্রিয়েটিভ টিএস ডট কম

নৃত্যকলার মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা
নৃত্যগুরু, নৃত্যকলা কেন্দ্রের প্রধান বিপ্লব কর ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর। এ ছাড়া সংগীতশিক্ষক ও ধ্রুবপদ পারফর্মিং আর্টসের প্রধান ড. মমতাজ মমতা গান শোনান। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী অব কানাডা কয়েকটি গান পরিবেশন করে। কণ্ঠশিল্পী রুবেন ইউসুফ পরিবেশনা করেন চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’র জনপ্রিয় গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি।

বাঁশি বাজিয়ে শোনালেন মীর সাব্বির
অভিনেতা ও পরিচালক মীর সাব্বির, অভিনেতা আরফান আহমেদ, অভিনেতা মাজনুন মিজান ও নির্মাতা আল হাজেন মঞ্চে আসেন শহিদুল ইসলাম মিন্টুর সঙ্গে। অতিথি শিল্পীদের সম্মান জানিয়ে তাঁদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। শিল্পী শুভেচ্ছা বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন নাট্যাংশ অভিনয় করেন। তবে বাঁশি বাজিয়ে শুনিয়ে সবাইকে চমকে দেন মীর সাব্বির।

ছবি: ক্রিয়েটিভ টিএস ডট কম

কনকচাঁপার গানে বিমোহিত শ্রোতাদর্শক
রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা যখন মঞ্চে আসেন সবার শেষে। তিনি একে গেয়ে শোনান, পাগল মন, আনন্দ অশ্রুসহ তার গাওয়া বেশ কিছু গান। তাঁর গনে সংগত করেন বেজ গিটারে সোহেল ইমতিয়াজ, লিড গিটারে জয় সরকার, ড্রামস ও অক্টোপ্যাডে সৌরভ ধ্রুব, তবলা ও পারকিউশনে ঝলক দেব চৌধুরী, কি–বোর্ডে মেহেদি ফারুক। পুরো আয়োজনে শব্দ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেন ‘ড্যানফোর্থ সাউন্ড’।


আয়োজনটি সঞ্চলনা করেন অজন্তা চৌধুরী, শ্রীজিৎ চৌধুরী।