নিরানন্দের কাব্য

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমার ভীষণ কষ্ট হয় অনিন্দ্য! কেন বোঝো না?
এভাবে আমি আর পারছি না!
কেন এভাবে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছ আমায়? অন্যায় কী আমার? কী করেছি আমি? কী ক্ষতি করেছি তোমার যে এভাবে আমায় কাঁদাচ্ছ?
এতটুকু কষ্ট লাগে না তোমার এত নিষ্ঠুর হতে আমার সঙ্গে?
কি করে পার?
সেদিন বললে কাল দেখা হবে।
কাল গেল, পরশু গেল, মাস গেল, বছর গেল...
আমি কার আশায় পথ চেয়ে থাকি বলতে পার?
কিসের আশায়?
যে হারিয়ে যাওয়ার নিয়তে নিজেই হারিয়ে যায়, তাকে আমি কোথায় খুঁজব?
কোথায় গেলে পাব তোমাকে?
একটাবার বলে নাহয় যেতে, কী দোষে দোষী আমি!
হারিয়েই যদি যাবে এভাবে, কেন কাছে এসেছিলে?
আমি তো আমার সম্পূর্ণ সত্তা দিয়েই চেয়েছি, চেষ্টা করেছি, পাগলের মতো ভালোবেসেছি!
কমতি কী ছিল বলে যেতে পারতে?
আমি সুখ চাইনি, বিত্ত চাইনি, তুমি ছাড়া আর কিচ্ছু চাইনি!
তুমি কি চেয়েছিলে?
ভালোবাসার কথা বলবে তুমি, ভালোবাসবে তুমি, পাগলামি করবে যত দিন ভালোবাসা না পাও-
আর যেদিন থেকে আমি তোমায় ভালোবাসতে শুরু করলাম, বদলে গেলে?
ভালোই যদি না বাসবে, তবে ভালোবাসতে কেন শেখালে?
আর ভালোবাসতেই যদি শেখালে অনিন্দ্য, ভুলে যেতে শিখিয়ে কেন গেলে না?
আমি আমার, আমাদের এই অসমাপ্ত ভালোবাসার দায়ভার কেন আমিই একলাই সারা জীবন বয়ে বেড়াব?
দায়িত্ব তোমার কিছু ছিল না?
আমি তোমার দায়িত্ব ছিলাম না?
যে হাসিমুখ দেখে প্রতিদিন বলতে...ভালোবাসি। সে মুখ থেকে চিরদিনের জন্য হাসিটুকু মুছে দিলে?
কি করে পারলে অনিন্দ্য?
অশ্রুর নোনাজলেই যদি ভাসাবে, অনিন্দ্য, কেন মিথ্যে ভালোবেসেছিলে?
আমি আর পারছি না অনিন্দ্য!
এভাবে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়!
এর নাম বেঁচে থাকা?
জীবন্মৃত হয়ে?
তোমার কি কিছুই বলার ছিল না? বলে যেতে কী দোষ ছিল আমার।
আমি বদলে নিতাম আমাকেই না হয়!
আমার আমিকে যদি ভালোই না বাসতে পারবে, তবে কেন এত পাগলামোময় দিনরাত পার করে কাছে এসেছিলে?
দিব্যি তো দিইনি কোনো দিন ভালোবাসো আমায় বলে!
আর যখন ভালোবাসা শিখলাম, তত দিনে তো অনেক দেরি হয়ে গেছে!
ফিরে যাওয়ার উপায় তো রেখে যাওনি আমার জন্য!
কেন অনিন্দ্য, কেন? খেলার জন্য এই আমাকেই চোখে পড়েছিল তোমার?
খেলা শেষে কি অবহেলায়, সবচেয়ে প্রিয় বলা খেলনাটা ফেলে গেলে?
অনিন্দ্য, আমি দিন, ক্ষণ, তারিখ, মাস বছর…মনে আর রাখতে পারি না জানো! সব আমার চৈতন্যে এক হয়ে যায়!
আমি কিছু মনে রাখতে পারি না।
শুধু তোমার দেওয়া কষ্ট, আজও ভুলতে পারি না।
জানো, ভাবি সেসব দিন, সেসব অঙ্গীকার, সব, সব কি মিথ্যে ছিল? না সত্যি ছিল? আমি সত্যি ছিলাম? তুমি সত্যি ছিলে?
মাঝে মাঝে জানো, তা-ও ঠিক আবছা লাগে!
আমার কিছু বিশ্বাস হয় না! মনে হয় দুঃস্বপ্ন ছিল!
জানো অনিন্দ্য, আমি সে দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে পারি না। কি যে হয় আমার! আমার ঘুমই কেন ভাঙে না?
আমার যে তোমার ভালোবাসার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি চাই!
কী করলে বলো মুক্তি আমার? আমার অস্তিত্ব থেকে তোমায় কেন আলাদা করে গেলে না? আমি, তুমি, আমরা নই… তুমি শুধুই আমার অস্তিত্বে মিশে আছ!
আমি কেন নেই তোমার অস্তিত্বে?
একবার এসে দয়া করে আমায় এসব কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে যেয়ো!
আমার দিন, ক্ষণ, মাস, তারিখের কোনো ভেদাভেদ নেই… এসো যেকোনো এক দিন… বছর, দশক.. গুনতে তো পারব না!
শুধু এ কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে যেয়ো আমায়! আমার অস্তিত্ব থেকে মুছে দিয়ে যেয়ো একদিন এসে!
অনিন্দ্য, সেদিন তোমায় আর ভালোবাসব না! এতটুকুও না।
আমার কষ্টটুকু নিয়ে যেয়ো শুধু তোমার সঙ্গে!
ভয় পেয়ো না, আমি কোনো দিনও ভালোবাসার দাবি নিয়ে বলব না… ভালোবাসো আমায়!
বিনা বাধায় লিখে দেব তোমায় … ব্লাংক চেকে, তুমি যার হতে চাও!

দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]