ঈদের কেনাকাটায় মত্ত সিডনির বাংলাদেশিরা
সিডনির আকাশে যখন ঈদের চাঁদ উঠবে, তখন বাংলাভাষী কমিউনিটির প্রস্তুতি থাকবে পূর্ণোদ্যমে। শহরজুড়ে ঈদ একজিবিশন, চাঁদরাত মেলা এবং বিশেষ শপিং আয়োজনে মুখর হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলের এই মহানগরী।
সিডনির বাংলা পাড়ায় ঈদ আয়োজন
ল্যাকেম্বা থেকে মিন্টো, ইঙ্গেলবার্ন থেকে লিভারপুল, ক্যাম্বেলটাউন থেকে ব্ল্যাকটাউন–সিডনির প্রতিটি বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় এখন ঈদবাজারের রমরমা। সিডনির বাঙালি বুটিক ক্লাবের মিন্টো ইনডোর স্টেডিয়াম ঈদমেলায় গিয়ে দেখা গেল, খানিকটা ঢাকার নিউমার্কেটের মতোই চিত্র। বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে কেনাকাটার ধুম।
‘এবারের ঈদে মেয়ের জন্য বাঙালি কারুকাজ সিল্কের জামা, জামাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি আর নিজের জন্য জর্জেটের ম্যাচিং করা থ্রি–পিস কিনেছি,’ বলছিলেন ডেনহ্যাম কোর্টের বাসিন্দা নাফিজা ভূঁইয়া। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি নতুন এসেছেন, এবারই প্রথম সিডনির ঈদবাজার থেকে পোশাক কিনছেন।
শপিং মলগুলোর বিশেষ আয়োজন
স্থানীয় শপিং সেন্টার এবং বড় স্টোরগুলোও ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করেছে। ব্ল্যাকটাউন শপিং সেন্টারের মার্কেটিং ম্যানেজার ডেভিড স্মিথ বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ডিসপ্লে ও ডিসকাউন্ট অফার করি। বাংলাদেশি কমিউনিটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক।’ অন্যদিকে সিডনির সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর মায়ারেও চলছে রমজান আর ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড়। ‘এবার সিডনিতে আসলেই ঈদ ঈদ লাগছে। বাংলাদেশের মতো না হোক, এখানেও ঈদের উৎসবটা কম নয়,’ বলছিলেন বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছর আগে পড়তে আসা জুলফিকার নাইন।
ঈদ একজিবিশনে সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি
লিভারপুল কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত ঈদ প্রদর্শনীতে দেখা মিলল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা, শোলার কাজ ও মাটির পুতুলের। নকশিকাঁথা, শোলার কাজ, মাটির পুতুল থেকে শুরু করে জামদানি শাড়ির সংগ্রহ দেখে বিস্মিত হচ্ছেন দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিরা। ‘আমার দাদির বাড়িতে এমন নকশিকাঁথা দেখেছি,’ বলছিল ১৩ বছরের জারা। ‘আমরা চাই, আমাদের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতি জানুক,’ বলছিলেন প্রদর্শনীর এক বিক্রেতা রফিকুল বারি।
চাঁদরাতের বিশেষ আয়োজন
চাঁদরাত উপলক্ষে মিন্টোতে বিডি কমিউনিটি হাব হলে দীর্ঘদিন ধরেই আয়োজন করা হচ্ছে বিশেষ ঈদবাজার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘আমাদের এখানে ছয়-সাত হাজার মানুষ কেনাকাটা করেন। সবাই খুশি থাকেন বিশাল সম্ভার দেখে,’ জানালেন আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য ফায়সাল আজাদ।
এ ছাড়া ল্যাকেম্বার এক ঘরোয়া আয়োজনে ঈদসামগ্রী বিক্রেতা মিলি হাসান বলেন, ‘ঈদের এক মাস আগে থেকেই আমরা বাংলাদেশ থেকে পোশাক আনা শুরু করি। এবার বিক্রি গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশের মতো বেশি।’
নতুন প্রজন্মের ঈদ উৎসব
সিডনির স্কুলে পড়া আট বছরের আরিয়ান আহমেদ বলল, ‘আমি এবার বাংলাদেশি পাঞ্জাবি পরব। আর পরে স্কুলের সবাইকে ঈদের ছবি দেখাব।’ সিডনির বাংলাদেশিদের এই ঈদ আয়োজন শুধু কেনাকাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি হয়ে উঠেছে প্রবাসে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার এক অনন্য মাধ্যম। ঈদের দিনে বিভিন্ন মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারে বিশেষ নামাজ ও সমাবেশের আয়োজনও করা হয় মহোৎসবে।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]