ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উদ্‌যাপন

স্কুলের বাচ্চাদের খালি পায়ে প্রভাতফেরিছবি: লেখক

সিডনিতে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি (রোববার) আয়োজন করে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। স্কুল প্রাঙ্গনে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে ভাষা সংগ্রামীদের স্মরণ করেন। সদ্যপ্রয়াত ভাষা সংগ্রামী, বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রথম সচিব, বরেণ্য সমাজকর্মী কাজী আনিসুর রহমানের স্মৃতিতে বাংলা স্কুলের এবারের একুশের আয়োজন উৎসর্গ করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টায় প্রভাতফেরির মাধ্যমে দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বাংলা স্কুল সাধারণ সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান সবাইকে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২০২৪ –এ সবাইকে স্বাগত জানান। তারপর সবাই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত গেয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসারে অসামান্য অবদান রাখা বিশিষ্ট সমাজকর্মী, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের সাবেক সভাপতি, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী ডক্টর খায়রুল চৌধুরীর হাতে একুশে সম্মাননা ২০২৪ তুলে দেওয়া হয়।

ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদবেদি
ছবি: লেখক

স্কুলের সহসভাপতি ফায়সাল খালিদ শুভর সভাপতিত্বে একুশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক একটি আলোচনা পর্ব উপস্থাপিত হয়। অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও, শুভেচ্ছা বক্তব্য লিখে পাঠান স্থানীয় সংসদ সদস্য আনুলাক চানটিভং ও ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র জর্জ গ্রিইস। বাংলা ভাষার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র ইব্রাহিম খলিল মাসুদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য আবদুল জলিল, শাহ আলম সৈয়দ, সাবেক সভাপতি গোলাম মাওলা, সাবেক সভাপতি ও ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলার মাসুদ চৌধুরী এবং সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ আশিক রহমান অ্যাশ।

আমন্ত্রিত অতিথিদের একাংশ
ছবি: লেখক

এ পর্ব শেষে বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি অনবদ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। অংশ নেয় স্বপ্নীল, স্বাধীন, মারজান, জেইনা, জাহিয়া, সূহানা, মুন্নাজ্জাহ, অর্নিলা, অনিরুদ্ধ, নাশভা, নাজিফা, নুসাইবা, মাহরুস, ইশাম, জারিফ, জারা, ফুজাইল, আদিয়ান, আমিনা, নাশিয়া, রেহনুমা, মৃন্ময়ী, নুসাইবা হক, অর্ণা, অনিরুদ্ধ, রাইনা, সোহারদিতি, ইয়ারা, অস্কার, রাইয়ান, অলিভিয়া, আরিজ ও আদ্য। দাদা ও নাতনিদের একটি পরিবেশনা নিয়ে আসেন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল খান ও তাঁর নাতনি জেইনা ও জাহিয়া। বাংলা স্কুলের শিক্ষক নুসরাত মৌরি ও তাঁর কন্যা বাংলা স্কুল ছাত্রী নুসাইবা একটি দ্বৈত আবৃত্তি করেন।

স্কুলের সোনামণিরা দাঁড়িয়ে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করছে
ছবি: লেখক

মহান ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অভিনীত পূর্বে ধারণকৃত দুটি চমৎকার ক্ষুদ্র নাটিকা প্রদর্শন করা হয়, যা উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। নাটক দুটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মসিউল আজম খান স্বপন। অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনা বাংলা স্কুলের অর্জন ও সাফল্যের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।

সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষক অনিতা মণ্ডল। পরিচালনা করেন শায়লা ইয়াসমিন নুসরাত, আঞ্জুমান আরা আইরিন, সায়মা হক, নুসরাত মৌরি ও নুসরাত লিন্ডা। শেষ পর্বে পরিবেশনা নিয়ে আসেন সিডনির বরেণ্য শিল্পী ফারিয়া আহমেদ, লামিয়া আহমেদ, মিঠু স্বপ্ন, নাজমুল আহসান খান ও ফায়সাল খালিদ শুভ। কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন মৌমিতা চৌধুরী ও তাঁর কন্যা মেহুলী বোস এবং আজিম সাগর ও ফারহানা বীথি দম্পতি। তবলায় সংগত করেন বিজয় সাহা। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন কাজী আশফাক রহমান।

বইয়ের স্টল ছাড়া পূর্ণতা পায় না ভাষা দিবস
ছবি: লেখক

শব্দ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেন স্কুলের কার্যকরী কমিটির সহসভাপতি ফয়সাল খালিদ শুভ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান খান। কারিগরী নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রাফায়েল রোজারিও। শহীদ মিনার নির্মাণ ও মঞ্চসজ্জার দায়িত্ব পালন করেন ইয়াকুব, রাফায়েল, স্বপন, শুভ, শাহিন ও আজিজ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ইয়াকুব আলী ও নুরুল ইসলাম শাহিন। আপ্যায়ন ছিলেন শাহীন, সম্প্রীতি, নূরীণ, সৃজা, আলিশা, তাহিয়া, দৃপ্ত, মৃন্ময়, কিবরিয়া, জিশান ও আজিজ।

বাংলা বইয়ের পসরা নিয়ে আসে প্রশান্তিকা প্রকাশনী। অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বাংলা স্কুল সভাপতি মশিউল আজম খান স্বপন। প্রধান সমন্বয়কারী নাজমুল আহসান খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলা স্কুলের অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এবারের আয়োজন বেলা দুইটায় শেষ হয়।

শহীদবেদিতে শ্রদ্ধা জানান সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী–পেশার মানুষ
ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সব বাংলা ভাষাভাষীর জন্য উন্মুক্ত থাকে।