প্রবাসী বাংলাদেশি এবং পিকনিক: আমরা কেন অন্য কিছু ভাবি না

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সম্প্রতি প্রথম আলোর দূর পরবাস–এ একটি লেখা পড়েছি, সেটি হলো ‘থাইল্যান্ড ডায়েরি’। লেখাটি ছিল এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি নিয়ে, যেখানে আমিও পড়েছি। লেখাটি পড়ে আমারও ইচ্ছা করল প্রথম আলোর জন্য একটি লেখা তৈরি করতে।

আমি বাংলাদেশ ছাড়ি ২০১৪ সালে, আমার পিএইচডির গবেষণার জন্য। আমার গন্তব্য ছিল গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া। আমার গবেষণা ও কাজের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ঘুরে এখন কানাডায় থিতু হয়েছি। এই তিনটি মহাদেশের যেসব বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে পরিচয় হয়েছে, সব স্থানে একই সমস্যা—গ্রুপিং ও নেতৃত্ব। অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডকোস্টে আমরা মোটামুটি পাঁচ বছর ছিলাম। এ সময় সেখানে ৩০০ বাংলাদেশি পরিবার ছিল এবং তারা ২ ভাগে বিভক্ত—ইসলামিক ও সাংস্কৃতিক।

ইসলামিক দলটি রোজা ও ঈদ পালন করে; কিন্তু দুর্গাপূজা, বৈশাখ পালন করে না। এ দলে কোনো হিন্দুধর্মী নেই। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক দলটি দুর্গাপূজা, বৈশাখ, ঈদ—সবই পালন করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, একদল আরেক দলকে ট্যাগ দিত, কে মুসলমান আর কে ভারতের দালাল। তবে দুই দলের কয়েকটি উৎসব উদ্‌যাপন করা ছাড়া অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য সৃজনশীল উদ্যোগ ছিল না। এর ভেতরে ছিল নতুন ছাত্রদের জন্য ছোটখাটো কাজের ব্যবস্থা করা, বাসস্থানের জন্য সহযোগিতা করা ইত্যাদি। এটি বলা ভালো যে এ দুই গ্রুপে একাডেমিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী সবাই আছেন। তারপরও আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও ছাত্রদের জন্য সৃজনশীল এবং স্বেচ্ছায় কার্যকরভিত্তিক কোনো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারি না!

আমি এখন থাকি কানাডার নিউ ব্রান্সউইকের মংটনে। এখানেও প্রাই ২০০ বাংলাদেশি পরিবার থাকে। এখানেও দুটি গ্রুপ। কারণ, কে নেতা হবেন? তাদেরও পিকনিক, ঈদ ও বৈশাখের বাইরে কোনো আয়োজন নেই। গতানুগতিক উৎসবের বাইরে আমরা বাংলাদেশকে কীভাবে মেধাভিত্তিক সমাজে পরিবর্তন করব, এ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। অনেকে পিকনিকের পেছনে হাজার হাজার টাকা খরচ করলেও দেশের গবেষণার দুরবস্থার কথা মাথাই রাখেন না। সবার জনপ্রিয় ধারণা সম্ভবত, বন্যা হলে দান করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতির অনেকটাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশের গ্রামের মেয়েরা দেশের প্রধান খাত পোশাকশিল্পকে বিশ্বের প্রধান বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ আমরা কানাডিয়ান উচ্চদক্ষতার নাগরিক হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা করছি! আমাদের শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি কেন এসব অভিজাতদের দেশপ্রেমিক সৃজনশীল যোদ্ধা বানাই না?

*লেখক: শাহিদা খানম, পিএইচডি, বোর্ড মেম্বার, প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন, কানাডা

*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]