প্রথম দেখা সিডনির ‘বন্ডাই’ সৈকত!
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রেখেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক অপূর্ব সৌন্দর্যের দৃশ্য। অস্ট্রেলিয়া, যার ভূখণ্ডের দিক থেকে সমুদ্রসৈকতের সংখ্যা অসংখ্য! প্রায় ১০ হাজার ৬৮৫টি সমুদ্রসৈকত রয়েছে এই মহাদেশে। কিন্তু এত সমুদ্রসৈকতের ভিড়ে কেন বন্ডাই বিচকে বেছে নিলাম, সে ঘটনাই আজ জানাচ্ছি।
সিডনি শহরে পৌঁছে যার সঙ্গেই দেখা, সবাই বলল, ‘বন্ডাই বিচ না দেখলে তোমার অস্ট্রেলিয়া দেখা অসম্পূর্ণ।’ কথাটা শুনতে শুনতে আর কৌতূহল ধরে রাখতে পারলাম না৷ হিসাব মেলাতে একদিন সকালে রওনা দিলাম বন্ডাই বিচের উদ্দেশে। সিডনি শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে এই বিচের অবস্থান শুনে সহজেই গুগল ম্যাপে এর ঠিকানা সেট করলাম।
বিস্ময়ের শুরু হলো সেখানেই। গাড়ির জানালা দিয়ে দেখতে দেখতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর মনে হচ্ছে, আমি এক ভিন্ন ইতিহাসের যাত্রী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাস্তাটি আমাকে বন্ডাই বিচে নিয়ে এল মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই। মনে হচ্ছিল যেন একটা জাদুকরি প্রাচীন কাহিনির মধ্যে ঢুকে পড়েছি।
বন্ডাই বিচে পা রাখতেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল সোনালি বালুর প্রশস্ত সৈকত এবং সেই প্রশান্ত নীল জলে। বাঙালি চোখে একে খুব প্রশস্ত না বলা গেলেও অস্ট্রেলিয়ার হিসেবে বেশ প্রশস্ত। বেশ রোদেলা অক্টোবরের দিন। কয়েকজন সার্ফার তাদের সার্ফিং বোর্ড নিয়ে সাগরের জলরাশির সঙ্গে যখন মিলেমিশে রয়েছে, তখন আমিও একটু চেষ্টা করে দেখলাম, সার্ফিং কীভাবে করে! একেবারেই সুবিধা করতে পারলাম না, তবে অবশ্যই সার্ফিংয়ের মজা এক আলাদা রোমাঞ্চ, যেটা সহজে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বন্ডাই বিচের ইতিহাসও আমাকে মুগ্ধ করেছিল। ১৯০৬ সালে এখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম লাইফগার্ড পেট্রল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ইতিহাস শোনার পর আমি লাইফগার্ডদের নিয়ে একটুখানি ইতিহাসের দরজা খুললাম। অবাক হলাম, কেননা এখানকার সিনেমা ও টেলিভিশন শোতেও বন্ডাই বিচ প্রচুর ব্যবহৃত হয়েছে।
বন্ডাই থেকে কুজি পর্যন্ত যে ক্যালকুলেটিং প্রমেনেড রয়েছে, আমি সেই রুট ধরে কিছুটা হাইকিংয়ের চেষ্টা করলাম। সেই হাইকিং ট্রেইল আমাকে আরও একরাশ রোমাঞ্চিত করল।
দিন শেষে আমি আছি বন্ডাই বিচের এক লাইভ মিউজিক ক্যাফেতে, সামনের তীর আর সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে এক অবিস্মরণীয় সুরের মেলবন্ধনে। বন্ডাই বিচের এই জীবন্ত, সোশ্যাল আর বিনোদনমূলক পরিবেশ আমাকে বারবার সেখানে ফিরে যেতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল।
এত সমুদ্রসৈকতের ভিড়ে বন্ডাই বিচ যে এতটা মনোমুগ্ধকর হতে পারে, তা না দেখলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না। আমার ভ্রমণকাহিনিতে ‘বন্ডাই বিচ’–এর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো সত্যি আমার জীবনের একটি চমৎকার অধ্যায়!
লেখক: সামিউল মাশুক এন্টনি
** দূর পরবাসে ছবি, লেখা ও ভিডিও পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। মেইল [email protected]