আত্মদান
কণ্টকসংকুল পথ পেরিয়ে ওই দেখো উড়িয়ে ধ্বজা এল বিজয়ের বেলা,
হারানো দিনের অজস্র ঝরা ফুল দিয়ে গেঁথেছি আমি আজ স্মৃতির মালা।
ভুলিনি আজও একাত্তরের সেই আতঙ্ক, সেই ভয়াল কালরাত্রি,
ভীতসন্ত্রস্ত আমরা সবাই হয়েছিলেম এক অজানা পথের যাত্রী।
আকাশে গর্জে গুলির শব্দ বাতাসে বারুদের তীব্র গন্ধ,
সবটুকু আলো নিভে গিয়েছিল সে রাতে সকল দুয়ার ছিল বন্ধ।
পাকিস্তানি সেনাদের সেই পৈশাচিক আক্রমণে বাঙালি হলো দিশাহারা,
স্বপ্নেও ভাবেনি কী ভয়ংকর চক্রান্তের শিকার হতে চলেছে ওরা।
নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকারে হানা দিয়ে করেছে তাণ্ডবলীলা,
নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির রক্ত দিয়ে উল্লাসে করেছে হোলি খেলা।
সেই অন্ধকারে জীবন–মরণের মাঝে দাঁড়িয়ে ভুলে গেছি আমি নিশ্বাস নিতে,
ভুলে গেছে মা কী করে যে কান্নারত শিশুটির কান্না হয় ভোলাতে।
রক্তের নদী বয়ে গেছে সেদিন বাংলা মায়ের পদতলে,
হাহাকার করে সন্তান তবু ক্রমাগত আহূতি দিয়ে চলে।
লুটিয়ে পড়ে মরণের কোলে একের পর এক বাঁচাতে মায়ের প্রাণ,
দেবে না যে কিছুতেই ওরা কেড়ে নিতে আজ মায়ের সম্মান।
সে রাত এসেছিল যেন অনন্তকালের হয়ে ফুরাবে না সে কোনো দিন,
প্রভাতের রাঙা সূর্য মুখ লুকিয়ে বিষাদে হয়েছিল মলিন।
দীর্ঘ নয় মাস টানা প্রতিবাদ আর ধ্বংসযজ্ঞের পাহাড় পেরিয়ে,
অবশেষে আশার আলো দেখতে পেল বাঙালি অগণিত প্রাণ হারিয়ে।
হেরে গেছে পাকিস্তানি সেনা উঠেছে বিজয়ের দীপ্ত রাঙা সূর্য বাংলার আকাশে,
বুকভরে তাই নিশ্বাস নেই আজ আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশে।
এ দেশের স্বাধীনতার ত্বরে দিয়ে গেছে যারা অমূল্য প্রাণ,
জানাই তাদের সালাম ভুলব না কোনো দিন সেই আত্মদান।