তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বাঙালিদের নিয়ে আয়োজিত ‘বাসাত গ্র্যান্ড ইফতার ২০২৪’

বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে ছোট হওয়ায় দীর্ঘকাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে ইউরোপ ও এশিয়ায় অবহেলিত জনগোষ্ঠীর একটি দেশ হিসেবেই গণ্য করা হতো। দীর্ঘকাল ধরে বিদেশিদের অনেকেই বাংলাদেশকে পরিপূর্ণ রূপে জানতে পারেনি যে বাংলাদেশ একটি সংস্কৃতিসমৃদ্ধ দেশ। যে দেশের রয়েছে স্বতন্ত্র ভাষা—স্বতন্ত্র সভ্যতা ও সংস্কৃতি।

দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্জনের মাধ্যমেই বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র পরিচয়। সে সঙ্গে বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেই স্বতন্ত্র সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ পেয়েছে, তা অনস্বীকার্য। ইউরোপ থেকে শুরু করে এশিয়া ও রাশিয়ার প্রায় সব দেশেই রয়েছে প্রবাসী বাঙালি।

প্রতি বছর বাংলাদেশের জাতীয় দিবস ও মুসলমানদের পবিত্র দিবস উপলক্ষে বিদেশে বসবাসরত বাঙালিরা রীতিমতো আয়োজন করে থাকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এসব আয়োজনে অংশ নেন বিদেশি মানুষও। এভাবেই বাঙালিরা গড়ে তোলেন বিদেশের মাটিতে এক টুকরা বাংলাদেশ। এমনিভাবে, ইউরোপ এশিয়ার মধ্যবর্তী দেশ তুরস্কে বসবাসরত বাঙালিদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন তুরস্ক’ বাসাত–এর পক্ষ থেকে সমগ্র তুরস্কে বসবাসরত সকল বাঙালিদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

ভৌগলিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া মাইনরের দেশ তুরস্ক। তুরস্ক একটি সংস্কৃতিক সমৃদ্ধশালী দেশ। শত বছর পৃথিবী শাসন করা দেশটির অটোমানের রাজধানী ইস্তাম্বুলে আয়োজিত হয় বাঙালিদের বিভিন্ন সামাজিক ও সংস্কৃতিক পোগ্রাম। দেশটিতে বসবাসরত বাঙালিদের সংগঠন-BASAT প্রতি বছর ঈদ এবং রমজানে ধর্মীয় ও সংস্কৃতির আয়োজন করে থাকে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে সংস্কৃতিতে ইউরোশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ তুরস্কেও ফুটে ওঠে পূর্ব এশিয়ার দেশ বাঙলার সংস্কৃতির প্রতিক চিত্রসমূহ।

গত রোববার (২৪ মার্চ) ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক ফাতিহ মসজিদের পাশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত হয় ‘বাসাত গ্র্যান্ড ইফতার ২০২৪’ শীর্ষক ইফতার অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো আয়োজনটি করে তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন তুরস্ক-বাসাত’।

বিদেশের মাটিতে দেশীয় খাবারের আয়োজন বিশেষ করে রমজানের ইফতার প্রবাসীদের জন্য সত্যিই দুষ্প্রাপ্য। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ যখন ছাত্রাবাসে থাকে তখন এটি আরও দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। তাই এই আয়োজন বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত।

বাসাত–এর সব সদস্যের নিরলস পরিশ্রমের ফলে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন হয় অনুষ্ঠানটি।

বাসাত গ্র্যান্ড ইফতার ২০২৪–এর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট ইস্তাম্বুলের সম্মানিত কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ নুরে আলম। এছাড়া ইফতার প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল ইস্তাম্বুলের ভাইস কনসাল ইউসুফ আলী ও তুরস্কের সরকারি স্কলারশিপ YTB ইয়েতেবে বুরসসলারির তত্ত্বাবধানকারী মন্ত্রণালয় ইস্তাম্বুল কো-অরডিনেটর এমরে ওরুচ। আরও উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের প্রবীণ ইতিহাস ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ইহসান সুরেইয়া সিরমা, তুরস্কে অন্যান্য বিদেশি ছাত্রদের সংগঠন UDEF, Bab e lem, TÜMED এবং তুরস্কের সবচেয়ে সুপরিচিত সনামধন্য সিভিল অর্গানাইজেশন TGVA, ADEV, TADD এর সভাপতি, প্রমুখ।

বাংলাদেশিদের ইফতার সংস্কৃতি ও আতিথিয়েতার অভিজ্ঞতা নিতে বাসাতের আয়োজিত ‘গ্র্যান্ড ইফতারে’ তুরস্কে অধ্যায়নরত প্রায় ৩৩টি দেশের শিক্ষার্থী অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিরাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি, তুরস্কে অবস্থানরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি অধ্যাপক, ব্যবসায়ী ও খ্যাতনামা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশিদের পরিবারসহ স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে প্রায় তিন শতাধিক অতিথিদের মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হয় গ্র্যান্ড ইফতার। ইফতারের পূর্বে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি এবং প্রধান অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা হৃদয় জুড়ানো কণ্ঠে বাঙলায় পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন হামদ-নাত। মুহূর্তেই গড়ে ওঠে তুরস্কের মাটিতে এক টুকরা বাংলাদেশ।

বাঙলায় নাত পরিবেশন করেন তুরস্কের প্রাচীন শহর কায়সেরীর এরজিয়েস ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন রনি। বাঙালি ছাত্রদের মাধ্যমে তুরস্কে বসবাসরত, চাকরিরত ও ব্যবসারত বাঙালিদের সন্তানেরা বাঙলা ভাষা ও সে ভাষার কবিতা নাত উপভোগ করতে পারছেন প্রবাসে বসে এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

‘বাসাত গ্র্যান্ড ইফতার ২০২৪’ অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন বাসাতের সভাপতি ওমর ফারুক হেলালী এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বাসাতের সাধারণ সম্পাদক নাসরুজ্জামান নাঈম।

  • লেখক: মাহমুদুল হাসান সুনান খান, শিক্ষার্থী, ইয়ুথ ইস্তাম্বুল ইবনে হালদুন ইউনিভার্সিটি