টোকিওতে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন

‘জাগো তুমি জাগো জাগো দুর্গা জাগো দশ প্রহরণধারিণী
অভয়া শক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো জাগো মা।’
শরৎ এলেই শুরু হয় ঠাকুর গড়া, মহালয়ার চণ্ডীপাঠ ও পিতৃপুরুষের তর্পণ, ষষ্ঠীতে দেবীর চক্ষুদান, তারপর সপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমীর পূজা।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে প্রতিবছরের মতো এবারও সর্বজনীন পূজা কমিটি, জাপান যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন করেছে। এবারের পূজা ছিল সর্বজনীন পূজা কমিটি, জাপান আয়োজিত ২৭তম পূজা। কোভিডের কারণে গত দুই বছর তেমন ধুমধাম করে পূজার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি, কেবল ঘটপূজার মাধ্যমে পূজার প্রথা সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই এবার যখন এখানে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিল না, তখন সবার প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। সবার মধ্যেই ছিল আনন্দের আতিশয্য। সবাই খুব উপভোগ করেছেন। নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে রাখার পর ছেড়ে দিলে যেমন আপন গতিতে চলার আনন্দে আত্মহারা হয়ে বয়ে যায়, তেমনই সবার মনের মধ্যেও আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছিল। স্বতঃস্ফূর্ত হয়েই সবাই অংশগ্রহণ করেছেন।
করোনা যদিও আমাদের ছেড়ে যায়নি, তবু এর মধ্যেই যতটা পারা যায় আমাদের সবকিছু করে যেতে হবে। গত দুই বছর শারদীয়া দুর্গোৎসবকে উৎসব হিসেবে নয়, দুর্গাপূজা হিসেবেই সাত্ত্বিকভাবে অনাড়ম্বর পরিবেশে উদ্‌যাপন করা হলেও এবার জাপান সরকার স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা শিথিল করায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগের মতোই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সকাল নয়টার দিকে টোকিওর কিতা ওয়ার্ডের উকিমা কুমিন সেন্টারে পূজারিরা এসে পৌঁছাতে শুরু করেন। তখন থেকে চলে পূজার তোড়জোড়। সবাই মিলে সাজিয়ে নেন পূজার বেদি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পূজায় পৌরোহিত্য করেন অমিতাভ ভট্টাচার্য। বোধন থেকে শুরু করে ষষ্ঠী পূজা, সপ্তমী পূজা, অষ্টমী পূজা, নবমী পূজা, দশমী পূজা নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। বেলা দুইটা নাগাদ অঞ্জলি দেওয়া হয়। ভক্তদের ভিড়ে বেশ কয়েকবার অঞ্জলির আয়োজন করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ, তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আবার ছিল তিনটি পর্ব। প্রথমে আলোচনা অনুষ্ঠান, তারপর ছোটদের অনুষ্ঠান, সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছোটরা বরাবরের মতো তাদের পরিবেশনার মাধ্যমে সবার মন জয় করে নেয়। পরিবেশনার মধ্যে ছিল ছড়া, গান ও নাচ। উপস্থিত কয়েকজন শিল্পীর মধ্যে চমৎকার গান পরিবেশন করেন সংস্কৃতা ভট্টাচার্য। আর ছিল উত্তরণ শিল্পীগোষ্ঠী, যারা তাদের গান দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিল উপস্থিত সবাইকে।

চমৎকার রোদঝলমলে দিনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত শাহবুদ্দিন আহমদ সস্ত্রীক পূজায় উপস্থিত হয়ে সবাইকে উৎসাহিত করেন। এ ছাড়া ছিলেন দূতাবাসের কাউন্সেলর পলিটিক্যাল শেখ ফরিদ।
করোনা সংক্রমণের আগের মতোই দেবীর বিসর্জনের পর মেয়েরা সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন। আর দেবীকে আসছে বছর আবার হবে বলে প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন।
এবারের পূজার অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সার্বিকভাবে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেছেন সর্বজনীন পূজা কমিটি, জাপানের উপদেষ্টা সুখেন ব্রহ্ম, শিবাজি দত্ত, সুনীল রায় ও বিমান কুমার পোদ্দার, সভাপতি ড. কিশোর কান্তি বিশ্বাস, সহসভাপতি ড. প্রসেনজিৎ ঘোষ ও ড. তপন পাল, সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার বর্মণ, সহসাধারণ সম্পাদক অঞ্জন দাস, ড. নন্দ দাস, বিকাশ চন্দ্র সাহা ও কানুগোপাল কুণ্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. অতনু সাহা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দেব, অনিন্দ্য রায়, পার্থপ্রতিম ঘোষ ও কিশোর পাল, কোষাধ্যক্ষ কৌশিক রায়, সহকোষাধ্যক্ষ দিলীপ কুমার কুণ্ডু ও গৌতম সাহা, প্রকাশনা সম্পাদক তনুশ্রী বিশ্বাস, সহপ্রকাশনা সম্পাদক শিখা ব্রহ্ম, অনীক সাহা ও প্রদীপ কুমার সাহা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ববিতা পোদ্দার, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক নীলাঞ্জনা দত্ত, সীমা রানী দাস, বিজয় সাহা ও পপি ঘোষ, কল্যাণ সম্পাদক মানিক চন্দ্র সাহা, সহকল্যাণ সম্পাদক অপু রায়, বাবুল পাল ও সুজন সাহা, মঞ্চসজ্জা সম্পাদক লিটন কুমার বর্মণ, সহমঞ্চসজ্জা সম্পাদক সুমন্ত মজুমদার, দেবকুমার বাগচী ও বিপুল কান্তি সাহা, প্রচার সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, সহপ্রচার সম্পাদক পঙ্কজ বণিক, কমল চন্দ্র দাস ও সজীব দাস। এ ছাড়া সহযোগিতা করেছেন ড. প্রদীপ কুমার রায়, সুশান্ত বাড়ৈ, উজ্জ্বল বণিক, বাপ্পা দত্ত ও মাইকেল দাস।
উপস্থিত ছিলেন জাপানে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক সংগঠনের নেতাসহ ধর্মনির্বিশেষে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকেরা।
*লেখক: প্রকাশনা সম্পাদক, সর্বজনীন পূজা কমিটি, জাপান