কোরিয়ান নববর্ষ ও নববর্ষের ইতিবৃত্ত

ছবি: সংগৃহীত

সল্লাল হলো কোরিয়ার নববর্ষ বা কোরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন (২২ জানুয়ারি)। কোরিয়ান ভাষার জাতীয় ইনস্টিটিউট অনুসারে কোরিয়ার নববর্ষের দিনটি চন্দ্র মাসের বা চন্দ্র নববর্ষের প্রথম দিন। নববর্ষের দিন, তার আগের দিন, পরের দিনসহ তিন দিনের ছুটি থাকে। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি শনি আর রোববার সঙ্গে থাকায় ছুটিটা অনেক সময় এক সপ্তাহ হয়ে যায়। কোরিয়ানরা উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসবটি পালনের জন্য তাদের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান। কোরিয়া ছাড়াও অন্য দেশের মানুষেরা একে লুনার নববর্ষ, চীনা নববর্ষ, কোরিয়ান নববর্ষ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কোরিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে এ নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়। চলুন কোরিয়ান নববর্ষ সল্লাল সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নিই।

কোরিয়ানদের কাছে সল্লাল

সল্লাল শব্দের অর্থ নতুন বছরের প্রথম দিন। তবে কোরিয়ান ভাষায় সল্লাল বলতে চন্দ্র নববর্ষ বা সোলার নিউইয়ার বোঝানো হয়। এটা কোরিয়াতে জাতীয় ছুটির দিন। ২০১৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত সাধারণ ছুটি এক দিন ছিল এবং আগে-পরেসহ মোট তিন দিন ছুটি থাকত। পরবর্তী সময় সরকারিভাবে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটি শনি ও রোববারসহকারে প্রায় পাঁচ দিনের ছুটি প্রতিবছরই কাটানোর সুযোগ পায় কোরিয়ানরা। অনেকে আবার বাৎসরিক ছুটি এর সঙ্গে যোগ করে পুরো এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে থাকেন। সাধারণত মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের প্রায় তিন ভাগ কোরিয়ান তাঁদের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায় পরিবারের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর জন্য। এর ফলে রাস্তাগুলোতে লম্বা আকারের ট্রাফিক জ্যামের দেখা মেলে। বাস, রেল, বিমান কোনোকিছুরই টিকিট অগ্রিম বুকিং না করলে টিকিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। অনেকে আবার এই ছুটিতে পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে ভ্রমণে যায়। তবে এই বৎসর করোনার জন্য এসব সুযোগ অনেকাংশে কমে গেছে। কোরিয়ানরা সল্লালে একে অপরের সঙ্গে উপহার আদান–প্রদান করে থাকে। কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের বিভিন্ন রকমের উপহার দিয়ে থাকে।

উপহার

সল্লালে একে অপরকে বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে থাকে। সাধারণত এ সময় কোরিয়ার দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের উপহারের সাজানো বাক্স পাওয়া যায়। বিভিন্ন ফল, পিঠাজাতীয় খাবার, সাবান, শ্যাম্পুসহ অন্যান্য কসমেটিকস এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস সুন্দর বাক্সে মোড়ানো থাকে। সাধারণত কোরিয়ার কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের বিভিন্ন রকম গিফট বক্স উপহার দেয় এবং সঙ্গে বোনাসও দিয়ে থাকে।

পোশাক

কোরিয়ানরা সাধারণত নববর্ষ উদ্‌যাপনের সময় তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানবোক পরেন। ঐতিহ্যবাহী পোশাকটি সাধারণত উজ্জ্বল লাল, গোলাপি বা কমলা রঙের হয়। তবে অনেক আধুনিক কোরিয়ান আধুনিক নতুন পোশাক পরেও উৎসবটি উদ্‌যাপন করে থাকে।

খাবার

সল্লালের বিখ্যাত খাবার হচ্ছে তকগুক। তক শব্দের অর্থ হচ্ছে পিঠা আর গুক শব্দের অর্থ হচ্ছে ঝোল। সাধারণত ময়দার রোলের মতো করে তৈরি করা রোল আর কেক কেটে চিকন চিকন করে সেটা দিয়ে একধরনের ঝোল তৈরি করা হয়। তারা বিশ্বাস করে, সাদা ময়দার তৈরি এ তক খেলে রোগবালাই মুক্ত হয়, অনেক দিন সুন্দর জীবন যাপন করা যাবে। এ ছাড়া অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি এবং খাবারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিখ্যাত খাবার রয়েছে—সানজক, তকখালবি, সীকহৈ এবং বিভিন্ন প্রকার মাংস।

খেলাধুলা অনুষ্ঠান

কোরিয়ার চন্দ্র নববর্ষের দিনে বিভিন্ন ধরনের খেলা বা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে বিখ্যাত খেলা হচ্ছে ‘ইউতনোরি’। ছোট লাঠি দিয়ে সহজ নিয়মে খেলা যায় এটি। পরিবারের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে এ খেলাতে অংশগ্রহণ করে। এ খেলার মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত হয় বলে কোরিয়ানরা বিশ্বাস করে থাকে। জেগি ছাগি নামের একধরনের খেলা রয়েছে ছোট্ট বলের মতো পা দিয়ে খেলতে হয়। ঘুড়ি ওড়ানো, এ ছাড়া পরিবারের সবাই একসঙ্গে মজার মজার গল্পের মধ্য দিয়ে একসঙ্গে ঘুড়ি উড়িয়ে উৎসবটি উদ্‌যাপন করে।

অবশ্যই পালনীয়

সল্লালের দিন সকালবেলা নতুন পোশাক পরে বাড়ির মুরব্বিদের সেজদা করার মতো করে সালাম করতে হয়। তখন মুরব্বিরা তাঁদের সন্তান বা নাতি–নাতনির জন্য দোয়া করে দেন, যেন তারা ভালো থাকে। ‌সাধারণত শিশুদের হাতে এ সময় নতুন টাকা বা সালামি দেওয়া হয়। সল্লালের আগের দিন পূর্বপুরুষদের কবর পরিষ্কার করা এবং সল্লালর দিনে তাদের জন্য প্রার্থনা করার মতো ঐতিহ্য কোরিয়ায় প্রচলিত রয়েছে।

কোরিয়ার বাইরে সল্লাল

দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে এ চন্দ্র নববর্ষ পালন করা হয়। যে দেশগুলোতে পালন করা হয়, সেগুলো হচ্ছে— উত্তর কোরিয়া, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, হংকং, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।