প্রবাসের বাংলাদেশি দুর্গাপূজা সুইজারল্যান্ডে
প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজিত হতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের দুর্গাপূজা। দেখতে দেখতে ১৭ বছর পার হয়েছে সুইজারল্যান্ডে দুর্গাপূজা উদ্যাপন। এখানে দুর্গাপূজা উদ্যাপনের মূল উদ্দেশ্যই হলো প্রবাসে থেকেও দেশের সংস্কৃতিকে ছুঁয়ে থাকা এবং বিভিন্ন উৎসবের হাত ধরে বাংলাদেশি ঐতিহ্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের সময়েও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী সব বাঙালিকে একত্র করে দুর্গা টেম্পল কমিটি।
কজন বাঙালি জানে যে বাংলাদেশের বাইরে রীতিমতো ঘটা করে তিথিমতো রীতিনীতি মেনে ফুল বেলপাতা, তুলসীপাতা, আম্রপল্লব, সদ্য ফোটা পদ্মফুল, চন্দন দিয়ে এই শীতপ্রধান দেশে গত ১৭ বছর দুর্গাপূজা উদ্যাপন করে যাচ্ছে দুর্গা টেম্পল। এ যেন প্রবাসে এক টুকরা বাংলা। নতুন প্রজন্মকে হাজার বছরের বাংলার কৃষ্টি ঐতিহ্য পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এ প্রচেষ্টা দুর্গা টেম্পল করে যাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে। দুর্গোৎসব এখন আর সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির উৎসব নয়, সেটা এখন সর্বজনীনতা, বিশ্বজনীনতা অর্জন করেছে। ২৮ সেপ্টেম্বর হতে ২ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী বিভিন্ন মন্দির ও সংগঠন পূজার আয়োজন করছে। প্রবাসের পূজা বেশির ভাগ সময় অনুষ্ঠিত হয় সপ্তাহের কর্মদিবসে এবং উদ্যাপন করা হয় সপ্তাহান্তে। প্রবাসের পূজা মানে একে অন্যের সঙ্গে দেখা, মতবিনিময়, আনন্দ উদ্যাপন। প্রবাসের পূজার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কে কার চেয়ে সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দেয়, তার এক প্রতিযোগিতা হয় এ শারদ উৎসবে।
পূজার শুরু কবে ও কোথায়
সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি বাঙালিদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা শুরু হয় ২০০৮ সালে। সে বছর থেকে নিয়মিত দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাঙালিরা এখানে এসে প্রতিমা দর্শন, অঞ্জলি প্রদান করেন। পূজা হয় বৈদিক মতে, এবার তিথিমতো ২৮ সেপ্টেম্বর হতে ২ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা হবে।
প্রতিমা
মন্দিরে গত বছরের প্রতিমা রেখে দেওয়া হয়েছে এবারের পূজার জন্য। গত বছর কলকাতা থেকে প্রতিমা আনা হয়েছে। শোলার মূর্তি নির্মাণ করেছেন কলকাতার প্রাচীন ও স্বনামধন্য অমরনাথ ঘোষ অ্যান্ড সন্সের শিল্পী কৌশিক ঘোষ।
পূজার নির্ঘণ্ট
তীথিমতো ২৮ সেপ্টেম্বর দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। শাস্ত্রীয় মতে ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী ও ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজয়া দশমী উদ্যাপনে সিঁদুর খেলা, একে অপরের ভেদাভেদ ভুলে আলিঙ্গনাবদ্ধ হওয়া, মিষ্টি বিতরণ চলবে।
পূজার বৈশিষ্ট্য
সর্বজনীন দুর্গাপূজা সুইজারল্যান্ড মন্দিরে হয়। এটি জুরিখের মাঝখানে অবস্থিত এবং খুব সুন্দর লোকেশন। দুই বাংলার বাঙালি সুইজারল্যান্ডবাসী এ দুর্গাপূজায় আনন্দ উপভোগ করতে এখানে আসেন। সন্ধ্যায় আরতি পুরোপুরি দেশীয় আদলে হয় বলে এ দৃশ্য দেখার জন্য দূর–দূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে আসেন। কারণ, এই আবেগঘন মুহূর্তে মনে হয় না আমরা প্রবাসে আছি। মনে হয় যেন সেই পাড়ার মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা আরতি উপভোগ করছি।
পূজার ভোগ
পুরোপুরি আচার মেনে মায়ের ভোগ রান্না করা হয় ও রকমারি ভোগ দেওয়া হয়। ভাত, পঞ্চব্যঞ্জন, বিভিন্ন ধরনের ভাজা, তরকারি, খিচুড়ি, পায়েস, লুচি, সন্দেশ, নাড়ু, মিষ্টি, দই এবং বিভিন্ন জাতের ফলফসারি দিয়ে দেবতার ভোগ দেয়া হয়।
পূজার আকর্ষণ
আগামী ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গানের সুর আর নৃত্য। এসবর ব্যস্ত নগরী থেকে নিয়ে যাবে আমাদের সেই স্নিগ্ধ মায়াময় গ্রাম বাংলায়, যেখানে আমরা কাটিয়েছি শৈশব, কৈশোরকাল। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সবাইকে নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসবে। পূজা উপলক্ষে ২ অক্টোবর থাকছে ভক্তিমূলক গান, নৃত্য, রম্য শ্রুতিনাটক, কবিতা আবৃত্তি, কৌতুক নকশা, অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনা। পূজার ৪ দিন দুই বেলা ফ্রি নিরামিষ খাবার এবং দশমীতে আমিষ খাবার পরিবেশন করা হয়।
পূজার স্থান/উদ্যোক্তা
সার্বজনীন দুর্গাপূজা সুইজারল্যান্ড কমিটি কাঁশলাইস্ট্রাসে ১৬১, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]