চিত্রা তোমায় এই প্রবাসে খুব মনে পড়ে

চিত্র নদীর

চিত্রা! প্রিয়া জানো, আমি কাজ থেকে বা শহর থেকে যে পথে বাড়ি আসি, সেখানে ঠিক অনেকটা তোমার মতো কেউ আছে। সেও হেলেদুলে চলে, বায়ুর ঘোমটা পরে, খোঁপায় শাপলা ফুল, কেউ যখন তার চলার পথ আটকে দেয়, থমকে দাঁড়ায়—হংস আর মৎস্যের সঙ্গে খেলা করে, আবার কলকল করে সামনে চলে আপন গতিতে ঠিক তোমার রূপে। তখন অপলক তাকিয়ে তাকে দেখি আর তোমায় ভাবি। শৈশব, কৈশোর, যৌবনের কিছুটা বেলা তোমার শান্ত–শীতল ছোঁয়ায় ক্লান্তি কমিয়েছি। শাণবাঁধানো ঘাটে তোমার শরীরের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে যখন বুকে টেনে নিতে, নিশ্চুপ হয়ে হারিয়ে যেতাম তোমার মধ্যে। এমনকি মাঘের শীতে কাকডাকা ভোরেও তোমার পরশ নিয়ে ঢাকার সকালের বাসটি ধরতাম। আজও তোমায় এই প্রবাসে খুব মনে পড়ে।

শুনলাম ও কাগজে দেখলাম, তোমার গলা কেটে, তোমার তুলতুলে শরীরে বসতি করেছে। যারা তোমাকে যৌবনে পায়নি, শুধু তাদের লোলুপ দৃষ্টি তোমাকে বিরক্ত করেছে। আমিও তোমার মতো অনেকটা বুড়ো হয়েছি, তবু তোমায় ভালোবাসি। আর তুমি হয়তো কাগজে বা টেলিভিশনে দেখেছ, যার মাধ্যমে তোমার–আমার প্রেমপর্ব শুরু, সে না–ফেরার দেশে চলে গেছে। যখন দেশে যেতাম, প্রায়ই বলত, চল না ভাই! তোর চিত্রার কাছে যাই একবার। সময়ের জন্য যাওয়া হয়নি। আর হবেও না হয়তো।

আর আমি তোমাকে চিনলেও তুমি আমাকে চিনবে না। তোমার শরীরের সুবাস, নীল রং দেখে দেখে ঠিকই চিনে ফেলব। কিন্তু হয়তো বুকে নিতে দেবে না, যারা তোমার বুকে গড়েছে অট্টালিকা। বর্ষা এলে একবার তোমায় শেষ দেখা দেখে আসব প্রিয়াতমা চিত্রা।

আমার এ প্রেমিকা নড়াইলের চিত্রা নদী। চিত্রা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নড়াইল ও গোপালগঞ্জের একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৩ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক চাটখালী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নম্বর ৩৪। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে প্রবাহিত গঙ্গা-পদ্মার একটি বিশাল উপকূলীয় নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার। চিত্রা নদীটি চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনার নিম্নস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নড়াইল, কালিগঞ্জ, মাগুরার শালিখা ও কালিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গাজীরহাটে নবগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলেছে এবং এর মিলিত স্রোত খুলনার দৌলতপুরের কাছে ভৈরব নদীতে মিশেছে। একসময় চিত্রা নদী অত্যন্ত খরস্রোতা থাকলেও বর্তমানে কতিপয় প্রাকৃতিক কারণ, কালভার্ট নির্মাণ ও মূলত দখলদারির কারণে তা মৃতপ্রায় হয়ে রয়েছে। অব্যবহারযোগ্য পানি ধারণকারী এ নদী দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে বটে। নদীটি রক্ষা করা হোক, এটাই দাবি।