খুব জানতে ইচ্ছে করে!

আগস্ট শোক, বেদনা ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত ইতিহাসের এক ভয়ংকর মাস। তবু এ মাসে হারানোর শোকে কাতর, নিস্তব্ধ, মর্মাহত না হয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজ পরিবার এবং সোনার বাংলা বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করে যেতে চাই এবং সেটা হতে পারে নানাভাবে।

রাজনীতি করি মানে দুর্নীতি বা অনীতি করতে হবে তা নয়, রাজনীতি অর্থ সেবা করা এবং সেটা জনগণের জন্য হতে হবে। জনগণ যাঁকে এ দায়িত্ব দেবেন, তাঁকেই সেটা পালন করতে হবে। একজন সত্যিকারের রাজনীতিবিদের কাছে রাজনীতি একটি পেশা এবং সেবা করার নেশা। তাঁর মধ্যে থাকবে প্যাশন বা গভীর আবেগ, দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা এবং অনুপাতসম্পর্কিত জ্ঞান।

রাজনৈতিক নেতার সামনে একটি ‘কারণ’ থাকতে হবে। তাঁকে শুধু ক্ষমতার জন্য বুভুক্ষু থাকলে হবে না। একজন রাজনৈতিক নেতার থাকতে হবে নৈতিক মেরুদণ্ড এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা। এর সঙ্গে যখন বিচার করার যোগ্যতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা যুক্ত হবে, তখনই একজন রাজনৈতিক নেতা ইতিহাসের চাকার দিকপরিবর্তনের সক্ষমতা অর্জন করবেন।

মহৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নেতা হবেন বাস্তববাদী। এ কৌশলে দারিদ্র্য হ্রাস, মানব উন্নয়ন, টেকসই বিনিয়োগ, নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং মানবাধিকার উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত করবেন। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহনশীলতা ও বিজ্ঞানসচেতন করে জনগণকে গড়ে তুলতে সব ধরনের সুশিক্ষামূলক পদক্ষেপ নেবেন, যাতে করে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার।’

আমাদের সমাজে তথা বাংলাদেশে রাজনীতি বাপ-দাদা, চৌদ্দ গোষ্ঠীর পৈতৃক সম্পদে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি হয়েছে কাইন্ড অব হেভি ইনভেস্টমেন্ট ইনস্টিটিউশন, যেখানে রয়েছে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে পদবি দখল করার প্রবণতা (যেকোনো মূল্যে)। তারপর চলছে শাসন ও শোষণ। এখানে রাজনীতিতে ইনভেস্ট করব আর আয় করব না?

যদি দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঠিক চর্চা হতো, যদি সুশিক্ষা এবং নৈতিকতা বলে কিছু থাকত, তাহলে গণতন্ত্রের পতন হতো বলে মনে হয় না। এখন যদি সত্যিকারের গণতন্ত্রের ভালো চর্চা শুরু করতে হয়, তাহলে প্রথমত জানতে হবে, রাজনীতি কী।

দ্বিতীয়ত, সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও অনেক মন্ত্রীর বক্তব্যের ফলে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী, সমর্থক শুভাকাঙ্ক্ষীরা যে বিব্রত, সেটা সংবাদপত্র আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃষ্টি দিলে সহজেই বোঝা যায়।

বর্তমানে দেশের মন্ত্রীদের কথাবার্তা শোনার পর মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে, একটি নতুন আইন পাস করা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে মাঝেমধ্যেই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছেন। আলোচনার পাশাপাশি হয়েছেন সমালোচিতও।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ আজকের নয়, বহু আগের। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দেওয়ার সংস্কৃতি আমাদের বহুদিনের। রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা বদলে জনগণের ওপর নয়, মূলত নির্ভর করছেন বিদেশি শক্তির ওপর। গত ৫১ বছরে দেশের ভেতর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী না করে দুর্বল করে নিজেরাই জলাঞ্জলি দিয়েছে নিজেদের মর্যাদা। মানসিকভাবে নেতা–কর্মীদেরও পঙ্গু করে ফেলেছে নিজেদের অজান্তেই রাজনৈতিক দলগুলো। গণতন্ত্রের জন্য তাই রাজপথে রক্ত এখন আর কেউই দিতে চায় না।