যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের রমজান ও ইফতার যেভাবে

বিশ্বে মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ মাসে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে মুসলিম উম্মাহ সিয়াম সাধনা করে থাকেন। রমজান মাসকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস হিসেবে ধরা হয়। এটি শুধু একটি পবিত্র মাস নয়, বরং মুসলিমদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিরা রমজান মাসকে গভীর ধর্মীয় অনুভূতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুযায়ী পালন করেন। এখানে রমজান একটি মিলনমেলার সময় হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড একে অপরের সঙ্গে মিশে যায়। যুক্তরাজ্যের ব্যস্ত জীবনযাত্রা ও কাজের চাপ সত্ত্বেও, রমজান মাসে তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের রুটিন কিছুটা পরিবর্তন করেন। রোজা রাখা, ইফতার আয়োজন, তারাবিহর নামাজ আদায় ও সাহ্‌রি তাঁদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

রমজানে তারাবিহ ও কোরআন খতম

মুসলিমরা রমজান মাসে কোরআন খতম করার অংশ হিসেবে মসজিদে গিয়ে তারাবিহর নামাজ আদায় করেন। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এখানে দুই শিফটে কাজ চলে সকাল ও বিকেলে। ফলে কর্মজীবী মানুষের সুবিধার্থে তারাবিহর নামাজ দুই শিফটে আদায় করা হয়। প্রথম জামাত সাধারণত এশার নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয়, আর যাঁরা দ্বিতীয় শিফটে কাজ করেন, তাঁদের জন্য পরে মধ্যরাতে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এখানে একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, তা হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ বাংলাদেশে যেখানে রমজান মাসে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় অথচ এখানে বড় বড় সুপারমার্কেট ও হাইপারমার্কেটগুলো রমজান উপলক্ষে খাবারের আইটেমে বিশেষ ছাড় দেয়। রমজানের এক–দুই মাস আগে থেকেই এই বিশেষ ছাড় শুরু হয়।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ইফতার ও সাহ্‌রি

এখানে রমজান মাসে ইফতার ও সাহ্‌রির আয়োজন একটি বিশেষ সামাজিক অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে। মুসলিমরা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে একত্র হয়ে ইফতার করেন। মসজিদগুলোতে ইফতার মাহফিল ও বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনগুলো ইফতার আয়োজন করে থাকেন। অনেক বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় রমজান উপলক্ষে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ পোস্টারিং করা হয়। বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলোতে নানা পদের বাহারি ইফতার আয়োজন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। খেজুর, ফল, ছোলা, পোলাও, মাংস, মিষ্টি, কাবাব, চপসহ ইফতারির ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি বাংলাদেশি খাবারেরও আয়োজন থাকে, যেমন ভাত, খিচুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজু, জিলাপি, নিমকি, হালিমসহ অন্যান্য দেশি খাবার।

সামাজিক ঐক্য ও সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ

যুক্তরাজ্যের মুসলিম সমাজে রমজান মাসে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের ঐক্য দেখা যায়। এখানে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা সাধারণত কাজ শেষে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ইফতার করেন। অনেক পরিবার নিজেদের ঐতিহ্য বজায় রেখে দেশি রান্না করেন, আবার কিছু পরিবারে বাহ্যিক সংস্কৃতির সংমিশ্রণও লক্ষ করা যায়। এই মিশ্রণ বাংলাদেশের স্বাদ ও স্থানীয় ব্রিটিশ সংস্কৃতির একটি সুন্দর সংমিশ্রণ তৈরি করে।

রমজান মাসে শহরের পরিবেশ

যুক্তরাজ্যে রমজান মাসে শহরের রাস্তায় ইফতারের সময় প্রায় শূন্যতা দেখা যায়, কারণ, সবাই ইফতার প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। তবে সন্ধ্যার পর শহরের রাস্তায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

সাহ্‌রি ও রাত্রিকালীন ইবাদত

রাতের সাহ্‌রি ও তারাবিহর নামাজের পর মসজিদ, ক্যাফে ও রেস্তোরাঁগুলোতে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। অনেকেই সাহ্‌রি খেতে বাইরে বের হন, তবে বেশির ভাগ বাংলাদেশি পরিবার নিজেদের বাসায় সাহ্‌রি প্রস্তুত করে খেয়ে থাকে।

যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি মুসলিম সম্প্রদায় রমজান মাসে একটি গভীর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য অনুভব করেন, পাশাপাশি এটি তাঁদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে। রমজান মুসলিমদের মধ্যে এক মহান ঐক্য ও সমাজের প্রতি এক অপরিহার্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে, যা তাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।