মা, এক অদ্ভুত ভালোবাসার নাম

সন্তানের সঙ্গে মা। ছবি: এআই/প্রথম আলো

মা, এই ছোট্ট শব্দটির মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে অশেষ মমতা, ত্যাগ, সহানুভূতি ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। পৃথিবীর সবকিছুর আগে যে মুখটি মনে পড়ে, বিপদে–আপদে যে নামটি হৃদয়ে আলো জাগায়, তিনি হলেন মা। মা শুধু একজন মানুষ নন, তিনি এক অনুভূতি, এক আশ্রয়, এক জীবন্ত আশীর্বাদ। শৈশবে যখন আমরা হাঁটতে শিখি, তখন প্রথম হাত ধরেন মা। রাত জেগে আমাদের ঘুম পাড়িয়ে, অসুস্থ হলে দিন–রাত এক করে যত্ন নেওয়া—এসবের কোনো কিছুরই হিসাব চান না তিনি। তাঁর ভালোবাসা কখনো শর্তসাপেক্ষ নয়। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মা আমাদের নিরাপদ ছায়া হয়ে থাকেন। মা শুধু ঘরের কাজই করেন না, তিনি একটি পরিবারের মেরুদণ্ড।

সন্তানের হাসিতে যেমন তাঁর হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে, তেমনি সন্তানের কষ্টে তিনিই সবচেয়ে বেশি কাঁদেন। মায়ের তুলনা হয় না, তাঁর বিকল্প নেই। বর্তমান ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেক সময় মায়ের অবদানের কথা ভুলে যাই। কিন্তু প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও মাকে জানানো উচিত, তিনি আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মা নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন, তা শেষ হওয়ার নয়। মা হলো সেই অনন্য মানুষ, যাঁর ছায়ায় আমরা সবচেয়ে নিরাপদ। তাই মাকে ভালোবাসা, সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানোই আমাদের কর্তব্য।

মা শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক জীবন্ত অনুভব, এক চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক। পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মা দিবসের ইতিহাস। মা দিবস পালনের পেছনে রয়েছে একটি সুন্দর ইতিহাস। আধুনিক মা দিবসের সূচনা হয় আমেরিকায়, একজন নারীর প্রচেষ্টায়—তিনি ছিলেন আনা জার্ভিস। ১৯০৮ সালে তিনি তাঁর প্রয়াত মায়ের স্মৃতিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং এই দিনটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেন। এরপর ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে মা দিবস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

লেখকের সঙ্গে তাঁর মা ও বড় ভাই
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

আজকাল আমরা নানা উৎসব ও দিবস পালন করি। মা দিবসও তেমনই একটি বিশেষ দিন। তবে অনেকেই ভুলে যান, মা শুধুই এক দিনের জন্য ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখেন না। মা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পাশে থাকেন—আমাদের হাসি, কান্না, ব্যথা, ক্লান্তি সবকিছুতেই। তাঁর ভালোবাসা সারা বছরের, তাই তাঁকে ভালোবাসাও হোক সারা জীবনের। মা দিবস কেবল আমাদের মনে করিয়ে দেওয়ার একটি উপলক্ষ, কিন্তু ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রতিদিনের কাজের মাধ্যমেই প্রকাশ পেতে হবে। প্রতিদিন একটু খোঁজ নেওয়া, পাশে থাকা, শ্রদ্ধার চোখে দেখা, এটাই হবে মায়ের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার পরিচয়।

‘দূর পরবাস’–এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]

মা শুধু একজন নারী নন, তিনি একজন শিক্ষক, পথপ্রদর্শক, প্রেরণা ও আত্মার আশ্রয়। মা দিবসের মাধ্যমে আমরা তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জানাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শুধু একটি দিন নয়, প্রতিটি দিনই হোক মা দিবস। কারণ, মা তাঁর ভালোবাসা কোনো নির্দিষ্ট দিনে নয়, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে আমাদের জন্য বিলিয়ে দেন। মা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, মায়ের মুখে হাসি ফোটানো, তাঁকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় আগলে রাখা। কারণ, মা, তিনি শুধু একজন মানুষ নন, তিনি এক অনুভব, এক জীবন্ত আশীর্বাদ।