ঐন্দ্রিলার চলে যাওয়া আর সব্যসাচীর প্রেম রূপকথার গল্প হয়ে থাকবে

সব্যসাচী ও ঐন্দ্রিলা
ছবি: সংগৃহীত

কাকে নিয়ে লিখব! ঐন্দ্রিলা শর্মা, নাকি সব্যসাচী। তাঁরা দুজনই শিল্পী, ওপার বাংলার। ছোট পর্দার বড় মানুষ। বড় মানুষ বলতে আমি বড় হৃদয়ের কথা বলছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক দিন আগে সব্যসাচী সবাইকে অনুরোধ করেছিলেন, ‘অলৌকিক’ একটা কিছু ঘটার জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে। সবাই প্রার্থনা করেছিলেন।

সবাই আশা করেছিলেন, ঐন্দ্রিলা আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু না, এ যাত্রায় আর তাঁর ফেরা হলো না। এর আগে দুইবার তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন। ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ঐন্দ্রিলা। বিগত কয়েক দিনে বার কয়েক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এরপর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। অবশেষে লড়াই শেষে মাত্র ২৪ বছর বয়সে ২০ নভেম্বর অমৃতের পথে যাত্রা করেন।

ঐন্দ্রিলা গত ৩১ অক্টোবর শেষবারের মতো  লিখেছিলেন, ‘সব্যসাচী, আমার বেঁচে থাকার কারণ।’ আর সব্যসাচীর হৃদয়জুড়ে ছিলেন ঐন্দ্রিলা। ঐন্দ্রিলা আর সব্যসাচীর প্রেম যেন এক রূপকথার কাহিনি। ঐন্দ্রিলার ক্যানসার হওয়ার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্ত ছায়ার মতো পাশে ছিলেন সব্যসাচী। সাহস জুগিয়েছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন, আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ঐন্দ্রিলা। তাঁদের প্রেমকাহিনির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে দুই বাংলায়। এপার-ওপার দুই পারের প্রায় প্রতিটি দৈনিকেই ঐন্দ্রিলার সর্বশেষ অবস্থার সংবাদ প্রচার করে। প্রবন্ধ ছাপে ঐন্দ্রিলা আর সব্যসাচীর রূপকথার প্রেমের গল্পের। তাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসার গল্পে সয়লাব হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

ঐন্দ্রিলার মৃত্যু এবং সব্যসাচীর ত্যাগ ও ভালোবাসা এ সমাজকে একটা বার্তা দিয়ে গেল, এখনো মানুষ মানুষের জন্য অনেক কিছু করে, করতে পারে। দুঃসময়ে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাঁদের প্রেমের ঘাত, প্রতিঘাত ও লড়াইয়ের কথা, অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলার চলে যাওয়া নিয়ে ফেসবুকে চলছে আহাজারি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘মারণ রোগের বিরুদ্ধে অদম্য মনোবল নিয়ে ঐন্দ্রিলা শর্মা যেভাবে লড়াই করেছেন, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর ট্র্যাজিক প্রয়াণ অভিনয়জগতের এক বড় ক্ষতি। আমি ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় টুইট করে লিখেছেন, ‘ভালো থেকো ঐন্দ্রিলা, তোমার ইচ্ছাশক্তি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুক।’ চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘মেনে নিতে পারছি না। যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস। তোকে এবং তোর কাজকে আমরা সবাই মিস করব।’

এস দিনা আফরোজ লিখেছেন, ‘কেউ একটা এমন থাকা উচিত অর্থহীন, নামহীন, শুধু গভীরে গভীরতায় ডুবে থাকবে। তবু থাকবে সম্পূর্ণতায় কোনো প্রকার পূর্ণতা ছাড়া। এই পৃথিবীতে এইভাবে থাকাটা কেউ মানে না অথচ এটাই ভালোবাসা...ঐন্দ্রিলা ভালো থাকুক ওপারে।’

শৌভিকের একটি লেখা কপি করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তীর্থ ঠাকুর, ‘প্রেমিক মানেই কি শুধু সিনেমাটিক হিরো হয়? ভিলেন শ্বশুর অমরেশ পুরির থেকে ছিনিয়ে আনবে তার প্রেয়সীকে! ব্যস হ্যাপি এন্ডিং? প্রেমিক হলে সব্যসাচীর মতো হও। শেষবিন্দু অবধি লড়াই করবে আদিম অলৌকিক শক্তির সঙ্গে। প্রিয় মানুষটাকে যমের থেকে ছিনিয়ে আনার জোর কজনের আছে? জিততে পারেননি সব্যসাচী, কিন্তু প্রমাণ করেছেন ভালোবাসা আর যা-ই হোক, তাসের ঘর নয়। বেঁচে থাক এই ভালোবাসা শতাব্দীর পর শতাব্দী। প্রেমের উদাহরণ হিসেবে থেকে যাক সব্য-ঐন্দ্রিলার অকাল্পনিক উপন্যাস। ঈশ্বরের হাতে লেখা শ্রেষ্ঠ মাস্টারপিস।’

ঐন্দ্রিলা
ছবি: সংগৃহীত

একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘ব্যস্তজীবন’ লিখেছে, ‘কে বলল কোনো ম্যাজিক কাজ করেনি? একটা মানুষের অকালে চলে যাওয়া একটা গোটা প্রজন্মের মধ্যে যেন স্বজন হারানোর শোক, এটাই তো ম্যাজিক। ভালোবাসার ম্যাজিক...একটা ২৪ বছরের মেয়ে নিজে চলে গিয়ে একটা গোটা প্রজন্মকে শিখিয়ে গেল লড়াই করা কাকে বলে, এ মায়া, এ ম্যাজিক কোনোটাই এত সহজে কাটার নয়..।’