পার্থ, তুমি আছ বিটপীলতায়

দুর্গাপূজায় সপরিবার তোমার অংশগ্রহণ এখনো জ্বলজ্বলে

প্রিয় পার্থ,
তুমি নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলে, আমি নেই। এই না থাকাটা ছিল বিস্ময়ের। কল্পনার আদলে প্রিয়জনকে সাজিয়ে আনন্দে আত্মহারা হওয়া। কিন্তু আজকের এ না থাকাটা চরাচর পর্যন্ত মেনে নেয়নি। এ জন্য তৎক্ষণাৎ প্রতিধ্বনি হলো, আমরা মানি না। মানে তুমি আমাদের সঙ্গেই আছ। তুমি আছ রজনীকান্তের অনল অনিলে, চির নভোনীলে, ভূধর, সলিলে, গহনে।

সেদিন দেখলাম অন্তরাল থেকে তুমি শব্দমালা গেঁথে পিঠা উৎসবে বাগিচায় দাঁড়িয়ে। দিচ্ছ ঘাস গালিচায় ভালোবাসার বয়ান। কোলাহলের অংশীদার হয়ে পিঠা সংস্কৃতির ব্যাখ্যা তোমার চেয়ে আর কে ভালো দিতে পারে! তুমি বলছ, এ প্রবাসে পিঠা আয়োজন নতুন প্রজন্মের জন্য এক বড় পাওয়া। তারা বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছে। নিচ্ছে চমৎকার সব পিঠার স্বাদ। ছোটদের প্রতিনিধি মিথি তখন আনন্দ চিত্তে শুনছিল সে মধুর বচন।

তোমার এ প্রাণমাখা কথা, এ পথ এ সবুজ প্রান্তর এই নারী এই শিশু শুনবে অনাদিকাল।

দুর্গাপূজায় সপরিবার তোমার অংশগ্রহণ এখনো জ্বলজ্বলে। স্বয়ং মহাদেব মা দুর্গাকে ত্রিশূল প্রদান করেছিলেন। এ ত্রিশূল দিয়েই মহিষাসুরকে বধ করেন তিনি। মিতা কুন্ডুর হাতে তখন প্রতীকী সেই মারণাস্ত্র। তোমরা সেটা পরীক্ষা করছিলে। আর বন্ধুরা তা নিয়ে একটি পথনাটক তৈরি করে ফেললে। তানিয়া ধর বলেন, দেবী দুর্গা ছুটছেন। পাশে তুমি। তাঁরা মানেন মহাদেব। বলেন, এই তো এখনই হস্তান্তর হলো রাবন বধের মহাস্ত্র।
বাণী অর্চনার এ শুভ লগ্নে বড় বেশি মনে পড়ে তোমাকে। শুধু মনেই পড়ে না, তোমার অস্তিত্ব খুঁজে পাই নল খাগড়ার কলম তৈরির প্রাক্কালে। মণ্ডপের ভিড়ে, জয় জয় দেবী, চরাচর সারে’র অঞ্জলি প্রদানকালে।

দায়িত্ববান এক তরুণের প্রতীক তুমি। আত্মীয়স্বজনকে নিয়েই নির্মাণ করেছ নিজ বা পরিবারের ভালো থাকার সমাচার। প্রিয় এক বউদি লাকি হালদার উল্কার সঙ্গে মতবিনিময় হতো সংসার-সমাজ নিয়ে। একজন ঘরে আর আরেকজন সড়কে। এ আলাপ ছিল মাইলের পর মাইলের সমান। যেখানে গন্তব্য শেষ সেখানেই বাণীর যবনিকা। একদিনকার তোমার তত্ত্ব: ‘মায়েদের কখনও চিকিৎসা হয় না।’ হবে কীভাবে? তারা সন্তান বা সংসারের কথাই চিন্তা করবে নাকি নিজের? তোমার এ তত্ত্বকথা উদ্ধৃতি করার মতো। ওই নারীরই বক্তব্য, সেটা হতে পারে কালের পুরাণ।

পৃথা বা কুন্তী দেবীর পুত্র পার্থ। পঞ্চ পাণ্ডবের অর্জুন। তুমি তার সঙ্গে তুলনার বলেই পার্থ প্রতিম। কুরুক্ষেত্রে নয় আবুধাবির সড়কে অর্জুনের সারথি হয়ে দিগ্‌বিদিক ছুটেছ তুমি। নির্মাণ করেছ সাফল্যের কাহিনি। সুখ-সাবধানী মনে হয়েছে তোমাকে এ কথা ঠিক। তবে তা চারপাশের মানুষকে নিয়ে।

পার্থ প্রতিম নিজের কন্যা মিথিকে নিয়ে কী বুনন তাঁর

মুখে ছিল অনাবিল হাসি। অন্যকে সাহায্য-সহানুভূতি দিয়ে মানুষ যে মনেপ্রাণে কতটা নির্ভার থাকতে পারে, সে সত্যটির উদাহরণ তুমি নিজে। তাই তো একটা সময়ের পুরো আয়টি তুলে দিয়েছ কারও চিকিৎসার জন্য। তোমারই প্রিয়জন দ্বীপায়ন। তারই বার্তা, শেষ দিনেও তুমি তার জন্য বড় একটা কিছু করে গেলে। এর ব্যাখ্যা শুনিনি। তবে জানি, তারও ছিল আশা, কিছু করবে তোমার পক্ষে। কিন্তু হলো না! এ কথাও ঠিক, পাশে ছিল তোমারই অর্ধাঙ্গিনী মিতা। দুধে চিনি সংমিশ্রণ হলেই না কল্যাণমুখী এমন কিছু সম্ভব।

মিষ্টভাষী ছিলে বলে বন্ধুর অভাব হয়নি। আবুধাবির একটি মল। প্রবোধ সরকারের সঙ্গে দেখা হলো। অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। বিয়োগে, ব্যথায় কী এক সময় পার করছি আমরা! বিস্ময় আর ভয়ের এ উপাখ্যান। আমি সুরটা ধরি নিজের মধ্যে।

পার্থ প্রতিম তুমি আছ রজনীকান্তের চির নভোনীলে

অপু দাস ফোনে তোমার প্রসঙ্গই তুললেন। বললেন, পরপর কয়েকটি অনুষ্ঠানে কথায় আলোচনায় বন্ধুত্বে এগোলাম বিপুল সময়। অসীম তৃপ্তি ছিল তাঁর এবং আরও সহগামীর। পেশাভিত্তিক ধারণা দিতেও অলসতা ছিল না তোমার। এ কথা পুলক চৌধুরীও সম্মানের সঙ্গে উল্লেখ করলেন সেদিন।

জন্মদিন কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান, সবখানেই তোমার উপস্থিতি ছিল প্রাণবন্ত। আমি বলি, সে জন্যই তুমি চির ভাস্বর আমাদের মাঝে।

পার্থ প্রতিম মানেই অশেষ ভরসা আর নির্ভরতার জায়গা। আল আইন থেকে ফোনে কথা বলল উত্তম-ঊর্মি হাওলাদার দম্পতি। ওই একই কথা, সতত হাসির মুখটি কি নাই হতে পারে? নিজের কন্যা মিথিকে নিয়ে কী বুনন তাঁর! উচ্চশিক্ষা নিয়ে বড় হবে। ইউরোপে সে ব্যবস্থাটিও করে গেল! একই নগরীর আমিনুল ইসলাম। তাঁরও সঙ্গে আর এক দফায় কথা হলো। চাকরি সূত্রে সতীর্থ এক। বললেন, বিশ্বাস হয় না, পার্থদা নেই।

আমারও একই কথা। খুব কাছ থেকে দেখেছি। এ দেশে এ বাসায় আসা-যাওয়া। চাকরিও ছিল একই কোম্পানিতে। জীবনে, সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে এখনো তুমি আমাদের ঘিরে। পার্থ! স্বাচ্ছন্দ্য দেখেছি তোমার। মনতোষ বোঝার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু দর্প দেখিনি। শয়নে, স্বপনে এখনো তুমি দীপ্যমান। তাই তো হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায় গভীর রাতে।

সবার চিত্তে তুমি প্রিয়জন। গোটা চতুর্পাশ ভালোবাসে তোমায়। তারা ঋদ্ধ, গুণমুগ্ধ তোমার। কাজেই তুমি যতই নেই নেই বলো, তা আর ধোপে টেকে না। তুমি থাকবে, সবার হৃদয়ে চির জায়মান হয়ে। এখানেও রজনীকান্ত অসমাপ্ত। পার্থ তুমি আছ বিটপীলতায়, জলদের গায়, শশী তারকায় তপনে।