উন্নত বিশ্বের মতো ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি

ছবি: লেখকের পাঠানো

গত মাসে লন্ডন থেকে ১২০ মাইল দূরের ডোরসেট কাউন্টিতে ঘুরতে গিয়ে একটা সুন্দর জায়গা চোখে পড়ায় সেখানে গাড়ি থামিয়ে দাঁড়ালাম আমরা! আমরা জানতাম না জায়গাটা ব্রিটেনের সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। এক মিনিটও দাঁড়াতে পারিনি। যতগুলো গাড়ি পার হচ্ছে, সবাই আমাদের হর্ন দিয়ে সতর্ক করে যাচ্ছে। আমরা বুঝতে পারিনি। পরে একটু দূরে চোখে পড়ল একটা সাইনবোর্ডে লেখা—‘এখানে গাড়ি থামাবেন না, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এলাকা, যেকোনো সময় গুলি এসে লাগতে পারে।’ লেখাটা চোখে পড়তেই আমরা দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়ি, আর সেই স্থান ত‍্যাগ করি।

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন, আর সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণকেন্দ্র রাজধানী লন্ডন থেকে ১২০ মাইল দূরে! এতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে? আর আপনি আমার দেশে দেখেন, সবকিছুর হেডকোয়ার্টার হতে হবে ঢাকায়! এমন একটা দেশ, এমন একটা শহর, সভ‍্যতার কোনো ছোঁয়া নেই সেখানে, নেই কোনো নিয়মকানুন। নেই কোনো শহর–পরিকল্পনা, নেই পরিবেশের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা। যার যেভাবে ইচ্ছে ভবন তৈরি করছে, আইনি জটিলতা থাকলে ঘুষ তো আছে।

উত্তরা ও আশপাশের এলাকার ২০০৫ সালের সঙ্গে ২০২৫ সাল মিলিয়ে দেখুন, ২০ বছর আগে গতকাল দুর্ঘটনার শিকার মাইলস্টোনের ক্যাম্পাসসহ দিয়াবাড়ি এলাকা পুরোটা ছিল বিল। আজ সেখানে বসতি গড়ে উঠেছে। ২০ বছর আগেও এ জায়গা দিয়ে বিমান নেমে আসত, এখনো আসে। তাই ‘জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান কেন’ প্রশ্ন না তুলে, ‘বিমান নামার পথটাকে জনবসতিপূর্ণ কেন করা হলো’, এ প্রশ্নটাও তোলা জরুরি।

সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঢাকার মতো জনবহুল এলাকা থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের ছোট ছোট আইল্যান্ডেও স্থানান্তর করা যায়, অথবা ঘনবসতিপূর্ণ নয় এমন এলাকায় কার্যক্রমগুলো স্থানান্তর করা উচিত।

অধ্যাপক ইউনূস সরকার নাকি জনগণের সরকার, তাঁদের অন‍্যতম ম‍্যান্ডেট সংস্কার, তবে এখন পর্যন্ত যৌক্তিক কোনো সংস্কার চোখে পড়েনি! সংস্কার মানে কেবল নির্বাচনব‍্যবস্থা আর রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন নয়। পারলে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের কার্যকর উদ্যোগ নিন! এটা হবে প্রকৃত সংস্কার। যে কাজগুলো গতানুগতিক রাজনৈতিক দলগুলো করে না, তেমন একটা সাহসী কাজ হতে পারে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের কাজ, এ উদ্যোগটা নিন। বড় দলগুলো বিরোধিতা করলেও পাবলিকের সাপোর্ট পাবেন। আপনারা কি ভালো কাজ করবেন, রাজনীতি করেই তো কূল পাচ্ছেন না। অথচ এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল ভিন্ন কিছু, প্রত‍্যাশা ছিল অনেক।

ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ মানে জলসিঁড়ি, বসুন্ধরা, উত্তরা প্রকল্প নয়। ঢাকা তো বিষাক্ত হলোই, ঢাকার আশপাশের এলাকাতেও সেই টক্সিন ছড়িয়ে দিতে হবে। এগুলো কোনো ভ‍্যালিড প্ল্যান নয়, ঢাকার প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ খুব জরুরি। আর এর প্রথম স্টেপ ইউনূস সরকারই গ্রহণ করুক। পরের নির্বাচিত সরকার সেটার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাজ করবে।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]