৫৪তম বিজয় দিবস উদ্যাপন করল ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল
১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন, আমাদের গৌরব, জাতি হিসেবে আমাদের পরম প্রাপ্তি। মুক্তিসংগ্রামের সমগ্র বিশ্বাস ও ভাবনাকে হৃদয়ের গভীরে লালন করে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল তা প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের ভাবনায়ও অনুরণন ঘটাতে চায়। আর তাই প্রতিবছরের মতো এবারও ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল গভীর ভালোবাসায় ও কৃতজ্ঞতায় যুদ্ধজয়ের ৫৪তম বর্ষ উদ্যাপন করে।
গত ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ রোববার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় মিন্টোর দ্য গ্রাঞ্জ পাবলিক স্কুল প্রাঙ্গণে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বর্ষ সমাপনী সনদ বিতরণ করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার ভূমিসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। আয়োজনের শুরুতেই বাংলা স্কুলের কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফায়েল রোজারিও সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান ও তাঁর স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
স্কুলের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম শাহীন উপস্থিত সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বাংলা কমিউনিটিতে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের ২৫ বছরের অবদান ও অর্জন এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য সংক্ষেপে তুলে ধরেন দর্শকদের সামনে।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
তিন পর্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অংশগ্রহণ করে মারজান, অর্ণা, ইমরান, নুসাইবা হক, জারিফ, অস্কার, মাহরুস, রাইনা, আদিয়ান, আমিনা, অনিরুদ্ধ, মৃন্ময়ী, নুসাইবা আল ইনশিরা, নাশভা, নাজিফা, অর্ণিলা, মুনাজ্জাহ, সুহানা, মোহাইমিন, রায়ান, রাইয়ান, মিনহাল, মেহনাজ, মাইশা, মেহেরিস, রাভিভ, রীয়ান, দীপ্তরাজ, জারা, গার্গি, আমিরাহ, লিয়ানা, আয়ানা, জোহা, অর্ক, সামরীন, আফরীন, ওয়াফিয়া, এরোন, আইডিন ও মিকাইল। হৃদয়স্পর্শী দুটি দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে আমিনা ও তার দল এবং মৃন্ময়ী। বিজয় দিবসের কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শেষ হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনা ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সফল সমাপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তাঁরা সন্তানদের বাংলা ভাষার সঠিক উচ্চারণচর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দেন। এরপর তিনি ছাত্রছাত্রীদের হাতে সর্বোচ্চ সম্মানজনক মিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। ২০২৫ সালে মিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড জয় করে মেধাবী শিক্ষার্থী অলিভিয়া রোজারিও ও অর্ণা পাল। স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্কুলে শতভাগ উপস্থিতির কারণে প্রথমবারের মতো নতুন ক্যাটাগরির বিশেষ সনদ দেওয়া হয়। এরপর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ সমাপনী সনদ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন শ্রেণিশিক্ষকেরা।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে স্কুলের নিজস্ব শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। একক সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও স্কুলের কার্যকরী কমিটির সদস্য লুৎফা খালেদ, স্কুলের গানের শিক্ষক স্বপ্না চক্রবর্তী ও তাঁর মেয়ে দুলারী চক্রবর্তী এবং স্কুল সভাপতি ফায়সাল খালিদ শুভ। একক আবৃত্তি করেন শ্রেণিশিক্ষক বিশাখা পাল ও নুসরাত শারমিন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনিরা হক, যিনি নিউ সাউথ ওয়েলস অরগান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশন সার্ভিসের গবেষক এবং We Care Bangladesh Research Project-এর সদস্য। তিনি অঙ্গ ও টিস্যুদান নিবন্ধনের গুরুত্ব এবং অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এর প্রভাব সম্পর্কে বক্তব্য দেন।
সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্কুল সভাপতি ফায়সাল খালিদ শুভ।
বাংলা স্কুলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান খান এবং কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ফায়সাল খালিদ শুভর সার্বিক তত্ত্বাবধানে, সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনা ও স্কুলের কার্যকরী কমিটির সদস্য লুৎফা খালেদের ব্যবস্থাপনায় এবং সংগীত শিক্ষক স্বপ্না চক্রবর্তী ও বিশিষ্ট তবলাবাদক বিজয় সাহার পরিচালনায় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সঞ্চালনা করেন শিক্ষক অনিতা মন্ডল। সনদ বিতরণ পর্বটি উপস্থাপনা করেন শিক্ষক অনিতা বিশ্বাস মিরা। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ সমাপনী সনদ বিতরণ করেন শ্রেণিশিক্ষক শায়লা ইয়াসমিন নুসরাত, সায়মা হক, বিশাখা পাল ও নুসরাত শারমিন মৌরি। নিজস্ব শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নুসরাত শারমিন মৌরি। অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও কারিগরি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মসিউল আযম খান স্বপন, রিজওয়ান আহমেদ ও ফায়সাল খালিদ শুভ। স্টেজ সজ্জা, আপ্যায়ন ও সার্বিক সহায়তায় ছিলেন ইয়াকুব, শাহিন, স্বপন, রাফায়েল, আজিজ, জিসান, রিজভী, সম্রাট ও মঈন। বিজয় দিবসের কেক ডেকোরেশনে ছিল শ্রেণিশিক্ষক সায়েমা, তাঁর সন্তানেরা আদিয়ান ও আমীনা।
উল্লেখ্য, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।