আন্দোলনে এতো ভয়
কোটা সংস্কার আন্দোলনের একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ২১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সামনের দিনগুলোতে কী ঘটবে, তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কোন পথে অগ্রসর হবে, সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়।
গত কয়েক দিনে সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে শক্তি প্রয়োগের বাইরে আর কিছুই দেখা যায় নি। এই কৌশলের আসল কথা হচ্ছে বল প্রয়োগ করে দমিয়ে দেওয়া। এভাবে সাময়িক সাফল্য অর্জনের ইতিহাস আছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে ভয়ের বিস্তার ঘটানোর এই চেষ্টা একসময় ভেঙে পড়ে। এর কিছু লক্ষণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের টিকে থাকার ক্ষমতা, তাঁদের দেওয়া স্লোগানের মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরে আটক–গ্রেপ্তার চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে কোটা আন্দোলনের পক্ষে কোনো পোস্ট, লিখা কিংবা শেয়ার করা এখন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় পুলিশের সাধারণ মানুষের ব্যাগ নিয়ে চেক করে এবং মোবাইল ফোন চেক করছে। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কোনো ছবি বা পোস্ট দেখলে আটক করে নিয়ে যায়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক বলেছেন, বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের জেরে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে নজর রাখছে জাতিসংঘ। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চলমান আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।
যেখান থেকে শুরু এই আন্দোলন, ২০১৮-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ১৯৭২ সাল থেকে চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। লাগাতার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার। পরে ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বাতিলকৃত কোটা পুনরায় বহাল করে। যার ফলে পুনরায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আপিল বিভাগ মেধায় ৯৩ শতাংশ নিয়োগ আর কোটায় ৭ শতাংশ রাখার পক্ষে রায় দেয়। এরপর এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি হয়।