ওআইসির সভায় সুদানে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং শান্তির আহ্বান বাংলাদেশের

ওআইসির সভায় মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী
ছবি: দূতাবাসের সৌজন্য

সুদানে অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি এবং শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সুদান পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির এক জরুরি সভায় বিবদমান সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এবং সুদান র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রতি এ আহ্বান জানায় বাংলাদেশ। সৌদি আরবের সভাপতিত্বে সুদানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ওআইসির নির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা গতকাল বুধবার সংস্থাটির জেদ্দার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ওআইসির সভায় এ আহ্বান জানান। সভার শুরুতেই ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা সুদান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।

এ সময় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সুদানের এ লড়াই শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য সুদানের জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষুণ্ন করছে। সেখানে যুদ্ধের ফলে ব্যাপক মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এবং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, যুদ্ধের ফলে ইতিমধ্যে সুদানে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে, খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সেখানে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে—স্থানীয় জনগণ ও বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাসিন্দারা যার শিকার হচ্ছেন। অনেক বাংলাদেশি তাঁদের সর্বস্ব হারিয়েছেন এই লুটপাটের শিকার হয়ে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, সুদানে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন, যাঁরা প্রত্যাবাসনের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁদের সুদান থেকে নিরাপদে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুদান থেকে বাংলাদেশিসহ বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সৌদি আরবের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কয়েকটি দেশও সেখান থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি বিদেশিদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের সুযোগ সৃষ্টি ও মানবিক সাহায্যের নিরাপদ সুযোগ সৃষ্টির জন্য সুদানের সরকার ও বিবদমান দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।  

ওআইসির জরুরি সভায় রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, যুদ্ধের সময় সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনপ্রধানের বাসভবনে হামলা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং কূটনৈতিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি সুদান সরকার ও যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক মিশন এবং এর কর্মীদের নিরাপত্তা এবং সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার বিষয়ে অনুরোধ জানান।

মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ এবং আমরা আশা করি যুদ্ধ বন্ধে ওআইসি, আফ্রিকান ইউনিয়ন, আরব লিগ এবং জাতিসংঘ একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে এবং সুদান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য যুদ্ধরত সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসবে, যা সুদানে অবিলম্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনবে।  

ওআইসির জরুরি সভায় সুদান, তুরস্ক, আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, ইরাক, মিসর, পাকিস্তান, গাম্বিয়া, মৌরিতানিয়া, ক্যামেরুন, জিবুতি, চাদ, তিউনিসিয়া, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, মরক্কো, লেবানন, জর্দানসহ অন্যান্য দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেবেন। সভায় সুদানে যুদ্ধ বন্ধ, শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। বিজ্ঞপ্তি