একটি রৌদ্রোজ্জ্বল ভোরের অপেক্ষা

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন

আমি সব সময় একজন আশাবাদী মানুষ। তবে অহেতুক কোনো কিছুর আশা করি না। আবেগকে একটু দূরে সরিয়ে রেখে বাস্তবতা বোঝার চেস্টা করি। সবাই বলছেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হলে আমি খুশি, দেশের মানুষ খুশি। দেশের মানুষ চায় একটু শান্তি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ দুই বেলা ডাল-ভাত খেতে পারলে খুশি। কোনো মানুষই অরাজকতা বা অশান্তি পছন্দ করে না। একটু শান্তি আমাদের খুবই দরকার। তবে বাস্তবতা যখন বোঝার চেষ্টা করি, তখন আমার মনে খটকা লাগে। অনেক হিজিবিজি চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। আমরা জাতি হিসেবে বড়ই দুঃখী। আমাদের দেশে কখনো সুশাসন আসেনি। এই জাতি কখনো ভালো কিছু দেখেনি। সে জাতি কি এক দিন কিংবা এক মাসে ভালো হতে পারবে? নিজেকে শুধরে নিতে পারবে?

একটি জাতি পরিবর্তনের সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত, যেমন শিক্ষা-সংস্কৃতি, অভ্যাস, প্রতিহিংসা, লোভ, ঘুষ, দুর্নীতি ও মিথ্যাচারের মতো অনেক কিছু। এ সবকিছু কি রাতারাতি পরিবর্তন হয়? এ জন্য অনেক চর্চা করতে হয়। আমাদের রাষ্ট্রে যে চর্চা বিগত সরকারগুলো করে গেছে, তা কি খুব দ্রুত নিষ্ক্রিয় হবে? আমরা আবেগ দিয়ে যা সহজে ভাবতে পারি তার বাস্তবায়ন করা এত সহজ নয়। একটি দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করে দেশ কেমন চলবে। মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনচেতা প্রাণী। মানুষের ওপর কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। মানুষ যদি সত্যকে সত্য বলা না শিখে, তাহলে তাদের কাছ থেকে সত্য আশা করা অবান্তর। আগে চর্চার দরকার, তারপর শেখা।

বিগত সরকারগুলো মানুষকে কেমন পরিবেশ দিতে পেরেছে? তারা কি সমাজে সত্য বা নীতির বিস্তার ঘটাতে পেরেছে! যদি তা না হয়, তাহলে হঠাৎ কীভাবে সমাজ বদলাবে। আগে তো মানুষকে বদলাতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন হবে বৈকি। আমি বলি সবই আবেগ। দেশের মানুষ এখন চরম আবেগে সময় পার করছেন। অন্যদিকে সুবিধাবাদীরা সুযোগ খুঁজছেন। ছাত্রদের নাম করে অনেকে অন্যায় করলে সে ক্ষেত্রে প্রতিকার কে করবেন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে অন্যায় ও অবিচারগুলো শিকড় গজিয়েছে, তা কি হঠাৎ কেটে ফেলা সম্ভব হবে? একদল বঞ্চিত হলে আরেক দল তো ভোগ করবেই। আমাদের রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে সমাজে এমন চর্চাই হয়ে আসছে।

বর্তমান সরকার বলছে রাষ্ট্রকে সংস্কার করবে। কেমন করে সংস্কার করবে, তার রূপরেখা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, নতুন বোতলে পুরোনো মদ। আবার মাঝেমধ্যে মনে হয়, সরকারই–বা কী করবে। অবস্থা এমন যে, ‘কুইনিন জ্বর সারাবে বটে কিন্তু কুইনিন সারাবে কে!’ আমরা আসলেই অভাগা জাতি। বিগত কোনো সরকার দেশের মানুষগুলোকে ভালোবাসেনি।

তবে আমি আশাবাদী মানুষ। আমি জানি, রাতের পর ভোর হবে। সেদিন ভোরে একটি লাল সূর্য উঠবে। সবার মনের অন্ধকার দূর হবে। সে আলোয় আলোকিত হবে সবার মন...

  • দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]