ঢাবি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের সাধারণ সভা ও নির্বাচনে প্রাণের মেলা
সমবেত কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের ষষ্ঠ বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান। ১২ নভেম্বর বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে আনন্দঘন পরিবেশে পূর্ব লন্ডনের ক্রিস্টাল ব্যাংকুয়েটিং হলে দিনব্যাপী এ বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদভারে মনে হয়েছে এ যেন ‘মিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। পরস্পরের আলিঙ্গন দেখে মনে হয়েছিল, ‘আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি, নাচিবি ঘিরি ঘিরি...’।
বিদায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ডাকসুর সাবেক সদস্য দেওয়ান গৌস সুলতানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের পরিচালনায় বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করায় হাইকমিশনার অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
ষষ্ঠ বার্ষিক সাধারণ সভায় তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০২৩-২৫ সালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন হাবিব রহমান এবং অপর দুই নির্বাচন কমিশনার ছিলেন শাহগীর বখত ফারুক এবং ড. মোহাম্মদ আবদুল হান্নান। সভায় মারুফ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও মেসবাহ উদ্দীন ইকোকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ৩২ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রশান্ত পুরকায়স্থ, সহসভাপতি পদে যথাক্রমে সহুল আহমেদ মকু, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান ও সিরাজুল বাসিত চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ জাফর।
যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ আবু আকবর আহমেদ ইকবাল, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও মাহারুন আহম্মেদ মালা। যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন ফাইজুল হক রিপন ও খোকন কান্তি ঘোষ। দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মিজানুর রহমান। মোহাম্মাদ কামরুল হাসান, কামরুল হাসান ও বেলাল রশীদ চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া, রীপা সুলতানা রাকীব সাংস্কৃতিক সম্পাদক, খালিদ ইয়াহইয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি সম্পাদক ও এ্যারিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
কার্যকরী কমিটির নির্বাচিত সদস্যরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান, ইসমাইল হোসেন, মাহফুজা রহমান, সৈয়দ সাইদুর রহমান ফারুক, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, মির্জা আসাব বেগ, ফখরুল মোহাম্মদ ইসলাম, মোহাম্মদ রফিক আহমেদ, মোহাম্মদ আবুল কালাম, শারমিন চৌধুরী, সৈয়দ হামিদুল হক, মিসেস কল্পনা কাজী ও সৈয়দ ফারহানা সুবর্ণা।
বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
সভার শুরুতে সংগঠনের সদস্য মাওলানা মুহাম্মাদ মুবারাকুল্লাহ দোয়া পরিচালনা করেন। এ পর্যায়ে সৈয়দ আবু আকবর ইকবাল সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য ‘একুশের গান’খ্যাত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও আরও তিনজন অ্যালামনাইয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে একটি শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়। এ ছাড়া ফিলিস্তিনবাসীর ওপর ইসরাইলের নৃশংস আক্রমণের প্রতিবাদে ও অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে একটি বিশেষ প্রস্তাব পাস করা হয় এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। পরলোকগত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত ও যুদ্ধ বন্ধের কামনায় দোয়া করা হয়েছে।
সভায় গত দুই বছরের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। আর্থিক রিপোর্ট পেশ করেন বিদায়ী কমিটির কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ হামিদুল হক। শেষ দুই কার্যকরী কমিটির মিনিটস উপস্থাপন করেন মিজানুর রহমান। বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন উপলক্ষে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়।