বাংলাদেশি ফরিদা পপির আচার এখন কানাডীয় ব্র্যান্ড
গত দুই বছরে ২৫ হাজারের বেশি আচারের জার বিক্রি করেছেন ফরিদা পপি। শুধু কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরাই ক্রেতা তা নয়, দেশটিতে বিভিন্ন দেশের মানুষজনও তাঁদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করেছেন বাংলাদেশি আচারের কানাডীয় ব্র্যান্ড পপি’স আর্ট অব কুকিং।
রপ্তানি হচ্ছে কানাডার বেশ কয়েকটি প্রদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, নেপাল, চীন ও ভারতে। মায়ের সঙ্গে হাল ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তাফসিন আওয়াল। প্রতিষ্ঠানটির তিনি এখন প্রধান পরিচালক।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় ফরিদা পপি ও তাঁর পুত্র তাফসিন আওয়ালের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কথার প্রসঙ্গে ফরিদা পপি বলছিলেন, ‘আহা! খাবারের সঙ্গে একটুখানি আচার। বিদেশবিভূঁইয়ে খাবারের টেবিলে চলে এমন নস্টালজিক আলাপচারিতা। দেশি খাবারের নানা পদ তো আছেই, আচারের রসনা নিয়েও বাঙালিদের গল্পের শেষ নেই। বাজারে নানা পদের আচার যে মিলছে না তা নয়। কী যেন একটা খামতি থেকে যায়—সেটিই আমার মনে হয়েছে সব সময়। রংচটা মোড়ক নয়, আচারে মা, মাটির গন্ধ খুঁজেন অভিবাসীরা। আচারের সঙ্গে মিশে আছে প্রজন্মের টান, গন্ধ, দেশে ফেলে আসা সুখস্মৃতির নানা গল্প।
ফরিদা পপি আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা, খাবারের রুচিবোধ, আচারের সঙ্গে ভালোবাসার, সম্পর্কের প্রাচীন এ পদ্ধতিকে নানা ভাষাভাষী মানুষের কাছে তুলে ধরা। পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ, বৈচিত্র্যময় প্রক্রিয়াশৈলী ও স্বাদ যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন বিশ্বাস ছিল।’
বাংলাদেশের নড়াইলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজে পড়াশোনা করা ফরিদা পপি কানাডায় থিতু হয়েছেন প্রায় ২৫ বছর। নানা মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা, চাকরির অভিজ্ঞতা, ছোটখাটো শিল্প উদ্যোগের প্রচেষ্টায় কেটেছে অভিবাসী জীবনের বড় একটা অংশ।
ফরিদা পপি বলছিলেন, ‘বন্ধুবান্ধব পরিচিতজনেরা আমার খাবারের নানা পদের প্রশংসা করতেন, দেশীয় উপকরণের পাশাপাশি কানাডায় সহজলভ্য কাঁচামাল দিয়ে বৈচিত্র্যময় আচার তৈরির উন্মাদনা নিয়েও তাঁরা খ্যাপাতেন। তবে বিশ্বাস ছিল, আমার নিখাদ ভালোবাসা ও শ্রমের প্রতি কোনো একদিন গ্রাহকদের একটা টান সৃষ্টি হবে। এ শিল্পটি শুধু ব্যবসা নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু আমাদের কাছে।’
২০২০ সালের নভেম্বরে টরন্টোর বালাদেশি অধ্যুষিত স্থানীয় ড্যানফোর্থ এলাকার পিঠাঘরে পপির হাতে তৈরি দুই ধরনের আচার বিক্রি ও প্রদর্শনের সুযোগ মিলে। মাত্র তিন দিনে ৩২টি জার বিক্রি হয়ে গেল। পিঠাঘরের কর্ণধার রসু ভাই জানিয়েছেন, আরও জার দিয়ে যান, সাপ্লাই বাড়াতে হবে? উচ্ছ্বসিত হয়ে পপি বললেন, ‘এমন ফোনকল অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল আমাদের কাছে। পুত্র তাফসিন ও কন্যা তানমীমকে জড়িয়ে ধরে এক অসাধারণ মুহূর্ত আমরা উদ্যাপন করেছিলাম। নিজেদের কাজের প্রতি বিশ্বাস আরও বেড়ে গেল।’
পপি’স আর্ট অব কুকিং-এর প্রধান পরিচালক তাফসিন আওয়াল জানিয়েছেন তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও স্বপ্নের কথা। তাফসিন বললেন, ‘শুরুর দিকে আমার দায়িত্ব ছিল মায়ের তৈরি আচার প্রথম চেকে দেখা। আচারের গন্ধ, কাজের প্রতি মায়ের একাগ্রতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। দিন দিন ব্যবসার প্রসার কাছ থেকে দেখে নিজেও উজ্জীবিত হয়েছি, একসময় আমিও স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সহপাঠীদের নিয়ে গড়া ব্যবসায়িক উদ্যোগ থেকে নিজেকে সরিয়ে এনেছি পারিবারিক এই স্বপ্নকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে। মার্কেটিং, প্রমোশনসহ ব্যবসা সম্প্রসারণের দিকটিতে নজর দিচ্ছি। বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশি কাঁচামালের প্রাপ্তি, প্রোডাকশন খরচ, বিপণনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা চেষ্টা করছি, গুণগত মান ঠিক রেখে বাজার সম্প্রসারণের।