প্যারিসের লাইব্রেরি ও বইপ্রেমীদের জান্নাত

‘দূর পরবাস’-এ নানা সমস্যা, জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

প্যারিস এমন একটি শহর, যেখানে প্রেম, শিল্প, সংস্কৃতি আর জ্ঞানের মেলবন্ধন চিরকালীন। ক্যাফেগুলো যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার কেন্দ্রস্থল, তেমনই লাইব্রেরিগুলো যেন বইপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ। বিশ্বের অন্যতম সেরা কিছু লাইব্রেরি এই শহরে ছড়িয়ে আছে, যেখানে প্রতিটি বইয়ের পাতায় লুকিয়ে আছে ইতিহাস, দর্শন ও কল্পনার জগৎ।

নোটর ডাম ক্যাথেড্রালের কাছে সেন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা শেকস্‌পিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি লাইব্রেরিটি যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৯১৯ সালে সিলভিয়া বিচ এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, জেমস জয়েস এবং এজরা পাউন্ডের মতো সাহিত্যিকদের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠে। আজও প্যারিসে বইপ্রেমীদের জন্য এক আবেগময় স্থান, যেখানে বইয়ের গন্ধে হারিয়ে যাওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগার ‘বিবলিওথেক নাসিওনাল দে ফ্রঁস’ শুধু একটি লাইব্রেরি নয়, এটি এক ইতিহাসের স্বাক্ষী। ১৪৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগারে ৪ কোটির বেশি বই ও পাণ্ডুলিপি রয়েছে। গবেষকদের জন্য এটি এক স্বপ্নের স্থান, যেখানে ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শনসহ প্রায় প্রতিটি বিষয়ে অমূল্য বই সংরক্ষিত আছে।

প্যান্থিয়নের কাছেই অবস্থিত লাইব্রেরি সেন্ট জেনেভিয়েভ এক অনন্য স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। বিশাল জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলোয় বইয়ের পাতা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আর পঠনের জন্য এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থী, গবেষক ও সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

বড় লাইব্রেরিগুলোর পাশাপাশি প্যারিসে ছড়িয়ে আছে কিছু ছোট ছোট বুকশপ, যেগুলো বইপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। ‘লিবারেরি গালিগুলি’ বা ‘লাইব্রেরি দ্য লা মের’ এর মতো দোকানগুলোতে বিরল বই পাওয়া যায়, যেখানে ঢুকলেই সময়ের হিসাব হারিয়ে ফেলা যায়।

প্যারিস কেবল রোমান্স ও শিল্পের শহর নয়, এটি জ্ঞানপিপাসুদের জন্যও এক স্বর্গরাজ্য। এখানকার লাইব্রেরিগুলো শুধু বইয়ের সংগ্রহশালা নয়, বরং তারা ইতিহাসের গল্প বলে, নতুন চিন্তার পথ খুলে দেয়। বইপ্রেমীরা যখন এই শহরে আসেন, তাঁরা জানেন, এখানে প্রতিটি লাইব্রেরি, প্রতিটি বইঘর, তাঁদের জন্য এক নতুন দিগন্তের দুয়ার খুলে দেবে।

*লেখক: আশিক আহমেদ উল্লাস, লেখক