ভারতে ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ও চেতনায় নজরুল’ আয়োজন

বাঙালির হৃদয়ে, চেতনায়, মননে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলাম চিরভাস্বর। সুখে, দুঃখে, প্রেমে, অপ্রেমে, বিদ্রোহে, বিরহে আছেন তাঁরা সর্বদা। রবীন্দ্রনাথ যখন খ্যাতির মধ্য গগনে, তখন রবীন্দ্র-বলয় থেকে প্রভাব মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব সাবলীল ভঙ্গিতে সাহিত্য রচনা শুরু করেন নজরুল। তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধার, স্নেহের। ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ’ নামক প্রবন্ধে নজরুল লিখেছেন, ‘বিশ্বকবিকে আমি শুধু শ্রদ্ধা নয়, পূজা করে এসেছি সকল হৃদয়-মন দিয়ে, যেমন করে ভক্ত তার ইষ্টদেবতাকে পুজো করে। ছেলেবেলা থেকে তাঁর ছবি সামনে রেখে গন্ধ-ধূপ-ফুল-চন্দন দিয়ে সকাল সন্ধ্যা বন্দনা করেছি। এ নিয়ে কত লোকে কত ঠাট্টা, বিদ্রুপ করেছে।’

বিভিন্ন সময়ে দুই কবির সাক্ষাতে তৈরি হয়েছে অমূল্য কিছু মুহূর্ত, রচিত হয়েছে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। বিশ্বকবির আশীর্বাদ, প্রেরণা জুগিয়েছে দুখু মিয়ার বিভিন্ন সৃষ্টিতে। মনের রবি আর প্রাণের কাজীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গত ২৬ নভেম্বর শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি ভবনে ছায়ানট (কলকাতা) আয়োজন করে প্রভাতী অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ও চেতনায় নজরুল’। পরিকল্পনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বামী সঙ্ঘমিত্রানন্দ (ভারত সেবাশ্রম সংঘ, মুলুক-বোলপুর-শান্তিনিকেতন শাখা), বরকা সরেন (সাবেক অধ্যাপক, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়) এবং কিশোর ভট্টাচার্য (অধ্যাপক, পাঠভবন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)। শতাধিক শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অতিথিদের সুচিন্তিত বক্তব্য অনুষ্ঠানটিকে সমৃদ্ধ করে।

অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। সম্প্রতি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সৃষ্টি ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’- এ এ আর রহমান নতুন সুর সংযোজন করেছেন পিপ্পা চলচ্চিত্রে, তাই স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাপী নজরুলপ্রেমীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই প্রতিবাদ স্বরূপ নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানটি সমবেতভাবে পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এছাড়াও ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’–সহ বেশ কয়েকটি গান শিল্পীরা সমবেতভাবে পরিবেশন করেন।

একক গান ও কবিতায় অংশগ্রহণ করেন দেবযানী মজুমদার, সীমা ব্রহ্ম, অরুণাংশু ব্রহ্ম, অনীতা বসু, সীমান্ত বসু, রাজশ্রী ভট্টাচার্য, আশুতোষ রায়, আর্যদ্যুতি ঘোষ, অর্ঘদ্যুতি ঘোষ, টুটুন দাস, কাবেরী ঘোষাল, নিবেদিতা হালদার, সংহিতা চ্যাটার্জী, রুমা চ্যাটার্জী, মৃদুলা সিংহ, মিতা মণ্ডল, সুজাতা বসু।

দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ছায়ানট (কলকাতা), শ্রীময়ীর গানভাসি, হৃদমাঝারে, গীতিলোক সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টস, গীতলেখা, ভোরের আলো, ছন্দবীণা (দুর্গাপুর), সুর ছন্দম, অন্বেষা গোষ্ঠী, কথা মানবী ও কলাবতী সংগীত বিদ্যালয়ের শিল্পীরা।

যন্ত্র সহযোগিতায় ছিলেন চঞ্চল নন্দী (তবলা), সব্যসাচী দত্ত (কি-বোর্ড), সমর কুমার মল্লিক (পারকশন)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অপরাজিতা মল্লিক।