#হ্যাশট্যাগ-হ্যাপেনিং-লাইফ

ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

১.
‘তুমি না ঘুমাইলে ঘুমাই আমি, আমি ঘুমালে জেগে থাকো তুমি’।
আজ মঙ্গলবার হয়ে গেছে। মারিয়ার ঘুম আসছেই না কোনোভাবে। রাত এখন ২টা ৩৬ মিনিট! সেই ১১টার দিকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল কিন্তু এখনো ঘুম আসতেছে না। পাশে ফিরে দেখে তার প্রেমিক জামাই মবিন মৃদু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। মবিনের ঘুমাতে সর্বোচ্চ ৪১ সেকেন্ড লাগে। গভীর ঘুমে মবিন কিন্তু ঘটনা অনেক বড় এবং কোনোভাবেই ছাড় দিয়ে বেঁচে থাকাটাই সম্ভব নয়। মারিয়া ডাক দিল জামাইকে ‘ও মবিন, মবিন, বেবি মবু, ও মবু!’

চোখ খুলেই ধড়মড় করে বিছানা থেকে নেমে পাশে দাঁড়িয়ে দুই হাত ক্রস করে মার্শাল আর্টের ভঙ্গিতে চিৎকার করতে লাগল, ‘কে কে? সামনে আয় সাহস থাকলে, আমার বউরে কে কী বলছে? কে কে?’

ওমন কিউট প্রতিরক্ষা দেখে মারিয়া দুলকি চালে হেসে বলল, ‘মবুউউ, বেবি, আমাকে কেউ কিছু বলে নাই জান, আসো ...বসো’

‘ওহ! ওকে ওকে, তাহলে ঠিক আছে!’ হালকা হাঁপাতে হাঁপাতে বসল মবিন।

‘আমরা আজকে এক জায়গায় খেতে গেলাম না? সব কুল কুল আইটেমগুলো? দেখতে কি জোশ! আমরা কালকেও ওখানে খেতে যাব বেবি। প্লিজ প্লিজ প্লিজ!’
‘কিন্তু আমরা তো আজকেই খাইলাম! এখনো ডিসপাচ ও হয় নাই যা খাইলাম! কাইল আবার ক্যান খাবা মারিই বেইবি!’
‘মবু, এভাবে কেন কথা বলতেছ তুমি? ছি! প্লিজ কালকে একটু চলো’
‘ঠিক আছে বেবি। তুমি খেয়ো, আমি খাব না! আমার ভালো লাগে না এসব হাবিজাবি। ঝাল কম আর লবণও দেয় না! টেস্ট নেই’।

থ্যাঙ্ক ইউ মবু! মাই বেবি! এই লাব ইউ! এখন ঘুমাও সকালে অফিসে যেতে হবে কিন্তু!
মবিন অন্য পাশে ফিরে ঘুমানোর ঠিক আগমুহূর্তে ভাবছে এই আবদারের মানে কী? কিন্তু ভয়ে আর বউকে সে জিজ্ঞেস করছে না! রাত ঠিক ২টা ৫৩ মিনিটের দিকে মবিন ঘুমিয়ে গেল!

২.
মারিয়া আজ খুব সেজেগুজে এসেছে। অর্ডার দিল অনেক খাবার। গতকাল যেসব আইটেম খেয়েছিল, একের পর এক সেগুলো আসতে থাকল আর সঙ্গে আরও কিছু অ্যাড হলো। মোহিতো আসছে মবিনের জন্য। গ্লাসের নিচের দিকটা চিকন আর ওপরে হালকা চওড়া হয়েও হইল না! একটা বেগুনি রঙের পাইপ নিচ থেকে উঠে এসেছে এবং ঠিক ওপরের দিকে এসে অনেকগুলা প্যাঁচের পর একটা মুখ বের হয়ে মবিনের দিকে তাকায়ে আছে। মবিন নিশ্চিত না কত জোরে টান দিলে এত প্যাঁচ কাটিয়ে মোহিতের তরল তার মুখে আসবে। হয়তো আসবেই না, প্যাঁচে থেকে যাবে আর মবিন তা–ও বলবে ‘আহ হ হ হ মোহিত!’ মবিনের ইচ্ছা হ্যাঁচকা এক টান দেবে আর ফুরফুর করে মোহিত তার মুখভর্তি হয়ে যাবে। কিন্তু মারিয়ামের ভয়ে ডিসেন্ট টানে মোহিতর কিছু কিছু ফোঁটা পেয়েই আহঃ আহঃ করছে। মারিয়া ছবি তুলেই যাচ্ছে খাবারের। ২ বা ৩ মিনিট হয়ে গেল খাওয়া শুরুই হয়নি। সব অ্যাঙ্গেলে ছবি উঠছে। মবিনের একপর্যায়ে মনে হলো চাওমিনের সুতাগুলো নড়ে যাচ্ছে প্রতি ক্লিকে। যেন মুড আর লুক চেঞ্জ করছে প্রতি ছবিতে। মবিন চোখ কচলিয়ে কয়েক ফোঁটা মোহিত নিল মুখে!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল


অবশেষে খাওয়া শুরু হলো। খেতে খেতে মারিয়া বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ বেবি। আজকে সব ছবি তুলতে পেরেছি। গতকাল তো আমার মুঠোফোনে চার্জ ছিল না! হা হা হা! আর তোমার মুঠোফোন গাড়িতে ফেলে এসেছিলে। আজকে থেকে পাওয়ার ব্যাংকও সঙ্গে রাখছি।’

৩.
মারিয়া মুঠোফোন ঘাঁটছে। আজ বৃহস্পতিবার। মারিয়া এই দিন চুজ করে রাখে স্পেশাল পোস্ট দেওয়ার জন্য। লাভ লাইক বেশি আসে। সবার ছুটির পরদিন! রাত বাজে ১২টা ১৩ মিনিট! মবিন বিছানায় শুয়ে পাশের আলমারির আয়নায় দেখছে মারিয়া সোফায় বসে আছে আর মুঠোফোনের সাদা নীলচে আলোর আভা তার মুখে পড়ছে। মবিনের চোখে ঘুম এসে পড়বে ঠিক তখনি মারিয়া কিচেনের দরজা খোলার শব্দে জড়তা কেটে গেল। মুঠোফোনের নোটিফিকেশন ব্রউম ব্রউম করে ভাইব্রেট করে জানাল। মবিন মুঠোফোন নিয়ে দেখল ফেসবুকে মারিয়ার পোস্ট।
‘A surprise treat from my beloved husband. What a pleasant night it was. Alhamdulillah for everything.’

১৫টা খাবারের ছবি, ৫টা সেলফি আর মবিনের সঙ্গে ডুয়েল সেলফি ৩টা। একদম ৩টা সেলফিতেই মবিনের মাথার চারপাশের ফিনফিনে চুলের অংশ প্রতীয়মান আর উজ্জলভাবে আছে হাফ মাথার টাক। পোস্টে অনেকগুলা হ্যাশট্যাগ দেওয়া!
#late_upload
#sorry_for_late_post
#surprisedinnerwithhubby
#happiness_is_surprise_dinner
#mymobuuuuuu
#best_hubby_happy_life
#darknightkissed
#alhamdulillahforhappylife
#haterswillburninhell
#hingshe_hoy?
#amader_moton_hote_chao?
#iwillleadmylife
#idontcarewhatyouthink
#dont_listen_to_people_be_happy
#manush_piche_kotha_bolbey
#you_cant_beat_the_true_love
#maria_met_mobin
#mariamobuuuuuu

৪.
মবিন অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে আছে! মারিয়া মৃদু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। রাত বাজে ২টা ৩৭ মিনিট! মবিনের আজকে কোনোভাবেই ঘুম আসছে না! হয়তো ঘুমাতেই ইচ্ছা করছে না। একসময় মবিন ঘুম না এলে আম্মার রুমে গিয়ে খাটের পাশের সোফায় একটু শুয়ে থাকত। আম্মা হাত বুলায়ে দিত মাথায়। ঘুম ভারী হয়ে এলে সে ঘুমিয়ে পড়ত। নাকে থাকত খুব পরিচিত আম্মার গায়ের গন্ধ। কিন্তু আজকে অন্য রুমে আম্মাও নেই!