মাসব্যাপী বিজয়ফুল কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই বেগবান করার অঙ্গীকার নেওয়ার মধ্য দিয়ে লন্ডনে বিজয়ফুল কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের পাদদেশে বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনায় ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ দেশাত্মবোধক গানের মাধ্যমে একে অপরকে বিজয়ফুল পরানোর মধ্য দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারকে স্যালুট দেওয়ার মাধ্যমে বিজয়ফুল কর্মসূচির উদ্বোধন হয়।
‘ডিসেম্বর মাস, বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। বিশ্বের যেখানেই থাকুন, বিজয়ের মাসে প্রতিদিন বিজয়ফুল পরুন, বিজয়ের গৌরবে সমুন্নত থাকুন এবং একাত্তরের শহীদদের স্মরণ করুন আর বাংলাদেশের বিজয়কে বুকে ধারণ করুন’ স্লোগানের মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের গল্পবলা এবং প্রতিদিন বিজয়ফুল পরার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে বিজয়ফুল কার্যক্রম।
বিজয়ফুলের উজ্জীবক কবি মিল্টন রহমানের সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌস সুলতান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেফতা ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান উদ্দিন।
সভায় বক্তারা বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে লুপ্ত চেতনা পুনরুদ্ধার করার জন্য এবং চিন্তাচেতনার অবক্ষয় দূর করার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দেব, এটাই আমাদের অঙ্গীকার। তাঁরা বলেন, বছরব্যাপী দেশ-বিদেশে সর্বস্তরের মানুষকে, বিশেষ করে নব প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে এই কর্মসূচি পালন করা প্রয়োজন।
বিজয়ফুল প্রথম যখন প্রবর্তিত হয় কর্মসূচি হিসেবে, তখন তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো; যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সেই সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাচেতনা, বাংলাদেশের যে গৌরবময় ঐতিহ্য, সেটাকে তুলে ধরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুজিবুল হক মণি, সাংবাদিক বুলবুল হাসান, সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, দেওয়ান মাহমুদুল হক, জামাল খান, শামীমা মিতা, কবি সৈয়দ হিলাল সাইফ, অপু ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ বিপুল, সেলিনা শেলী, নাজমা ইসলাম, আসাদুজ্জামান মুকুল, আবদুল কাদির প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রবাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচি ১৬ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। কবি শামীম আজাদ বিলেত থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি ও ক্যাম্পেইন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিজয়ফুলের সৃষ্টি। বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কাছে বিজয়ফুল হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক।
বিজয়ফুল তৈরির সময়ে একটি ক্রিয়েটিভ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার সুযোগটা পাওয়া যায়। বিজয়ফুল একটা উপলক্ষ। বাচ্চারা বিজয়ফুল তৈরি করার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা পাশে বসে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনান। এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বার্তা পৌঁছে যায়। ছেলেমেয়েরা যখন নিজ হাতে পাঁচটি সবুজ পাপড়ি ও একটি লাল গোলকের সম্মিলনে ফুল তৈরি করে, তখন তাদের শেখানো হয় মাঝখানের বৃত্ত আমাদের বিজয়ের লাল সূর্য, আর পাঁচটি পাপড়ির মাধ্যমে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা—নানা ধর্মের মানুষের সহমর্মিতা, আমাদের মৌলিক অধিকার, দেশের নদী, সবুজ প্রকৃতি ইত্যাদি। তাই বিজয়ফুল বানানোর সময় নতুন প্রজন্মের সামনে গোটা বাংলাদেশের চিত্র ফুটে ওঠে। বিজয়ফুল শুধু লন্ডনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি ডিসেম্বরে বহু বাঙালি বুকে বিজয়ফুল পরেন, হৃদয়ে বিজয়ের চেতনা ধারণ করেন।
বিজয়ফুলের আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছাদূত হলেন সেলিম জাহান ও বিজয়ফুলের লন্ডনে অপর দুজন শুভেচ্ছাদূত হলেন গৌরী চৌধুরী ও ঊর্মি মাযহার।