বাংলিশ, বাংইটা, বাংজার্মা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

ছেলে আমাকে বলে, ‘বাবা, আয়াত (আমার মেয়ে) আমারে লইয়া গেছে না।’ মেয়ের কথার ভেতর মাঝেমধ্যে আঞ্চলিকতার টান আসে। যেমন ‘ধরোছেন’। আমিও চাই যে আমার ছেলেমেয়েরা আমার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলুক। কারণ, আমাদের আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে কিছুটা হলেও বাংলার গন্ধ পাওয়া যায়। যদিও প্রবাসে থেকে ছেলেমেয়েদের আঞ্চলিক ভাষা শেখানো অনেক কঠিন। ঘরের ভেতর আমরা সাধারণত শিশুদের সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলি, যা বাধ্যতামূলক। তবে মাঝেমধ্যে মেয়ের সঙ্গে ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলি। যাতে সে ইতালিয়ান ভাষাটা না ভুলে যায়। যেহেতু তার জন্ম ইতালিতে এবং ইতালিয়ান নাগরিকত্ব আছে। সুইজারল্যান্ডে বড় হওয়া শিশুরা অনেকগুলো ভাষা জানে, কিন্তু আমাদের বাঙালিদের ভাষা শুনলে কষ্ট লাগে।

আসলে আমরা কোন ভাষায় কথা বলি, তা জানি না; কথা বলার সময় বাংলার সঙ্গে ইংরেজি দু–একটা শব্দ থাকবেই। এটাকে বলা হয় বাংলিশ। একজন বাঙালি আরেকজন বাঙালির সঙ্গে কথা বলবেন, সেখানেও বাংলিশ। বাংলা ভাষার মধ্যে অনেক বিদেশি শব্দ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছে। অনেক চেষ্টা করেও আমরা সম্পূর্ণ বাংলায় কথা বলতে পারি না অভ্যাসের কারণে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ৯০ ভাগ ভিনদেশি শব্দ আর ১০ অথবা ৫ ভাগ বাংলা শব্দ দিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

এ রকম অনেক ভাষা আছে যেমন বাংইটা (বাংলা + ইতালিয়ান), বাংজার্মা (বাংলা + জার্মান)। কিন্তু এক ইতালিয়ান নাগরিক যদি আরেক ইতালিয়ান নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁরা শুধুই ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলেন। জার্মানরা যদি জার্মানদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন শুধু জার্মান ভাষায় কথা বলবেন। কিন্তু এক বাঙালি আরেক বাঙালির সঙ্গে কথা বললে বাংলায় কথা বলতে পারেন না। আমার ধারণা, যাঁরা বাংলিশ ভাষায় কথা বলেন, তাঁরা না জানেন ভালো করে বাংলা, না জানেন ভালো করে ইংলিশ। এটা বাংইটা, বাংজার্মার ক্ষেত্রেও একই। ফেব্রুয়ারি মাস এই মাস ভাষার মাস। আসুন আমরা জগাখিচুড়ি ভাষা ছেড়ে বাংলা ভাষার চর্চা করি। বাংলা ভাষার মধ্যে দুই–একটা ইংরেজি শব্দ না বলে সম্পূর্ণ বাংলাতেই বলার অভ্যাস করি। অনেকেই ভাবতে পারেন, কথা বলার মধ্যে দু-একটা ইংরেজি শব্দ বললে নিজেকে আধুনিক মনে হতে পারে। দু–একটা ইংরেজি শব্দ না বলে সম্পূর্ণ ইংরেজিতে কথা বলুন নয়তো সম্পূর্ণ বাংলায় কথা বলুন। আঞ্চলিক হলে তো কোনো কথাই নেই, যার মধ্যে শিকড়ের গন্ধ আছে।

মনে একটা প্রশ্ন জাগে। বাংলাদেশে একজন শিক্ষার্থী ১২ বছর ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেও কেন ভালো করে ইংরেজি বলতে পারে না? আর সুইজারল্যান্ডে আমার মেয়ে দুই বছর যাবৎ ইংরেজি শিক্ষা শুরু করেছে, তাদের ইংরেজি বলার ধরন দেখে মনে হয়, বাংলাদেশের ১২ বছর শিক্ষা গ্রহণের চেয়ে ভালো পারে। আমার কথার মধ্যে যদি মনে কষ্ট পাইন, তাইলে মাফ করে দিইন যে...