যুবকদের চাকরি প্রত্যাশার সংকট: রেমিট্যান্স, মানবিক দায়বদ্ধতা ও সম্ভাবনার সন্ধান
প্রতিদিন আমার কাছে ই–মেইল, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে একের পর এক বার্তা আসে। বার্তাগুলো আসে তরুণ শিক্ষার্থী, পেশাজীবী কিংবা পড়াশোনা শেষ করে বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করা যুবকদের কাছ থেকে। তাঁদের প্রত্যেকের কথা একটাই—‘আপনি কি কোনোভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারেন? কোনো একটি সুযোগ তৈরি করতে পারেন, যেখান থেকে নতুন করে শুরু করা যায়?’
সদ্য লিখিত একটি বার্তা আমার চোখে পড়েছে, যার কিছু অংশ এমন, ‘স্যার, আমি (নাম উল্লেখ করিনি) একজন যুবক, বাংলাদেশ থেকে আপনাকে লিখছি। আমি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাস্টার্স শেষ করেছি এবং হোটেল ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেছি। অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছি, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। আমার হাউসকিপিংয়ে ৯ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। ইউরোপ আমার স্বপ্ন, যদি আপনি আমাকে সাহায্য করেন, আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’
বার্তাগুলো পড়লে মনে হয়, যেন পুরো একটি প্রজন্ম তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আকুল প্রার্থনা করছে। এ শুধু একটি চিঠি বা বার্তা নয়, এটি বাংলাদেশের লাখো তরুণের সংগ্রামের গল্প।
আমাদের দূতাবাসগুলো, যাদের কাজ এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা, তারা যেন নিঃস্পৃহ। রাষ্ট্রের মনোযোগও যেন কেবল তাঁদের দিকে, যাঁদের জীবনে সবকিছুই ইতিমধ্যে ঠিকঠাক। কিন্তু এই তরুণেরা? তাঁদের জন্য কি কেউ ভাবছে? তাঁদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কি আমাদের নয়?
এই চিঠি ও প্রতিদিন আসা বার্তাগুলো আমাকে গভীরভাবে দুশ্চিন্তায় ফেলে। দেশের হাজারো যুবকের স্বপ্ন পূরণের জন্য কি আমরা সক্রিয় উদ্যোগ নিতে পারি না? বাস্তবিকভাবে আমরা যদি আমাদের কূটনৈতিক শক্তি ও সামাজিক উদ্যোগগুলো কার্যকর করি, তবে এই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।
বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে চাকরি খোঁজার প্রক্রিয়া একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। অনেক যুবক উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও পেশাগত সুযোগের অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এটি কেবল একটি ব্যক্তিবিশেষের সমস্যা নয়; বরং আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুতর মানবিক চ্যালেঞ্জ।
যুবকদের চাকরির অভাব তাঁদের জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। উপরন্তু চাকরি খোঁজার সময় বিশেষ প্রস্তুতি বা দিকনির্দেশনার অভাব তাঁদের হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। তবে এ সমস্যার সমাধানে আমাদের হাতে কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে।
এমন অসংখ্য চিঠি আমি প্রতিনিয়ত পাই। এটি শুধু একজন তরুণের কষ্টের কথা নয়; বরং হাজারো বেকারের অন্তর্দৃষ্টি, যাঁদের সংগ্রাম প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। অথচ আমাদের রাষ্ট্র, যার জন্য এত কিছু, সে রাষ্ট্র কি কখনো তাদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে? বিশ্বের এক প্রান্তে আমরা প্রফেশনালদের পাঠাচ্ছি, আবার অন্য প্রান্তে লাখো বেকার যুবক কীভাবে জীবনধারণ করবেন, এ জন্য কি কোনো সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে? এগুলোই আমার চিন্তা এবং এভাবেই আমি তাঁদের হয়ে বার্তা নিয়ে এই চিঠি লিখছি।
বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে কর্মসংস্থানের অভাব একটি ভয়াবহ বাস্তবতা। উচ্চশিক্ষিত যুবকেরা, বিশেষ করে যাঁদের পেশাগত দক্ষতার অভাব নেই, তাঁদেরও চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই। এটি আমাদের সমাজের জন্য একটি মানবিক সংকট। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, যা যুবকদের জন্য বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো সম্ভব নয়। চাকরি খোঁজার সময়ও যেন পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ছেন তাঁরা। যেখানে দিকনির্দেশনা বা প্রস্তুতির অভাব। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারি? এর কিছু সমাধান আমাদের হাতে রয়েছে।
সম্ভাব্য উপায়
১. বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিশেষ বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। হোটেল ম্যানেজমেন্ট, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য খাত ও অন্য প্রয়োজনীয় খাতে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব। এ পদক্ষেপটি তাঁদের কর্মজীবনে নতুন দিশা দেখাবে এবং অভ্যন্তরীণ দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাবে।
এ ছাড়া রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ও দেশের শিল্পপতিদের কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা আশা করা যেতে পারে, তা হলো পেশাগত বা কর্মমুখী শিক্ষা উন্নত করা। বিশেষ করে, ভোকেশনাল (বৃত্তিমূলক) শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার উন্নতি অত্যন্ত জরুরি। আমাদের যুবকদের এ ধরনের দক্ষতা শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তাঁরা বিদেশে কাজের সুযোগ পেতে পারেন। এর মধ্যে সেবা খাত, যেমন নার্সিং, সিকিউরিটি গার্ড, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত পেশাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
এই পেশাগুলোয় সফল হওয়ার জন্য দক্ষ কর্মী তৈরি করার পাশাপাশি সঠিক মেন্টর নিয়োগ করা, ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিদেশে কাজের পরিবেশ ও কৃষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে যাওয়ার আগে যুবকদের ন্যূনতম ভাষাগত দক্ষতা ও সামাজিক আচরণের কিছু প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হলে তাঁদের কর্মজীবন অনেক বেশি সফল ও মসৃণ হবে। যেমন নার্সিং বা সেবিকার ক্ষেত্রে বিদেশি হাসপাতালে কাজ করার জন্য শুধু পেশাগত দক্ষতা নয়, দেশটির সংস্কৃতি, ভাষা ও কাজের পরিবেশ জানাও জরুরি।
২. স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি
যদি সরকার ও বেসরকারি খাত একযোগে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সহায়তা দেয়, তবে অনেক যুবক নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সরকারি প্রণোদনা, নীতি সহায়তা ও কার্যকর উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
৩. সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্ব
কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা যেতে পারে। এতে যুবকেরা তাঁদের দক্ষতার ভিত্তিতে উপযুক্ত চাকরি পেতে সক্ষম হবে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
৪. নেটওয়ার্কিং ও সংযোগ স্থাপন
বিশ্বব্যাপী চাকরির সুযোগের প্ল্যাটফর্মগুলোতে যুবকদের জন্য নেটওয়ার্কিং তৈরি করা অপরিহার্য। চাকরির মেলা ও কর্মশালার আয়োজনের মাধ্যমে তাঁদের পেশাদারদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ বাড়ানো যেতে পারে। এটি তাঁদের চাকরি খোঁজার সুযোগ বাড়িয়ে এক নতুন জীবন দেবে।
৫. মনোবল বৃদ্ধি
যুবকদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বিশেষ মনোবল বৃদ্ধির কর্মসূচি চালানো দরকার। তাঁদের প্রেরণামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী ও সমাজে অবদান রাখার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এ উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।
প্রতিকার
১. সরকারি উদ্যোগ
সরকারকে যুবকদের জন্য দক্ষতার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এটি শুধু চাকরি সৃষ্টিই নয়, তাঁদের জীবনে উন্নতির পথও উন্মুক্ত করবে। প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোয় আরও বেশি যুবককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং তাঁদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণের ফলে বিদেশে চাকরি করার সুযোগগুলো তাঁদের জন্য অন্যদের তুলনায় আরও ভালো হবে। তাঁরা শুধু নিজের দেশে নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে, যা দেশের জন্য একটি বড় অর্জন হতে পারে। দেশের শিল্পপতিদের উচিত তাঁদের প্রতিষ্ঠানে এমন প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তুলতে ও যুবকদের মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগে উৎসাহিত করতে, যা তাঁদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে।
২. স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের উদ্যোগ
স্থানীয় নেতাদের উচিত তাঁদের এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন করা। এ ধরনের সক্রিয় উদ্যোগগুলো যুবকদের জন্য নতুন দিশা ও সুযোগ সৃষ্টি করবে।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির ব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির মাধ্যমে চাকরির সুযোগ ও তথ্য একযোগে ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। এতে যুবকেরা সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন এবং কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এটি তাঁদের পেশাগত জীবনকে আরও সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে।
কূটনৈতিকদের করণীয়
বর্তমান পরিস্থিতিতে কূটনীতিকদের একটি কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। দেশের বাইরে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কল্যাণ ও তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার জন্য কূটনীতিকদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
১. নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া
কূটনীতিকদের উচিত বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করা এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া। এতে দেশের কূটনৈতিক উদ্যোগগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
২. দক্ষ কর্মীর প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে, কূটনীতিকেরা স্থানীয় বাজারে কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করে তদনুসারে কর্মী প্রস্তুত করতে পারেন। এতে দেশের পেশাদারদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
৩. স্থানীয় নেটওয়ার্ক গঠন
কূটনীতিকদের উচিত স্থানীয় ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে বাংলাদেশের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। এটি শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টিই নয়, আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো আরও দৃঢ় করবে।
উদাহরণ ও সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য বা যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাঁদের জন্য চাকরির সুযোগের অভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, ইতালিসহ অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী ও দক্ষ কর্মী নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এটি প্রমাণ করে, যদি আমাদের কূটনৈতিক অঙ্গন আরও সক্রিয় ও সমন্বিতভাবে কাজ করে, তবে এসব উদ্যোগের মাধ্যমে লাখো বেকারের জীবন বদলে দেওয়া সম্ভব। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো উদ্যোক্তা ও সমাজসেবীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে আমাদের দেশও আন্তর্জাতিক পরিসরে দক্ষ কর্মী প্রেরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারবে।
ড. ইউনূস যেখানে দরিদ্র ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাজ করছেন, সেটি আমাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। আমাদের কূটনীতিকেরা যদি তাঁর মতো সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন, তবে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের জন্য আরও বড় সুযোগ তৈরি হবে।
আমাদের কূটনীতিকেরা যত বেশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষ কর্মী প্রেরণের জন্য কাজ করবেন, তত দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। যুবকেরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাবেন আর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ একটি শক্ত ভিত্তি পাবে।
সর্বোপরি প্রবাসে যাঁরা দীর্ঘ বছর ধরে আমার মতো কর্মজীবী রয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে আশা করা যেতে পারে যে তাঁরা শুধু নিজেদের স্বার্থে নয়; বরং দেশের উন্নতির জন্যও সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন। এই প্রবাসী কমিউনিটি, যারা বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে প্রতিষ্ঠিত, তাদের কাছে একধরনের দায়িত্ব রয়েছে—যেমন আমি ব্যক্তিগতভাবে বহু মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীকে বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছি। আমি তাঁদের শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছি এমন নয়; বরং তাঁদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রতি সচেতনতা তৈরি করারও চেষ্টা করেছি।
প্রবাসী কর্মজীবীরা যে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, তা দেশের যুবসমাজের জন্য অমূল্য। আমাদের উচিত, তাঁদের অভিজ্ঞতা ও পেশাদার নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা। শুধু অর্থের দিক থেকে নয়, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি বিশ্বের নানা প্রান্তে নতুন সুযোগ-সুবিধা বা স্কলারশিপের খবর, চাকরির বাজারের চাহিদা ও নানা দেশে অভ্যন্তরীণ সুযোগের বিষয়গুলো শেয়ার করা আমাদের দায়িত্ব।
আমরা যদি একযোগে এ ধরনের সহায়তা প্রদান করি, তবে আমাদের দেশে মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অনাহূত যুবকদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। একজন প্রবাসী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, শুধু নিজের উন্নতির দিকে নজর না দিয়ে অন্যদের এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করা—এটাই হবে আমাদের প্রকৃত মানবিক দায়বদ্ধতা।
সম্ভাবনার সন্ধান
যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সব সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে যুবকদের প্রতি সহযোগিতা প্রদানে উৎসাহী করা। সামাজিক নেটওয়ার্ক ও সোশ্যাল মিডিয়া যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। যদি আমরা সহযোগিতা করি, তবে এই সংকটকে একটি সুযোগে পরিণত করা সম্ভব।
আসুন, সবাই মিলে একটি মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি। যুবকদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ তৈরি করি।
*লেখক: রহমান মৃধা, লেখক, সুইডেন