যুক্তরাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে যে অভিজ্ঞতা হলো আমার

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে আমি এক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছিলাম, যা আজও মনে করলে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। নির্ধারিত নির্বাচনী বাজেটের বাইরে অসতর্কতাবশত মাত্র পাঁচ পাউন্ড বেশি খরচ হওয়ায় আমার প্রার্থিতা প্রায় বাতিল হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

ফলাফল ঘোষণার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে এঙ্গলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন ও ডেমোক্রেটিক টিমের ধারাবাহিক বৈঠকে অংশ নিয়ে জবাবদিহি করতে হয়েছে। বেলা ১টায় ফলাফল ঘোষণার কথা থাকলেও হঠাৎ জানানো হয় সেদিন আর ফলাফল ঘোষণা করা হবে না। সেই মুহূর্তে আমি শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলাম, শেষ পর্যন্ত না ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যাই। টানা কয়েক সপ্তাহের কঠিন পরিশ্রম যেন একটি ছোট্ট ভুলের কারণে নষ্ট হতে বসেছিল।

অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছিল না। অবশেষে আমার সঙ্গে ফাইনাল প্যানেল মিটিংয়ের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। অফিশিয়াল ফলাফল ঘোষণার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে ই–মেইলে আমার প্রার্থিতা–সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পৌঁছায়।

আমার ব্যাখ্যাকে ‘মাইনর মিসটেক’ হিসেবে গ্রহণ করে তারা এবং শেষ পর্যন্ত আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১ হাজার ২০০ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে আমি লন্ডন ক‍্যাম্পাস ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই। অথচ সামান্য অসতর্কতার কারণে একসময় মনে হয়েছিল সব হারাতে বসেছি। এ অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, পলিটিকাল ইন্টেগ্রিটি ও জবাবদিহি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আজ যদি ছাত্ররা সততা ও ন্যায়পরায়ণতার চর্চা না করে, তবে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব থেকে আমরা কী আশা করব? আর কবে আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাবে? বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শেখার স্থান, যেখানে শুদ্ধ চর্চার ভেতর দিয়ে আগামীর নেতৃত্ব তৈরি হয়। তাই কোনো ইস্যুতেই আপস গ্রহণযোগ্য নয়।

সে সময়ে যদিও সাময়িকভাবে আমাকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছিল, তবু এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, যা ভবিষ্যতে আমার পথচলায় সহায়ক হবে। এটাই প্রকৃত ডেমোক্রেটিক প্র্যাকটিস।

লেখক: নাঈম হাসান, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, এঙ্গলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ, যুক্তরাজ্য।