দুই যুগের আলো
দুই যুগ করল প্রথম আলো...
২৪ বছর! ভাবতেই অবাক লাগছে, সময় কত দ্রুতগতিতে দৌড়ায়।
সেই ১৯৯৮ সালে, হঠাৎ একদিন শুনলাম, বাসায় একটা নতুন পেপার রাখা হচ্ছে, নাম প্রথম আলো। সবে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। নানা ধরনের চিন্তা—কোথায় ভর্তি হব, নানা দিকে ভর্তি পরীক্ষা, আমি বাসায় বসে বসে গল্পের বই পড়ি। বাসা থেকে কো-এডুকেশনে পড়তে দেবে না, বাড়ির বড় এবং একমাত্র মেয়ে। এমনিতেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা মেয়েদের জন্য তৈরি করা থাকে সমাজে। আমার জন্য ছিল আরও কিছুটা বেশি। এর মধ্যে প্রথম আলো এল একপশলা বৃষ্টি হয়ে...
নতুন পত্রিকা খবরাখবর দিয়ে যতটা নজর কাড়ল, আমার কাছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নজরে এল ফিচার দিয়ে।
বাড়ির বড়দের অবশ্য খবর নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখেছি, কিন্তু আমার দৌড় ছিল প্রথম পাতা আর বড়জোর শেষ পাতা পর্যন্ত, বরং হুমড়ি খেয়ে পড়তাম শনিবারে ছুটির দিনে, সোমবার আলপিন, মঙ্গলবার নকশা, বুধবার বন্ধুসভা, বৃহস্পতিবার বিনোদন পাতা নিয়ে...
ছুটির দিনে তো আমি এখনো মিস করি, ছুটির দিনের সব লেখাই ভালো লাগত, একদম প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা—সবকিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তাম।
শ্রদ্ধেয় কাউসার আহমেদ চৌধুরীর রাশিফল পড়তেও খুব ভালো লাগত, একদমই ভিন্নভাবে লিখতেন, কীভাবে জানি না তাঁর কিছু কথা মিলেও যেত!
আলপিনের কথা আলাদা করে না বললেই নয়...
এত খোঁচা আর এত হাসি—একই সঙ্গে কেবল আলপিনেই মিলত তখন। এই যে এখন লিখছি, তাতেও হাসি পাচ্ছে আলপিনের কথা মনে করে। জীবনযাপন, ফ্যাশনে নকশা—বেশ নজর কেড়েছিল, তখন আমার যে বয়স, বিনোদন পাতাতেও সমান আগ্রহ...কোন নায়ক কী বললেন, কোন নায়িকা কী পরলেন ইত্যাদি...
সব মিলিয়ে প্রথম আলো হয়ে উঠল বাসায় অপরিহার্য।
ভাইবোনদের মধ্যে কাড়াকাড়ি লেগে যেত শনিবার কে আগে ছুটির দিনে দখল নিয়ে পড়ে ফেলবে, তা নিয়ে...
এভাবেই বহুদিন গেল, এরপর মাস গড়িয়ে বছর পার হলো, বছরের পর বছর ফুরাল, একটা সময় জীবনযাপনে প্রথম আলো পড়া অভ্যাসে পরিণত হলো...সেই অভ্যাস দেশ ছাড়ার আগপর্যন্ত বহাল তবিয়তে ছিল।
প্রবাসে এসেও যখনই দেশের খবর জানতে ইচ্ছা করে, তখনো প্রথম আলোর অনলাইনই আশার আলো।
এখন ভাবতে অবাক লাগে, মাঝেমধ্যে সেই প্রথম আলোতেই এখন লিখি!
নিজের লেখা প্রথম আলোতে পড়ি...
বিস্ময়কর অনুভূতি!
প্রথম আলোর আলো আরও অনেক যুগ পেরিয়ে যাক, আলো ছড়াক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।