অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বামপন্থী ও প্রগতিশীলদের আহ্বান
ফ্যাসিবাদের ভিত্তি ধ্বংস ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করুন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ফ্যাসিবাদের ভিত্তি ধ্বংস করে সমতাভিত্তিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয় লন্ডন বামফ্রন্ট ও অন্য সংগঠনের এক যৌথ সভায়। গত রোববার (২৫ আগস্ট) পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশ জাসদের শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় বলা হয়, ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান হলেও ফ্যাসিবাদের ভিত্তি ধ্বংস হয়নি। বিজয়ের লক্ষ্য অর্জন ও সংস্কার সম্পূর্ণ করতে ছাত্র-জনতার প্রতি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম জারি রাখার আহ্বান জানানো হয়।
সভার শুরুতে গণ–আন্দোলনের সব শহীদ ও বন্যায় মৃতদের এবং তেল গ্যাস রক্ষা আন্দোলনের নেতা প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষক গোলাম মুর্শিদ, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভটাচার্যের মৃত্যুতে গভীর শোক ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরা হয়—
সমতাভিত্তিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে;
কেবল ক্ষমতার হাত বদল নয়, ফ্যাসিবাদের নিবর্তনমূলক সব ভিত্তির অবসান ঘটাতে হবে;
সব ধরনের নিবর্তনমূলক আইন ও ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে;
সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে;
বৈষম্য নিরসন ও সমতা অর্জনের লক্ষ্যে সব ধরনের সামাজিক বৈষম্য, আয় ও সম্পদের বৈষম্য নিরসনের পদক্ষেপ নিতে হবে;
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও বঙ্গোপসাগরে কোনো বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা যাবে না;
ভারতের সঙ্গে সব চুক্তি প্রকাশ ও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। দেশের স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে কারও প্রতি বৈরী বা নতজানু নয়—এমন স্বাধীন ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে;
নির্বাচন কমিশন আইনকে সংস্কার করতে হবে, যাতে করে নির্বাচন কমিশন সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার ক্ষমতা পায়;
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
শ্রমিক কৃষকসহ মেহনতি মানুষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে;
আদিবাসীদের ন্যায়সংগত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তি কর্তৃক দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার ভাস্কর্য ধ্বংস সাধনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও উপাসনালয়ে হামলার নিন্দা, হামলার বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। অভ্যুত্থানোত্তর প্রতিহিংসা ও শারীরিক হামলা বন্ধ করতে হবে;
দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তি অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করতে হবে ও লুটপাটকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
সব ধরনের দখল, পুনর্দখল ও চাদাবাজি, ঘুষ বন্ধ করতে হবে। জড়িত বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় বক্তব্য দেন বিশেষ বক্তা ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আবেদ আলী, নিসার আহমেদ, আমজাদ খান, বাসদ মার্ক্সবাদীর মোস্তফা ফারুক ও বাবলু খন্দকার, বাংলাদেশ সলিডারিটি গ্রুপের আখতার সোবহান মাসরুর ও আয়েশা সিদ্দিকা, ওয়ার্কার্স কাউন্সিলের শাহরিয়ার বিন আলী, ওয়ালি রহমান, মঞ্জুলিকা জামালী ও সাবিনা শ্রাবণী, উদীচীর রফিকুল হাসান জিন্নাহ, বাসদের হুমায়ুন খান, বাংলাদেশ জাসদের বেলায়েত হোসেন পলিট, ফেন্ডস অফ ছাত্র ইউনিয়নের গোলাম আকবর মুক্তা প্রমুখ।