সিডনিতে শেষ হলো দুটি বইমেলা
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সম্প্রতি দুটি বইমেলা আয়োজিত হয়েছে, যা স্থানীয় বাংলাদেশি ও বহু সংস্কৃতির সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ক্যাম্বেলটাউন ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাশফিল্ড পার্কে একুশে বইমেলা আয়োজিত হয়। এ মেলা দুটি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রদায়ের মেলবন্ধনকে আরও শক্তিশালী করেছে।
ক্যাম্বেলটাউনের ইঙ্গেলবার্ন হ্যালিন্যান পার্কে আয়োজিত বইমেলাটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা। আয়োজক সংগঠন সাবকন্টিনেন্ট ফ্রেন্ডস অব ক্যাম্বেলটাউনের সাধারণ সম্পাদক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘প্রথমবার বইমেলা হিসেবে আমরা অনেকটায় সফল, তবে আগামী দিনে আরও ভালো করব। মেলায় বিভিন্ন ভাষার বইয়ের স্টল, বহুদেশীয় লেখকদের আলোচনা, ছোটদের ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশীয় খাবারের স্টল স্থান পেয়েছে।’
মেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিল ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রস্তাবিত রূপরেখার ভিউ-ডি আর্কিটেক্ট নকশাকৃত প্রদর্শন। স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই মেলা আমাদের সন্তানদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ দিয়েছে। এটি সত্যিই অনন্য এক আয়োজন।’
২৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাশফিল্ড পার্কে একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বইমেলা। সকাল ৯টা ২১ মিনিটে প্রভাতফেরির মাধ্যমে শুরু হয় দিনব্যাপী এই আয়োজন। মেলায় মহান ভাষা আন্দোলনের স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, দেশি-বিদেশি লেখকদের বইয়ের স্টল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রক্তদান কর্মসূচি ছিল।
সিডনির একুশে বইমেলার আয়োজক সংগঠন একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে এই মেলা আয়োজন করেছি। এটি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার একটি মাধ্যম।’ সিডনিপ্রবাসী লেখক এম এ জলিল বলেন, ‘এই মেলা আমাদের প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য একটি বাৎসরিক উৎসব। এটি আমাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত রাখে।’
দুটি বইমেলাই স্থানীয় সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সিডনির প্রিয়ভাষী মানুষ আশীষ ভট্টাচার্য। মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘হ্যালো অস্ট্রেলিয়া’। তিনি বলেন, একুশে বইমেলায় বইয়ের পাশাপাশি বিশেষ আকর্ষণে পরিণত হয়েছে চিত্রপ্রদর্শনী। এবার বেশ উৎসাহ দেখা গেছে চিত্রপ্রদর্শনীটি নিয়ে। এটা ভালো লেগেছে।’ প্রতিবারের মতো সিডনির পরিচিত ছোটগল্পকার ইসহাক হাফিজের বই ‘মহীসোপান’ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই বইমেলা শুধু একটি সাহিত্যিক আয়োজন নয়, এটি ছিল একটি বহু সংস্কৃতির উৎসব।’
অন্যদিকে বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে সুদূর ব্রিসবেন থেকে এসেছেন লেখক ও প্রকৌশলী এম মাহমুদুল হাসান। এবার প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার’ বইটি। তিনি বলেন, ‘একুশে বইমেলা আমাদের জন্য গর্বের। এটি আমাদের ঐতিহ্যকে প্রবাসে জীবন্ত রাখে।’ এবারের বইমেলায় সিডনিপ্রবাসী তরুণ ঔপন্যাসিক আরিফুর রহমানের ‘শেষ তিন ঘণ্টা’ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিডনির একুশে বইমেলা ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আর ক্যাম্বেলটাউনে প্রথম হলেও উদ্যোগটি ভালো। বইমেলাগুলো আমাদের সন্তানদের বই পড়ায় উৎসাহিত করবে।’
বইমেলা উপলক্ষে দুটি মেলায় স্মরণিকা ‘ধারা’ ও ‘মাতৃভাষা’ প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া তানিম হায়াত খানের ‘রাজিতের কিছু গল্প’ ও আসমা আলম কাশফীর ‘ছায়ার শহর’ প্রকাশিত হয়েছে।
সিডনির ক্যাম্বেলটাউন ও অ্যাশফিল্ডে আয়োজিত এই দুটি বইমেলা স্থানীয় বাংলাদেশি ও বহু সংস্কৃতির সম্প্রদায়ের মধ্যে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও মজবুত করেছে। আয়োজকদের নিরলস প্রচেষ্টা ও স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসাহ এ আয়োজনগুলোকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিচ্ছে। আগামী দিনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আয়োজকেরা।