দরজায় এআই, আমাদেরও জানতে হবে

এআই নিয়ে আমাদেরও জানতে হবে।ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

প্রযুক্তি দুনিয়ায় যে সুনামি বইতে শুরু করেছে, তার নাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, যা একসময় ছিল কেবল কল্পবিজ্ঞানের বিষয়, তা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে এবং বদলে দিচ্ছে সৃজনশীলতা ও পেশাদারত্বের চেনা সংজ্ঞা। উপস্থাপনা তৈরি থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট বানানো, ছবি আঁকা, এমনকি গান তৈরি—সবকিছুই এখন চলে এসেছে সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তিগত বিপ্লব মোকাবিলার জন্য এখনই প্রস্তুত না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে।

উপস্থাপনা এখন আর নকশাকারীর হাতে বন্দী নয়

কিছুদিন আগেও একটি আকর্ষণীয় উপস্থাপনা বা প্রেজেন্টেশন তৈরির জন্য পেশাদার নকশাকারীর ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু এখন ‘নেপকিন এআই’ বা ‘গামা’র মতো টুলগুলো সেই ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ব্যবহারকারী শুধু তার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেই, যেমন ‘স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে একটি পরিকল্পনা’ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করে দিচ্ছে চোখধাঁধানো ইনফোগ্রাফিক, ফ্লোচার্ট বা স্লাইড। এর ফলে সময় এ অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে এবং যে কেউ তার ধারণাগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন।

কোডিং ছাড়াই তৈরি হচ্ছে ওয়েবসাইট

একইভাবে ওয়েবসাইট তৈরির মতো জটিল কাজও এখন আর শুধু ওয়েব ডেভেলপারদের একচেটিয়া অধিকারে নেই। ‘ফ্রেমার’ এবং ‘টেনওয়েব এআই বিল্ডারের’ মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে যে কেউ কোডিং জ্ঞান ছাড়াই নিজের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারছেন। একজন লেখক তাঁর কবিতার জন্য ব্লগ কিংবা একজন শিল্পী তাঁর কাজের পোর্টফোলিও এখন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বানিয়ে ফেলতে পারেন, যে কাজের জন্য আগে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

শিল্প এখন বর্ণনার অপেক্ষায়

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন শিল্পীর ভূমিকাও পালন করছে। ‘ডাল-ই ৩’, ‘লিওনার্দো এআই’ বা ‘মিডজার্নি’র মতো টুলগুলো ব্যবহারকারীর লেখা বর্ণনাকে ছবিতে রূপ দিচ্ছে। ‘রংধনুর নিচে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ভাই–বোন’ শুধু এটুকু লিখেই পাওয়া যাচ্ছে গল্পের বইয়ের জন্য অসাধারণ প্রচ্ছদ বা সিনেমার জন্য দৃশ্যপট। এর ফলে সৃজনশীলতার জগতে এক নতুন স্বাধীনতার দরজা খুলে গেছে, যেখানে কল্পনাকে দৃশ্যে রূপ দিতে এখন আর পেশাদার শিল্পী হওয়ার প্রয়োজন নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআইয়ের কারণে প্রযুক্তিগত বিপ্লব মোকাবিলার জন্য এখনই প্রস্তুত না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

একইভাবে ‘রানওয়ে এমএল’, ‘ক্লিং’ বা ‘সোরা এআইয়ের’ মতো টুলগুলো ভিডিও নির্মাণের জগতেও বিপ্লব নিয়ে এসেছে। সাধারণ লেখা বা নির্দেশনা থেকেই তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ, যা সংবাদ প্রতিবেদন, শিক্ষামূলক টিউটোরিয়াল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য কনটেন্ট তৈরিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে।

সুর, কণ্ঠ আর গল্প—সবই নিয়ন্ত্রণে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা এখন শব্দ ও সুরের জগতেও বিস্তৃত। ‘সুনো এআই’ ব্যবহার করে যে কেউ নিজের লেখা কথায় সুর বসিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গান তৈরি করতে পারছেন। অন্যদিকে ‘ইলেভেন ল্যাবস’ যেকোনো লেখাকে মানুষের আবেগময় কণ্ঠে রূপ দিচ্ছে। এর ফলে একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তিও তাঁর লেখা কবিতা শুনতে পারছেন জীবন্ত কোনো কণ্ঠে, যা কেবল প্রযুক্তির উন্নতিই নয়, এক মানবিক বিপ্লবও বটে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই উত্থান কোনো হুমকি নয় বরং এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। যে পেশাজীবীরা যত দ্রুত এই প্রযুক্তিকে নিজের কাজে ব্যবহার করতে শিখবেন, তাঁরা ততটাই এগিয়ে থাকবেন। তাই এখনই সময়, ভবিষ্যতের এই কড়া নাড়া শুনে জেগে ওঠার।