মেঘের রাজ্য ক্যামেরন হাইল্যান্ড

পাহাড়, সমতলভূমি আর সমুদ্রবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ মালয়েশিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে মূলত চিরবসন্তের দেশ বলা হয়। তবে একই দেশে রয়েছে ভিন্নধর্মী আবহাওয়াও।

সারা বছর না শীত না গরমের দেশে পহাং রাজ্যের একটি বড় অংশে বছরজুড়ে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে। এ রাজ্যেরই একটি শহর ক্যামেরন হাইল্যান্ড। সম্প্রতি মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে এ মেঘের রাজ্য ভ্রমণের আয়োজন করে এনজেড ওয়ার্ল্ড ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এসডিএন বিএসডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া এ ভ্রমণে অংশ নেন ৭৪ জন দর্শনার্থী।
মেঘের শহরে ফুলের বিছানা, স্ট্রবেরির বাগান, ক্যাকটাসের ভ্যালি, প্রজাপতির পার্ক, চা-বাগান, মনোমুগ্ধকর ঝরনা—সবই আছে। এই শহরের বিশাল পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে সবজির চাষাবাদ হয়, যা মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ শহরেই বিক্রি হয়। আর এসব চাষাবাদ করার জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা, যাঁদের অক্লান্ত শ্রমে-ঘামে ক্যামেরন হাইল্যান্ড আরও বেশি পরিচ্ছন্ন।

সম্প্রতি এক শনিবার সকাল আটটায় আমাদের যাত্রা শুরু হয় কুয়ালালামপুরের মেডান পাসার থেকে। যাত্রাপথে একাধিক বিরতি শেষে আমরা ক্যামেরন হাইল্যান্ডে পৌঁছাই দুপুর সোয়া ১২টায়। ২০৭ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৬১ কিলোমিটার পথ পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠতে হয়েছে। দুপুরের সূর্যটা এখানে বেশ শান্ত। মেঘের রাজ্যে আমাদের যাত্রার শুরুটা হয় ল্যাভেন্ডার গার্ডেন থেকে। তবে এ গার্ডেনে ল্যাভেন্ডারের পাশাপাশি শোভা পেয়েছে নানা ধরনের ফুল, পাতাবাহারের গাছ এবং স্ট্রবেরির বাগান।
মেঘের রাজ্য ক্যামেরন হাইল্যান্ডে প্রতিটা মুহূর্ত কাটে অন্য রকম মুগ্ধতায়।

ভ্রমণপিপাসুরা পাহাড় আর মেঘের সঙ্গে ছবি তুলতে দারুণ ব্যস্ত। স্ট্রবেরির বাগানে ঢুকে ইচ্ছেমতো ছিঁড়ে তা দাম পরিশোধ করে সঙ্গে নেওয়ার সুযোগ আছে এখানে।
ক্যামেরন হাইল্যান্ডের চা-বাগান অন্য যেকোনো স্থানের চা-বাগানের থেকে একটু বেশি সুন্দর। এখানকার চা মালয়েশিয়ার চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানিও হয়। যদিও সময় স্বল্পতার কারণে বাসে বসেই সড়কের পাশে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়েছে আমাদের।

ক্যামেরন হাইল্যান্ড ভ্রমণে রাতের সৌন্দর্য অন্য রকম। আর সে রাত যদি হয় চাঁদের আলোয় আলোকিত, তাহলে তো কথাই নেই। চাঁদনি রাতে পাহাড়ের চূড়ায় কোনো কটেজে রাত কাটালে মনে হবে আকাশের মধ্যেই বিচরণ করছি।

আমাদের এবারের সফরটা এক দিনের। আর আমাদের সফরসঙ্গীদের একটা বড় অংশের পরদিনের কর্মব্যস্ততা রয়েছে। চা-বাগান পেছনে রেখে তাই আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ঝরনা, যেখানে গা ভিজিয়ে প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা করেছেন ভ্রমণপিপাসু প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নামল। এবার আমাদের ফেরার পালা। যাত্রার শুরুতে বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাসের মধ্যে সবারই কমবেশি পারফরম্যান্স। আর যাত্রা শেষে ফেরার আগে লটারির ব্যবস্থা রাখা ছিল। যেখানে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম পুরস্কার ছিল কুয়ালালামপুর টু ঢাকা ওয়ানওয়ে এয়ার এশিয়ার টিকিট। দ্বিতীয় পুরস্কার কুয়ালালামপুর-লাংকাবি-কুয়ালালামপুর বিমানের টিকিট এবং তৃতীয় পুরস্কার হফ অন হফ অব বাসে কুয়ালালামপুর ভ্রমণের ২টি টিকিট। লটারি পর প্রশান্তির ভ্রমণ শেষে আমরা গন্তব্যে ফিরলাম ঠিক রাত ৯টায়।