বিজয়, আগস্ট ৫, ২০২৪
জুলাই মাসের মাঝামাঝি ছাত্রছাত্রীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরদার হয়েছিল। নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন খুব শান্তিপূর্ণভাবেই তাঁরা শুরু করেছিলেন। সংহতি জানানোর জন্য নিজের ফেসবুকে লিখলাম কিছু কথা, তাঁদের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।
তারপর শুরু হয়ে গেল কী অভব্য তাণ্ডব। রোজ দেখি মৃত্যুর মিছিল। কী অসাধারণ সাহসী ছেলে আবু সাঈদ বুক পেতে দিয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, নিজ দেশের মানুষ তাঁকে কিছু করবেন না। কষ্টে নীল হয়ে দেখলাম তাঁকে লুটিয়ে পড়তে।
একটু চোখ মেলে দেখুন ফ্রিল্যান্সার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে একজন সফল প্রতিভাবান মার্কেটর, ভ্রমণকারী, ফুটবলার, গায়ক, বয়েজ স্কাউট ছিলেন, যিনি মারা গেছেন ১৮ জুলাই। এতটুকু বয়সে ৫০ হাজার প্লাস রেমিট্যান্স দেশের জন্য আয় করেছিলেন তিনি।
সাংবাদিক প্রিয়, যাঁর ৪ বছরের বাচ্চা আছে। তিনি মারা গেছেন ১৯ জুলাই। বাচ্চাটা ওর বাবাকে খোঁজে। দেশের প্রতি তাঁর অবদান কে অস্বীকার করতে পারেন? মানুষ নিজ বাসাতেও নিরাপদ ছিলেন না। মৃত্যুর মিছিল থামছিল না।
তখন দেশের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করা হলো। আমেরিকা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কল করি, পাই না। দেশে আমার স্বজনেরা। জীবিকার প্রয়োজনে কাজ করতে হয়, খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না। কী কষ্ট কী কষ্ট। একটু-আধটু গলা শোনা শুরু করলাম তিন দিন পর জি-টকের মতো কার্ড সিস্টেমে।
তারপর দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইনজীবী মানজুর আল মতিন পিটিশন করেছেন গুলির বিরুদ্ধে। তাঁকে দেখলাম রাস্তায় পুলিশকে অনুরোধ করতে সন্তানদের নিরাপত্তায়। তাঁদের মতো সম্মানিত সুশীলদের অবদান দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অপরিসীম। আশাবাদী হলাম আমরা চোখ মুছে।
দেখলাম, একজন চীনে বসবাসকারী আবু সাঈদ দেশে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশ-বিদেশে সবাই তাদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করলেন।
জানলাম, বৈঠকের পর বৈঠক চলছে। অপেক্ষার প্রহর কাটে না। তারপর সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেলেন।
এখন চাই, নতুন দেশ পরিচালক গোষ্ঠী যিনি ন্যায়বিচার, ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা, সম-অধিকারের দাবিসহ সৎ দেশপ্রেমী রাজনীতিবিদদের সৎ প্রচেষ্টা দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, যাতে দেশ এগিয়ে যেতে পারে সামনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। লুটেরাদের শেষ হোক এই আন্দোলনের সঙ্গেই।
আর কোনো মৃত্যু চাই না। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার চাই।
যানবাহন, মেট্রোরেল, হাসপাতালসহ সব স্থাপনা অটুট থাকুক, যেন সাধারণ মানুষ এই সুবিধা পান। আমাদের সম্পদ সীমিত। শিক্ষাব্যবস্থা এমন হোক, যাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ দেশে বা বিদেশে কাজ করে খেতে পারি কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
সব শেষে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মানুষকে কথা বলা বন্ধ করা উচিত, সেটা যিনিই হোন না কেন। মানুষ সবাই সমান, আজকের রকেট সায়েন্টিস্ট কালকের রোগী। কী তফাত তখন তাঁর আর সাধারণ মানুষের মধ্যে? গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করে, নিজের কাজে পরিবর্তন এনে সামনে এগিয়ে যাওয়াই সফল লোকের লক্ষণ। পেশিশক্তি দুর্বলতার লক্ষণ—এই শিক্ষা হোক। সর্বোপরি ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি । সবাই সবাইকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, নিরাপত্তা দিই। সততার কোনো বিকল্প নেই, দেশপ্রেম এবং মানবিকতার কোনো বিকল্প নেই।