ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন

হানসি ক্রোনিয়েছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়া বরাবরই ক্রিকেট–বিশ্ব শাসন করা দেশ। নিজেদের মাটিতে টেস্টে তারা প্রায় অজেয়। আছে অতি গোছানো একটি ক্রিকেট বোর্ড, আছে দুর্দান্ত ডমেস্টিক স্ট্রাকচার ও ট্যালেন্ট খুঁজে খুঁজে বের করে ওদের হীরকখণ্ডে পরিণত করার যোগ্য কারিগর।

সেদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবাদের কারণে বহু বছর নির্বাসনে থাকার পরে সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা কেপলার ওয়েসেলস মাতৃভূমির টানে দলবদল করে ফেলেছেন। তিনিই দলটির সেরা ব্যাটসম্যান, সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ও অধিনায়ক। দলটিতে বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রমাণ করার ক্ষুধাও আছে, তারপরও অনভিজ্ঞতার কারণে সফররত আনকোরা দলটি মহাশক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার হাতে তখন মার খাচ্ছিল। টেস্ট ম্যাচটি জিততে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার পঁয়তাল্লিশের মতো রান প্রয়োজন, হাতে তখনো ছয় উইকেট। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে অধিনায়ক নিজের আঙুল ভেঙে ফেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বুঝে নিল এই সফরে ওরা অন্তত নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে না।

দূর দেশে বসে টিভিতে লাইভ দেখতে থাকা দর্শকেরাও হয়তো টিভি বন্ধ করে অন্যান্য কাজে হাত দিয়েছেন। এ সময়ে অধিনায়কের দায়িত্ব পড়ল অতি তরুণ ও অনভিজ্ঞ এক খেলোয়াড়ের ওপর। যুবকটির চেহারা সাধারণ কিন্তু ব্যক্তিত্ব এমন যে ওর পাশে দাঁড়ালেই মনে হয় ওর জন্মই হয়েছে দক্ষ হাতে পৃথিবী শাসনের উদ্দেশ্যে। ও একজন জন্মগত অধিনায়ক, নেতৃত্ব গুণ ওর রক্তে বইছে। কথাটি আমার নয়, দলের প্রধানতম ফাস্ট বোলার এলান ডোনাল্ডের। ‘সাদা বিদ্যুৎ’ নামে যে ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে গেছে।  

সেনাপতির বদলেই রণভূমিতে যেন ম্যাজিক ঘটে গেল। কাঁধ ঝুলে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান খেলোয়াড়েরা হঠাৎই গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়ার একের পর এক উইকেট তুলে নিতে শুরু করল। শতবর্ষ ধরে শাসন করা সম্রাট নিজের সেনাবাহিনীকে এলোমেলো হতে দেখে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে আবার একত্র করলেন। নতুন পরিকল্পনায় যুদ্ধ পরিচালনা করলেন। সাময়িক ধাক্কা সামলে আবারও জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। অস্ট্রেলিয়ার এটিই বৈশিষ্ট্য। আছে এক শ বছরের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা এবং মানসিকভাবেও ওরা সবার চেয়ে যোজন–যোজন এগিয়ে। ওরা মাঠে নামে কেবল একটি উদ্দেশ্যে, জয়! সে জন্য পরিস্থিতি বুঝে ক্ষণে ক্ষণে রণকৌশল পরিবর্তন ওদের বৈশিষ্ট্য। প্রতিপক্ষের একদম মুখের ভেতর থেকে জয় কেড়ে নিয়ে আসার কাজে ওরা সিদ্ধহস্ত।

জয় যখন কেবলই ছয়–সাত রান দূরে, তখনই বিপক্ষের নতুন সেনাপতির বুদ্ধির চালে অস্ত্র নামিয়ে দিতে বাধ্য হলেন অস্ট্রেলীয় দল। গোটা আফ্রিকা দল তখন তরুণ ‘সাময়িক’ অধিনায়ককে কাঁধে তুলে নিল। নিজভূমিতেও তখন সাদা–কালো সবার কণ্ঠেই ‘হান্সি’ ‘হান্সি’ রব! বিনয়ী চেহারার তরুণটি যেন তখন ঘোষণা করল ‘আমরা এসে গেছি! আমরাই বিশ্বের ১ নম্বর টেস্ট দল এবং ওয়ানডে দল হয়ে দেখাব!’
এমনই রূপকথার গল্পের মতো করেই ক্রিকেট–বিশ্বে ‘অধিনায়ক’ হান্সি ক্রনিয়ের আগমন ঘটেছিল।

ছিয়ানব্বই সালে ভারতের টাইটান কাপের এক ম্যাচে রান নিতে গিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি বোলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। দৌড়ে ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই ফিল্ডার উইকেট ভেঙে দেয়। ‘ক্রিকেট নিয়ম’ বলে জাবর কাটা বিশেষজ্ঞদের কাছে এটি ‘রান আউট!’ কারোর কিছু বলার নেই।

এদিকে হান্সিও মাঠে নামেন জয়ের উদ্দেশ্যে। যেকোনো মূল্যে জয় তাঁর চাই–ই চাই। ভারতের মাটিতে ভারত বধের চেয়ে বড় সম্মানী আর কী আছে?
কিন্তু ক্রিকেটে আরেকটি নিয়মও আছে এবং তা হচ্ছে ফিল্ডিং অধিনায়ক যদি আপিল উইথড্র করে নেন, তাহলে ব্যাটসম্যানকে আউট দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে ফিল্ডিং দল যদি ম্যাচ হেরেও যায়, ‘ক্রিকেট’ ঠিকই জিতে যাবে!
হান্সি ক্রনিয়ে ক্রিকেটকেই জিতিয়ে দিলেন। সৌরভ গাঙ্গুলিকে ডেকে বললেন, ‘চিন্তা করো না, ব্যাট করো।’

ক্রিকেটের যুগ বদলের শুরু হয় মূলত নব্বইয়ের দশকে। যদিও ওয়ানডে ক্রিকেট শুরু হয় সেই সত্তরের দিকে, কিন্তু খেলোয়াড়েরা তখনো ওয়ানডে ফরম্যাটকে টেস্টের সঙ্গে গুলিয়ে খেলতেন। টেস্টে দুই ইনিংস, ওয়ানডেতে একটি—এই যা পার্থক্য। নব্বইয়ের দশকেও অনেক ওয়ানডে লাল বল, সাদা পোশাকে হতো। ভিভিয়ান রিচার্ডস ছিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের শেষ কথা। তাঁকে অনুকরণ করেই ধীরে ধীরে মার্ক গ্রেটব্যাচ, মার্টিন ক্রো, সনাথ জয়সুরিয়া, সাঈদ আনোয়ার, শচীন টেন্ডুলকার, শহীদ আফ্রিদিরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। সেই সময়েই অনেক গ্রেট ক্যাপ্টেনের দেখা মিলেছিল। নিজেদের ধারালো বুদ্ধি দিয়ে যাঁরা খেলাটির পালা বদলে অবদান রেখেছিলেন। লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা তাঁদের একজন। ইমরান খান ছিলেন আরেকজন মোটিভেশনাল অধিনায়ক। ছাই ঘেঁটে মানিক খুঁজে আনায় যাঁর জুড়ি দ্বিতীয়টি নেই। হয়তো কোনো একদিন তাঁকে নিয়েও লিখব। ছিলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনও। নিজের দেশের মাটিকে ভারতের শক্ত ঘাঁটি বানিয়ে তোলায় যাঁর বিচক্ষণতা অনবদ্য। সৌরভ গাঙ্গুলি, ওয়াসিম আকরামও দারুণ ছিলেন। স্টিভ ওয়াহকে দেখলাম একটি অজেয় ক্রিকেট দল গড়ে তুলতে। সর্বকালের সর্বসেরা ওয়ানডে ও টেস্ট দলে অনায়াসেই তাঁর দলগুলো স্থান পাবে। কিন্তু ক্রিকেটকে আধুনিক করায় যদি বলা হয় কোনো অধিনায়কের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিল, আমি শুধু একা না, ক্রিকেট বুঝে, দেখেছে এমন যে কেউ এক বাক্যে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অধিনায়ক হান্সি ক্রনিয়ের নাম নেবে। একই সঙ্গে যিনি ছিলেন কিংবদন্তি ও আরেক দীর্ঘশ্বাসের নাম।
ওপরে দুইটি ঘটনা বললাম। আরও একটি টেস্ট ম্যাচের ঘটনা বলি।

আফ্রিকা এরই মধ্যে সফররত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে গেছে। শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছে। বৃষ্টি এসে বাগড়া দিল। ভেসে গেল ম্যাচের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন। পঞ্চম দিন খেলা হলেও ম্যাচটি যে ড্র হবে, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত।

এ সময়ে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। দক্ষিণ আফ্রিকা হঠাৎই ইনিংস ঘোষণা করে দিল। ইংলিশ অধিনায়ক নাসির হুসেইন প্রথম ইনিংস শূন্য রানে ঘোষণা করে দিলেন।

আফ্রিকাও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শূন্য রানে ঘোষণা করল। চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামবে, জিততে হলে আড়াই শ রানের মতো প্রয়োজন। মানে মরে যাওয়া টেস্ট ম্যাচটি হঠাৎই ওয়ানডের রূপ পেয়ে গেল। ইংলিশরা কি পারবে ম্যাচটি জিতে যেতে? নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা সব উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচটি জিতে যাবে? নাকি ইংল্যান্ড ড্রয়ের উদ্দেশ্যে ব্যাট করবে?
ইংলিশরা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিল। দক্ষিণ আফ্রিকাও ঝটপট উইকেট নিতে শুরু করে।
ম্যাচটি দুর্দান্তভাবে জমে যায়। শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সাউথ আফ্রিকা ম্যাচটি হারে।
আবারও ক্রিকেট–বিশ্ব হান্সির সিদ্ধান্তের জন্য বাহ বাহ করে ওঠে। আবারও ‘ক্রিকেট’ জিতে যায়।
কিন্তু এই ম্যাচটিই ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
পরে আসছি।

আগে বলে দিই ওর সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা কী কী করেছে।
প্রথমত, গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে ফিল্ডিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো দেশে খুব বেশি হলে একজন বা দুজন ভালো ফিল্ডার থাকত। যে ভালো ব্যাটসম্যান অথবা বোলার—মাঝেমধ্যে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরতে পারেন। তখনকার ভালো ফিল্ডার মানেই ছিল মিস ফিল্ডিং করবেন না, সহজ ক্যাচ ছাড়বেন না আর মাঝেমধ্যে ডাইভ দিতে পারেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা দেখাল ফিল্ডার উড়তেও পারে। জন্টি রোডস লেজেন্ডারি ফিল্ডার। অসম্ভব ক্যাচ ধরেন, অবিশ্বাস্য রান আউট করেন, এখানে–ওখানে ডাইভ দিয়ে দুই–চার করে ইনিংসপ্রতি ২০– ৩০ রান সেভ করে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিত। হান্সি এবং ওর কোচ বব উলমারের ফিলোসফি ছিল প্রতিটা ফিল্ডার যদি ম্যাচে একটা করেও রান বাঁচায়, তাহলেও ম্যাচে এগারো রান বোনাস পাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ কারণে ফিল্ডিংয়ের ওপর ওদের আলাদা গুরুত্ব থাকত। ফিল্ডিংকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ার প্রথম পথিকৃৎ হান্সি ক্রনিয়ের আফ্রিকা।

এখনকার যুগে প্রতিটা ড্রেসিংরুমে কোচিং স্টাফকে সামনে ল্যাপটপ খুলে বসে থাকতে দেখা যায়। টিভি পর্দায় ভেসে উঠে স্ট্যাটিস্টিকস, বিরাট কোহলি অফ স্টাম্পের বাইরের চতুর্থ স্টাম্পের এলাকায় খানিকটা দুর্বল। ওকে সেখানে বল ফেললে ও হয় মিস করে, না হয় ক্যাচ দেয়। কতবার মিস করেছে, কতবার আউট হয়েছে, সব ডেটা আমাদের সামনে ভেসে ওঠে।

সাকিব আল হাসান কতবার অফ স্পিনারের হাতে বধ হয়েছে, সে হিসাব চাইলেই পাওয়া যায়।

এগুলো সেই সময়ে কেউ কল্পনাও করত না। দক্ষিণ আফ্রিকা দলই প্রথম তা চালু করে। উলমার ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকত। দিস্তায় দিস্তায় কাগজ প্রিন্ট হতো। ওয়াসিম-ওয়াকাররা খেলার সময়ে হাসত, ‘ল্যাপটপে খেলা হচ্ছে নাকি?’
অথচ সেই ওয়াসিমই এখন বলেন, ‘আজকের যুগে সবই ডেটা! উলমার-ক্রনিয়েরা সময়ের আগের ক্রিকেট কারিগর।’

গোটা বিশ্ব মাথা চুলকে যার মীমাংসা খুঁজে পেত না, উলমার-ক্রনিয়ে জুটি ডেটা ঘেঁটেই বের করে ফেলতেন।

১৯৯৯ বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে দুই ওয়াহ ভাই স্টিভ ও মার্কের সঙ্গে শেন ওয়ার্ন
ছবি: রয়টার্স

শচীনকে অফ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলে তীব্র গতির ইনসুইঙ্গার দিতে হবে। ম্যাচে এলান ডোনাল্ড সেটাই করল এবং বোল্ড!
ওর নেতৃত্বেই উপমহাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত ৯৬ বিশ্বকাপে ওরা গ্রুপ পর্বে অপরাজেয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে এবং ব্রায়ান লারার অবিশ্বাস্য ইনিংসে ম্যাচ হেরে বসে। এখানে কিছুই করার নেই। লারা যেদিন দাঁড়িয়ে যেতেন, কম্পিউটার ডেটা, তথ্যপ্রযুক্তি, সুর-অসুরের বল কোনো কিছুতেই কাজ হতো না।

ওদের দুর্ভাগ্য ছিল যে লারা সেদিন ভালো খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তাঁর নেতৃত্বেই আইসিসির প্রথম নকআউট বিশ্বকাপ, যা বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নামে পরিচিত, দক্ষিণ আফ্রিকা সেটার চ্যাম্পিয়ন হয়। আমাদের ঢাকাতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ক্রিকেটের সেই মহাযজ্ঞ। আজকের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তখন ক্রিকেট খেলা হতো।

দীর্ঘ ২৫ বছর পর ভারত নিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারে আফ্রিকার কাছেই।
এখানে বলে রাখা ভালো, ওদের বোলিং কিন্তু বরাবরই ওয়ান ডাইমেনশনাল ছিল। ডোনাল্ড, পোলক, ক্যালিস, ক্লুজনার—সবাই ছিল ফাস্ট বোলার। বোলিং বৈচিত্র্য বলতে মাঝে দিয়ে কিছু মিডিয়াম পেসারের বোলিং। একটা কোয়ালিটি স্পিনার, যা ছিল অস্ট্রেলিয়ার, পাকিস্তানের, ভারতের, শ্রীলঙ্কার; ওদের কখনোই ছিল না। ওদের হয়ে হাত ঘুরাত প্যাট সিমকক্স, বা অদ্ভুতুড়ে অ্যাকশনের জন্য বেশি নজরকাড়া পল এডাম্স। এটার পরেও ওরা উপমহাদেশ ও শারজাহর মরা উইকেটে খেলতে এলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাড়ি যেত। পুরো কৃতিত্বটাই তাঁর গেম প্ল্যানিংয়ের।

১৯৯৯ বিশ্বকাপ ওরা জিতেই যেত, স্টিভ ওয়াহর সহজ ক্যাচ হার্শাল গিবস ধরেও ছেড়ে দিল এবং পরের ম্যাচেই লান্স ক্লুজনারের সেই অদ্ভুতুড়ে দৌড়! অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার সেই সেমিফাইনাল ম্যাচটি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওয়ানডের মর্যাদা পেয়েছে। স্টিভ ওয়াহ নিজেও বলেছিলেন বিশ্বের সেরা দলটি আজকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল।

২০০৩–এর আসর বসবে আফ্রিকায়। নিজের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল দল। এরই মধ্যে বিশ্ব জয় শেষ। শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই বাকি। হান্সি তখন বিশ্বজুড়েই মহাতারকা। তাঁর সাফল্য তখন মধ্যগগনে গনগনে সূর্যের সমান। সে তখন পূর্ণিমার জ্বলজ্বলে চাঁদ, যার আলোয় কোটি কোটি নক্ষত্রও ম্লান হয়ে যায়।

কিন্তু চাঁদ-সূর্যতেই তো গ্রহণ লাগে!
হান্সির ওপরও ইবলিস শয়তানের কুনজর পড়ল।

২০০০ সালের ভারত সিরিজ শেষে মুম্বাই পুলিশের এক উচ্চতর কর্মকর্তা কাজ শেষে বাড়ি ফিরলে তাঁর বাচ্চারা তাঁকে বলে, ‘তুমি হান্সি ক্রনিয়ের টেপ বাড়িতে এনেছ কেন?’
তিনি হান্সিকে চেনেন না। বুঝতেই পারেননি বাচ্চারা কী বলছে।

এদিকে তাঁর বাচ্চারা ক্রিকেট–পাগল। হান্সি প্রতি ম্যাচ শেষে প্রেজেন্টেশনে এসে কথা বলছে, বাচ্চারা তখন সহজেই তাঁর কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরন, উচ্চারণ ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছে। বাবার অফিসের টেপে তাঁর কণ্ঠস্বর বুঝতে তাঁদের কোনো অসুবিধা হয়নি।  

ঘটনা হচ্ছে তখন মুম্বাইয়ে এক্সট্র্শন, কিডন্যাপিং ইত্যাদি খুব বেড়ে গিয়েছিল। পুলিশ সেগুলো রুখতে ফোনে আড়িপাতা শুরু করে।
এদিকে ভারতে ম্যাচে অবৈধ জুয়া ছিল মিলিয়ন ডলার বিজনেস। মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড এটা ম্যানেজ করত।

সেই সূত্রে একটা বুকির ফোনে আড়ি পাততে গিয়ে পুলিশের রেকর্ডে এই কথোপকথন চলে আসে। অমুক কেন ওভার করল না। তমুক কি বোলিং করবে? কখন করবে? কোন ব্যাটসম্যান কত রান করবে? ইত্যাদি।

পুলিশের মাথাতেই আসেনি ওটা ম্যাচ পাতানোর কথাবার্তা। ওরা ভেবেছে এমনিতেই ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

আমরা সবাই জানি ফুটবলে যেমন কোচ ক্রিকেটে তেমনই ক্যাপ্টেন মহাগুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। পিচ দেখে দল নির্বাচন, ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে বোলার পরিবর্তন, ফিল্ডিং সাজানো, ব্যাটিং অর্ডারের অদলবদল ইত্যাদি সবই ক্যাপ্টেনের মাথা থেকে বের হয়। আজকের মতো মুখস্থ ক্যাপ্টেন্সি ক্রনিয়ে কখনোই করত না। ব্যাটিংয়েই দেখা যেত পরিস্থিতি বুঝে কখনো সে নিজে তিনে উঠে এসেছেন, কখনো মার্ক বাউচারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ব্যাটসম্যানরাও পজিশন অনুযায়ী পারফর্ম করত না। তাঁর কাজ হচ্ছে রান করা। তিনে নামলেই কি, চারে নামলেই কি! ক্রিকেট জুয়ায় জুয়াড়িরা কোন বোলার কখন নো বল করবে, ওয়াইড বল করবে, ছয় মারবে, কোন ব্যাটসম্যান কত নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসবে, রান কত হবে, কে কতটা উইকেট পাবে ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই বাজি ধরে। এ কারণে ম্যাচ পাতাতে হলে ক্যাপ্টেনকে হাতে রাখা অতি জরুরি।

মুম্বাই পুলিশের সামনে হান্সি ক্রনিয়ের নাম চলে আসায় ওরা একটু নড়েচড়ে বসে। হান্সি তখন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নামগুলোর একটি। নিজ দেশে তাঁর সম্মান প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার পরেই। তিনিই প্রথম শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি যে স্থানীয় কালোদের কাছেও হিরো। কালো কালো শিশুদের জিজ্ঞেস করা হলে ওরা বলে ওরা বড় হয়ে হান্সি ক্রনিয়ে হতে চায়। এমন না যে ওদের দলে আর ভালো কোনো তারকা নেই; বরং তখনকার দক্ষিণ আফ্রিকা দলটি ছিল তারার হাট। গ্যারি কার্স্টেন, হার্শাল গিবস, জ্যাক ক্যালিস, ল্যান্স ক্লুজনার, এলান ডোনাল্ড, শন পোলক, মার্ক বাউচার....তালিকা অতি দীর্ঘ।

ওর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য–প্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগ করলে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা কূটনৈতিক সম্পর্কই ভেঙে যাবে। পুলিশ তাই আরেকটু গভীরে তদন্ত শুরু করে। গ্রেপ্তার হয় বুকি। সে স্বীকার করে ক্রনিয়ে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।

ঘটনা হচ্ছে টেস্ট সিরিজ জয় শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে সিরিজ হেরে বসে। পঞ্চম ম্যাচে জিতলে ব্যবধান ২-৩ হবে, ইজ্জত খানিকটা রক্ষা হবে। হারলেও অসুবিধা নেই। ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়টাই তখন সবচেয়ে বেশি হাইলাইট পেয়েছে।
এ সময়ে এক বুকি ক্রনিয়েকে বলে পঞ্চম ম্যাচ হেরে গেলে সে এত ডলার পাবে।

ক্রনিয়ে তখন তাঁর ওপেনার হার্শাল গিবসকে বলে, ‘তুমি যদি কালকে ২০–এর নিচে আউট হও, তাহলে ১৫ হাজার ডলার পাবে। আউট হবে?’
গিবস তখন তরুণ। ক্রনিয়ে তখন ওর হিরো। পয়সার লোভ কে সামলাতে পারে? সে বলল, ‘অবশ্যই।’

হেনরি উইলিয়ামস নামের আরেক বোলার ছিল। সে–ও রাজি হয়ে গেল।
ব্যস, এরপর ওদের আর কোনো কথা হলো না।

মাঠে নেমে গিবসের মনে হলো, ধুর! বেহুদা আউট হব ক্যান?
সে ওর স্বভাবসুলভ ব্যাট চালাল, ৭৪ রানের ইনিংস খেলল।
হেনরি উইলিয়ামসও বোলিংয়ে এসেই গাঙ্গুলিকে খেয়ে ফেলল এবং ইনজুরির কারণে দুই ওভারও শেষ করতে পারল না।

জুয়াড়ির প্ল্যান অনুযায়ী ওরা কিছুই করল না। ম্যাচটাও দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে যায়।
বুকি ২০ মিলিয়ন ডলার লস করে।

কথিত আছে, এরই বদলা নিতে ওরা পুলিশের কাছে ক্রনিয়ের নাম দিয়ে দেয়।
যা–ই হোক, ভারত থেকে অফিশিয়াল অভিযোগ করা হয়। ক্রনিয়ে অস্বীকার করে। দক্ষিণ আফ্রিকা নিজের সূর্য সন্তানকে ডিফেন্ড করে। আলী বাখার (ওদের বোর্ড চেয়ারম্যান) খুব কঠিন ভাষায় এই অভিযোগের নিন্দা জ্ঞাপন করেন। টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়। গোটা বিশ্ব ভারতে গালাগাল করতে থাকে। এ কেমন হাস্যকর অভিযোগ? ভারতের কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে?

এবং এর দুয়েক দিন পরেই বাংলাদেশের প্রথম আলো পত্রিকার একদম ফ্রন্ট পেজ নিউজে দেখি, ম্যাচ পাতানোর দায় স্বীকার করেছেন হান্সি ক্রনিয়ে!
শুধু প্রথম আলোই নয়, ক্রিকেট প্লেয়িং নেশনগুলোর পত্রিকাজুড়েই এটিই ছিল ফ্রন্ট নিউজ। যেন নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে। যেন ইরাকের বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধে ঝাঁপ দিয়েছে আমেরিকা! ক্রিকেট দেবতার স্বর্গ হতে পতন ঘটল! অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়!! বিশ্বে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ক্রিকেট–অনুরাগীদের একটা ঘোরের মধ্যে নিয়ে গেল। ক্লাস টেনে পড়া আমার সেই প্রথম অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি করা, মানুষের পক্ষে সবই সম্ভব। মানুষ কখনোই পাপ–পুণ্যের ঊর্ধ্বে বিচরণ করে না। যে যত মহানই হোক না কেন, পদস্খলন ঘটতেই পারে।

ব্যক্তিজীবনে হান্সি ভীষণ ধার্মিক ছিলেন। যিশুর ভক্ত ছিলেন, গির্জায় নিয়মিত যেতেন। তাই নিজের বিবেকের কাছেই লড়াই করে টিকতে পারছিলেন না। দায় স্বীকার করে পাপমুক্ত হতে চাইলেন। আমাদের উপমহাদেশের পাতানো ম্যাচের ওস্তাদ কারিগরেরা হলে জীবনেও স্বীকার করত না। ধরা পড়ার পরও নির্দোষ দাবি করে যেত।  
যা–ই হোক, ক্রনিয়ের পতনের শুরু ওই যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচটির বর্ণনা দিলাম, সেখানেই।

মরে যাওয়া সেই টেস্টের চতুর্থ দিন এক লোক হান্সির ব্যক্তিগত ফোনে কল করে বলে, ‘তুমি যদি কালকে ইনিংস ঘোষণা দিয়ে ম্যাচের একটি রেজাল্ট বের করে আনতে পারো, তাহলে আমি চ্যারিটিতে এত হাজার ডলার দান করব।’
তখনকার যুগে এতটাই সহজ ছিল তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভক্তদের যোগাযোগ করা।

হান্সির কাছে বুদ্ধিটা ভালো লাগলেও বুঝতে পারছিল হয়তো ইংলিশ ক্যাপ্টেন নাসির হোসেন ইনিংস ডিক্লেয়ার করতে রাজি হবে না। তারপর ম্যাচে যখন নাসির রাজি হয়, তখন হান্সিই কল করে বলে, ‘প্ল্যান ইজ অন!’

বিষয়টা দুই দলের খেলোয়াড়দের কাছেই অবাক লেগেছিল। ডোনাল্ড নিজের সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি হলে ইংল্যান্ডকে জয়ের সুবাসের ধারেকাছেও ভিড়তে দিতাম না। সেই ডিক্লেয়ারেশন ইংল্যান্ডকে সুযোগ করে দিয়েছিল।’
গিবস বলেন, ‘আমি জানতামই না যে ক্রিকেটে এমনও নিয়ম আছে যে ইচ্ছা করলেই ক্যাপ্টেনশূন্য রানে ইনিংস ঘোষণা করতে পারেন!’

সবাই ক্রনিয়ের ওপর ভরসা রাখত। কাজেই কেউ কোনো আপত্তি জানাল না।
ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে যায়, বুকিটা সেই ম্যাচ থেকে কয়েক হাজার ডলার লাভ করলেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ক্রনিয়ের হাতে ১০ হাজার ডলারের একটি বান্ডিল এবং ওর বউয়ের জন্য একটি লেদার জ্যাকেট ‘উপহার’ হিসেবে দেয়।

বুকিটা পরে বলে, সেই জ্যাকেটটা আসলে সে নিজের বউয়ের জন্য কিনেছিল। সাইজ ঠিক না হওয়ায় ক্রনিয়েকে ধরিয়ে দিয়েছে।

শচীন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলি
ফাইল ছবি

সেই যে ও টাকা নিয়েছিল, ওটাই ওর কাল হয়। সেই সূত্রেই ইন্ডিয়ান বুকিরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ২০ মিলিয়ন ডলার হারে।

হান্সির কাছে ম্যাচে জয়টাই সবকিছু ছিল। ইংল্যান্ডের সঙ্গে হারার জন্য সে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেনি। জয়ের জন্যই করেছিল এবং ওদেরও শর্ত ছিল ইনিংস ডিক্লেয়ার করা, যাতে রেজাল্ট আসে। জয়-পরাজয় বিষয় ছিল না।

কিন্তু সে টাকা নিয়ে ম্যাচ পাতিয়েছিল। এটাই সে স্বীকার করে এবং আরও বড় অভিযোগ প্রমাণিত হয় যে সে দুই অশ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়—গিবস ও উইলিয়ামসকেও নষ্ট করেছিল। ওদের ক্যারিয়ার প্রায় শেষ করে দিচ্ছিল। বর্ণবাদের সঙ্গে যুদ্ধরত দক্ষিণ আফ্রিকায় যা রীতিমতো ফৌজদারি অপরাধ!
ক্রিকেটে সে আজীবন নিষিদ্ধ হয়।

গিবসের ওপরও ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে। যাঁরা গিবসকে খেলতে দেখেছেন, তাঁরা হয়তো আজও মনে করতে পারবেন তাঁর জার্সি নম্বর ছিল ‘০০’। ক্রিকেটাররা অনেক কুসংস্কারপূর্ণ হয়ে থাকে, ‘শূন্য’ সংখ্যাটা কোন ব্যাটসম্যান নিজের জার্সি নম্বর হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবে না। গিবস এ সংখ্যাটা বেছে নেওয়ার পেছনে এই ঘটনাই জড়িত। ‘তুমি আগে যত রানই করো না কেন, তোমাকে আবার শূন্য থেকেই শুরু করতে হয়।’

আজীবন নিষিদ্ধ হওয়ার পরও দক্ষিণ আফ্রিকানরা আজও তাঁকে ভালোবাসে। সেই ঘটনার দুই বছর পরও তাঁর ঠোঁটে কেউ হাসি দেখেনি। তাঁকে অনুপ্রাণিত করতে দক্ষিণ আফ্রিকানরা প্লেকার্ড নিয়ে খেলা দেখতে আসত, ‘Hansie, God forgives, so do we!’
শতাব্দীর সেরা দক্ষিণ আফ্রিকান হওয়ার গণভোটে তাঁর অবস্থান ছিল তালিকায় ১১তম।
যে মুহূর্তে ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে সাধারণ জীবন শুরু করলেন, ঠিক সেই সময়েই আবারও তিনি সংবাদপত্রের শিরোনাম হলেন। ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ল্যান্ড করতে গিয়ে প্রাইভেট বিমান দুর্ঘটনায় দুই পাইলটসহ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক হান্সি ক্রনিয়ে নিহত!’

আবারও অবিশ্বাস্য! অলকল্পনীয়!! কীভাবে সম্ভব?
লোকে বলাবলি করতে লাগল এ নিশ্চয়ই কোনো নাটক। নিজের ইমেজকে ক্লিন করতে হান্সি নিজের মৃত্যুর ঘটনা সাজিয়েছে, যাতে ভিন্ন নামে, ভিন্ন পরিচয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে পারেন।
সবারই মনে আশা, সে যেন বেঁচে থাকে।

কিন্তু বাস্তবতা খুবই নিষ্ঠুর। বাড়িতে ফেরার কমার্শিয়াল ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় সে প্রাইভেট বিমান ভাড়া করে। আবহাওয়ার সঙ্গে লড়তে ব্যর্থ হয়ে তার ক্যারিয়ারের মতোই মাঝ আকাশ থেকে হালকা বিমানটি পাহাড়ে আছড়ে পড়ে।
ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ষুরধার মস্তিষ্কটি মাত্র ৩২ বছর বয়সেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়। তাঁর স্মরণে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় ক্রিকেটারদের কাঁদতে দেখেছি। রাগবি ম্যাচে তাঁর স্মরণে পালন করা হয় নীরবতা। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে রাগবি ম্যাচের প্রতিটা দর্শক ‘হান্সি’ ‘হান্সি’ জয়ধ্বনিতে বাতাস ভারী করে তোলে। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে, ‘হান্সি ক্রনিয়ে অমর! সে বেঁচে থাকবে চিরকাল!’ তাঁর ভক্তরা, অনুরাগীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আজও ভাবে, সে যে কী হতে পারত, আর কী হয়ে গেল!
আজকের আধুনিক ক্রিকেট কি সেই খেলোয়াড়টির কাছে ঋণী নয়?