বিয়ের চাপ: পর্ব ৯

বিয়ে
প্রতীকী ছবি

থানায় ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর সাহেবের রুমে বসে আছি। সাব-ইন্সপেক্টর করিম সাহেব এবং কনস্টেবল রাজা মিয়াও উপস্থিত রয়েছেন। এতক্ষণ আজকের পুরো বিষয়টি করিম সাহেব ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর সাহেবের সামনে বর্ণনা করলেন। বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে শুনে জাহাঙ্গীর সাহেব কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন,
—দীপু সাহেব আপনিই তাহলে ঘটনার মূল নায়ক? তা আপনি করেন কী?
—খাই আর ঘুমাই।
—আর কিছুই করেন না! গুড। তার মানে আপনি বেকার? তা বেকার মানুষ কিডন্যাপ করবেন না তো কী করবেন? কথায় আছে না, বেকার মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা।
এবার জাহাঙ্গীর সাহেব দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—তা আপনি কী করেন? নাকি আপনিও কি বেকার? আপনার মস্তিষ্কভরাও কি শয়তান?
দুলাভাই উত্তর দেবার আগেই করিম সাহেব বলে উঠলেন,
—স্যার আপনি এই ব্যাটারে কিছু জিগায়েন না।
—কেন?
—ওর মাথায় সমস্যা আছে। ও যদি মুখ খোলে তাহলে আপনার মাথা আউলাইয়া দেবে। ও অলরেডি আমার মাথা পুরা খারাপ করে দিছে।
—তাই নাকি? তাহলে তো ওর সঙ্গে একটু কথা বলতেই হয়। বলেন আপনি কী করেন?
—স্যার আমি বেকার না। আমার পেশা হলো, আমি ঘরজামাই। আর সেই সাথে আমি একজন লেখকও।

—তাই নাকি? তা কী লেখেন আপনি?
—গান, কবিতা যখন যা মনে চায় লিখি। তবে কাগজে না। আমি মনে মনে লিখি। আসলে সাহিত্য আমার ভেতরে ভরপুর হয়ে আছে। যার কারণে আমি যখন-তখন যেখানে খুশি চাইলেই লিখতে পারি। আপনি বললে এখনই আপনাদের নিয়ে কবিতা লিখে দিতে পারব।
—ইন্টারেস্টিং। আচ্ছা আমাদের নিয়ে দু-চারটা লাইন লেখেন তো।
দুলাভাই দশ সেকেন্ড চুপ থেকে কী যেন ভাবলেন। তারপর খুকখুক করে দুবার কাশি দিয়ে সুর করে বললেন,
—আকাশে পাখি, জলেতে মাছ
থানায় জাহাঙ্গীর স্যার।
কাঁঠাল ভাঙলেই মাছি আসবে,
কাচ্চি বানাতে খাসি লাগবে,
তাই তো আমি বিচি কলা খাই না।
বলেই দুলাভাই সবার মুখের দিকে তাকালেন। তার ভাব দেখে মনে হলো, তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, সবাই তার এই অসাধারণ কবিতা শুনে হাততালি দেবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে আমি ছাড়া উপস্থিত সবাই তার দিকে রেগে তাকিয়ে রইলেন। কয়েক সেকেন্ড পর জাহাঙ্গীর সাহেব দাঁত কটমট করে বললেন,
—মিয়া ফাজলামি করেন? আগা নাই, মাথা নাই, ছন্দ নাই, অর্থ নাই এটা কবিতা!
—স্যার এটা আলট্রা আধুনিক কবিতা। আধুনিক কবিতার পরের ধাপ। এসব জিনিস সবাই বুঝতে পারে না। স্যার এক কাজ করি, আপনাকে একটা রোমান্টিক কবিতা বলি। আমার রোমান্টিক কবিতা ভালো হয়। আমি শিওর আপনার ভালো লাগবে।
—তাই নাকি? আচ্ছা এক কাজ করেন, আমাকে একটা রোমান্টিক কবিতা বানিয়ে দেন। আগামীকাল আমার ম্যারেজ ডে। আমি আমার স্ত্রীকে ওই কবিতাটি উপহার দেব। এটা তার জন্য বিশাল এক উপহার হবে। কী বলেন করিম সাহেব?
—তা তো হবেই। কিন্তু স্যার, এ পাগলে কী বানায় সেটা আগে দেখেন। তারপরে ভাবি রে দেবেন কী দেবেন না, সেটা ঠিক কইরেন। এই পাগলের কোনো বিশ্বাস নেই।
—করিম সাহেব, মানুষকে এতটা আন্ডারএস্টিমেট করা ঠিক না। কার মধ্যে যে কী প্রতিভা লুকানো আছে, সেটা বলা মুশকিল।
—না স্যার, ওর মধ্যে কোনো প্রতিভা লুকানো নাই। আমি এ ব্যাপারে এক শ ভাগ শিওর।
এ সময় জাহাঙ্গীর সাহেব দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—শোনেন সুন্দর একটা কবিতা বানান, যাতে করিম সাহেবের ভুল ভেঙে যায়। কী পারবেন তো?
—অবশ্যই পারব স্যার।
—শোনেন, কবিতা ভালো হলে এই কেস থেকে আপনার নাম বাদ দিয়ে আপনাকে ছেড়ে দেব।
—সত্যি স্যার! স্যার আপনি ভাবির নামটা বলেন। তাহলে লিখতে আমার সুবিধা হবে। ভাবছি, আপনাদের দুজনের নাম দিয়ে কবিতা লিখব। যেহেতু আপনার নাম জাহাঙ্গীর, সেহেতু কবিতায় একটা মোগল মোগল ফ্লেভার থাকবে। একটা তাজমহল তাজমহল ফ্লেভার থাকবে।
জাহাঙ্গীর সাহেব খুবই উৎসাহিত বোধ করলেন। তিনি আনন্দিত হয়ে বললেন,
—আমার স্ত্রীর নাম সালমা। শোনেন কবিতার ছন্দ কিন্তু মিলিয়ে দেবেন। ছন্দ ছাড়া কবিতা আমার ভালো লাগে না।
—অবশ্যই ছন্দ মিলিয়ে দেব স্যার।
দুলাভাই আবার ১০ সেকেন্ড ভাবলেন। তারপর দুবার খুকখুক করে কাশলেন। এরপর সুর করে কবিতা বলা শুরু করলেন।
আমি জাহাঙ্গীর তুমি সালমা,
আমি পাঞ্জাবি তুমি পায়জামা।
আমি আলু তুমি ফুলকপি
আমি ভাতিজা তুমি ফুপি।
আমি মরা গরু তুমি শকুন
আমি চুল তুমি উকুন।
আমি…. .
এ পর্যায়ে জাহাঙ্গীর সাহেব সামনের টেবিলে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
—চুপ কর হারামজাদা। তুই আর একটা অক্ষরও বলবি না।

বিয়ে
প্রতীকী ছবি

জাহাঙ্গীর সাহেবের দুটো চোখ মনে হচ্ছে রাগে বের হয়ে আসবে। তিনি করিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—আরে আপনি তো ঠিকই বলেছেন। এই শালার তো মাথায় সমস্যা আছে। এই শালার চেহারা দেখলেই তো মনে হয় এ পাগলাগারদ থেকে পালায় আসছে। এই কবিতা দিলে আমার স্ত্রী আমারে আগে পেটাবে, তারপর সরাসরি তালাক দেবে। শালায় কয় কী, আমি বলে আমার বউয়ের ভাতিজা! আমার বউ বলে আমার ফুপু! শালা বদমাশ।
—স্যার আমি আপনাকে আগেই বলছিলাম, এই শালারে আপনি মুখ খুলতে দিয়েন না।
—করিম সাহেব, আপনি এই শালার নামে রেপ, খুনসহ যা যা পারেন সব ধারা ঢুকায়ে দেন। আমি ওরে ফাঁসিতে ঝোলাব। ও আমারে বলে আমি মরা গরু? আমার স্ত্রী নাকি শকুন? হারামজাদা।
বলেই জাহাঙ্গীর সাহেব রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। জাহাঙ্গীর সাহেব বেরিয়ে যেতেই দুলাভাই করিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—জাহাঙ্গীর স্যারে চেতল কেন সেটাই তো বুঝলাম না। ওগুলো তো উপমা। উনি তো আমার কবিতার ফিলিংসটাই বুঝলেন না! মরা গরুর প্রতি শকুনের যে কঠিন ভালোবাসা, আমি স্যারের স্ত্রীর প্রতি স্যারের সেই ভালোবাসা বোঝাতে চেয়েছি। আফসোস উনি বুঝলেন না।
করিম সাহেব দুলাভাইযের কথার কোনো উত্তর দিলেন না। সম্ভবত উনি ভয়ে উত্তর দেননি। হয়তো ভাবছেন দুলাভাই আবার উল্টাপাল্টা কী বলে বসে।
একটু পর জাহাঙ্গীর সাহেব আবার রুমে ঢুকলেন। তিনি চেয়ারে বসেই বললেন,
—দেখেন আমাদের হাতে অনেক কাজ। আপনাদের এই একটি কেস নিয়ে এতক্ষণ সময় দেওয়ার সময় আমার হাতে নেই। কনেকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন, বলে ফেলেন। নতুবা মাইর শুরু হবে।
এবার তিনি কনস্টেবল রাজা মিয়াকে বললেন,
—কবিরকে খবর দাও। বলো তার জিনিসপত্র রেডি করতে। দুজনকে মেরে কথা বের করতে হবে।
রাজা মিয়া রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। একটু পরই পাহাড়ের মতো একজন লোককে সঙ্গে নিয়ে রাজা মিয়া রুমে ঢুকলেন। দুলাভাই আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
—দীপু এরা তো মনে হয় মাইরের ব্যাপারে সিরিয়াস। কবির শালার চেহারা দেখছ। মনে হয় এই শালা দুনিয়ায় আসছে শুধু মানুষ পেটানোর জন্য।
দুলাভাই এবার জাহাঙ্গীর সাহেবের দিকে তাকায় বললেন,
—স্যার যদি আমি সব স্বীকার করি তাহলেও কি মারবেন?
—না, স্বীকার করলে মারব না।
—জি স্যার, আমিই মলি বেগমকে কিডন্যাপ করেছি। ও আমার শালাকে রিজেক্ট করে অন্য একজনকে বিয়ে করছিল, এটা আমার সহ্য হয়নি। তাই মলিরে কিডন্যাপ করছি।
—ভেরি গুড। ভালোয় ভালোয় স্বীকার করে ভালো করেছেন। এখন বলেন উনি কোথায়?
—উনি স্যার বাংলাদেশেই আছেন।
—ঠিক আছে বুঝলাম উনি বাংলাদেশেই আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কোথায় আছে, সেই ঠিকানাটা দেন।
—আমি ঠিকানা পাব কোথায়? স্যার শোনেন, কে কখন কোথায় থাকে সেটা আল্লাহ ছাড়া কারও বোঝার ক্ষমতা নাই। এ জন্যই কবি বলেছেন,
লেইস ফিতা লেইস,
চুড়ি ফিতা রঙিন সুতা রঙিন করিবে মন
লেইস ফিতা লেইস…
করিম সাহেব দাঁত–মুখ শক্ত করে বললেন,
—শালায় আবার উল্টাপাল্টা উদাহরণ দেওয়া শুরু করছে। ওই তুই না বললি, তুই কিডন্যাপ করছিস? তাহলে ঠিকানা জানিস না কেন?
—স্যার আপনারা বলছেন কিডন্যাপ করছি স্বীকার করলে মাইর দিবেন না। তাই স্বীকার করছি। কবির স্যারের যে দেহ, আপনারা যদি এখন আমাকে বলেন যে বাংলাদেশের সব অপরাধ আমি করছি, আমি তাতেও রাজি। জীবন বাঁচানো ফরজ। এ জন্যই কবি বলছেন।

ঝাকানাকা ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলানা
ঝাকানাকা ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলানা
মীরাবাই
হেইলা দুইলা হেইলা দরবার নাচায়
মীরাবাই...
করিম সাহেব চিৎকার করে বললেন,
—তোর আল্লাহর দোহাই লাগে, তুই চুপ কর। তোর কবিদের কথা আর তুই বলিস না।
—ঠিক আছে আর কবিদের কথা বলব না। করিম স্যার আমি কি আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে পারি?
—করেন।
—আচ্ছা করিম স্যার, এখানে ঝাকানাকা ঝাকানাকা কতবার বলতে হবে? তিনবার নাকি চারবার?
এবার করিম সাহেব জাহাঙ্গীর সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—স্যার আমারে দুই দিন ছুটি দেন। এ ব্যাটা যত দিন থানায় আছে তত দিন আমি আর থানায় আসব না। আমি আর ওরে নিতে পারছি না।
এরপর করিম সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—ভাই, আপনারা এরে সহ্য করেন কীভাবে?
আমি কিছু না বলে শুধু একটু মুচকি হাসলাম।
জাহাঙ্গীর সাহেব কবির সাহেবকে বললেন,
—কবির তুমি এদের নিয়ে যাও। আমি এক ঘণ্টার মধ্যে সব তথ্য চাই।
কবির সাহেব আর রাজা মিয়া আমাদের ঠেলতে ঠেলতে অন্য এক রুমে নিয়ে গেলেন। আমাদের চুপচাপ বসে থাকতে বলে দুজনেই বের হয়ে গেলেন। তারা চলে যেতেই, দুলাভাই গলার স্বর নিচু করে বললেন,
—দীপু তুমি কি ভয় পাচ্ছ?
—জি দুলাভাই। পুলিশের মাইর খুবই খারাপ।
—শোনো ভয় পাইও না। শুনছি পুলিশ নাকি লাঠি দিয়ে শুধু পাছায় পেটায়। শোনো মারার আগেই চোখ–মুখ খিঁচে পাছাটাকে একটু টাইট করে রাখবা। প্রথম প্রথম লাগবে। একটু পর দেখবা ঐ জায়গাটা জমে ফ্রিজ হয়ে অনুভূতিহীন এলাকা হয়ে গেছে। তখন আর ব্যথা লাগবে না।
—আপনি এই তথ্য জানলেন কীভাবে? আপনার কি পাছায় বেত খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে?

—অবশ্যই আছে। শোনো, আমাদের এক স্যার ছিলেন। উনি সব সময় আমাদের বেত দিয়ে মারতেন। তবে উনি মেয়েদের হাতে বেত দিয়ে মারলেও ছেলেদের মারতেন পাছায়। কেউ কোনো অন্যায় করলে বা পড়া না পারলে, তাকে সামনে ডেকে নিতেন। তারপর বলতেন পাছা ব্যাঁকা করে দাঁড়াতে। আমরা পাছা ব্যাঁকা করে দাঁড়াতাম। তারপরে উনি মাইর শুরু করতেন। তাকে আমরা সবাই পাছা ব্যাঁকা স্যার বলে ডাকতাম।

এরপর দুলাভাই পাছা ব্যাঁকা করে কীভাবে টাইট হয়ে দাঁড়াতে হবে, তা আমাকে দেখালেন। আমি অবাক হয়ে দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই লোকটাকে আমি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।

কিছুক্ষণ পর কবির সাহেব বিশাল মোটা এক তৈলাক্ত লাঠি নিয়ে রুমে ঢুকলেন। সেই সাথে সাব-ইন্সপেক্টর করিম সাহেবও এলেন। তারা রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দুলাভাই পাছা ব্যাঁকা করে তাদের মুখের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারা দুজনেই দুলাভাইয়ের এই অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়ানো দেখে অবাক হয়ে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। কবির সাহেব করিম সাহেবের দিকে তাকায়ে বললেন,
—স্যার এই শালার সমস্যা কী? ও এইভাবে সামনে এসে দাঁড়াইল কেন?
করিম সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না। উত্তর দিলেন দুলাভাই।
—স্যার আপনারা তো এখন আমাদের মারবেনই। তাই আগে থেকে পাছা ব্যাঁকা কইরা খাড়াইছি। নেন পাছায় বেত মারা শুরু করেন।
করিম সাহেব কিছুক্ষণ দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর কবির সাহেবকে বললেন,
—আপনি যা পারেন করেন। আমি এই পাগলরে আর নিতে পারছি না। ওরা সব স্বীকার করলে আমাকে ডাক দিয়েন।
এ কথা বলেই করিম সাহেব বের হয়ে গেলেন। করিম সাহেব বের হয়ে যাওয়ার পরও দুলাভাই একইভাবে বাঁকা হয়ে রইলেন। কবির সাহেব দুলাভাইকে বললেন,
—আপনি সোজা হয়ে দাঁড়ান। আর আমার মুখের সামনে থেকে সরেন।
দুলাভাই সরলেন না। তিনি একইভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। কবির সাহেব কিছু বলতে যাবেন, এ সময় করিম সাহেব দ্রুত রুমে ঢুকলেন। ঢুকেই বললেন,
—কবির সাহেব গুড নিউজ। এই পাগলরে আর জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে না। ওই মহিলাকে পাওয়া গেছে। মহিলার স্বামী থানায় এসেছেন তার অভিযোগ তুলে নিতে।
আমি আর দুলাভাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালাম।
করিম সাহেব আমাদের ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর সাহেবের রুমে নিয়ে গেলেন। রুমে ঢুকেই দেখলাম জয় সাহেব চেয়ারে বসে আছেন। জয় সাহেব আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। মনে হলো এ হাসি বিশ্বজয়ের হাসি। তার হাসি দেখে দুলাভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,
—দীপু তুমি হতাশ হইয়ো না।
—দুলাভাই আমি হতাশ হইনি।
—শোনো মলির বিয়ে হয়ে গেলেও কোনো সমস্যা নাই। আমি কূটনামি করে ঠিকই ওদের তালাকের ব্যবস্থা করব। তারপর তুমি তারে বিয়া করবা। অতএব নো চিন্তা ডু ফুর্তি।
আমি অবাক হয়ে দুলাভাইয়ের দিকে তাকালাম। আল্লাহ এই লোককে কী দিয়া বানাইছে!
থানা থেকে বের হয়ে জয় সাহেবকে ধন্যবাদ জানালাম। জয় সাহেব বিগলিত হয়ে বললেন,
—আরে ধন্যবাদ তো আপনাকে জানানো উচিত। আপনার জন্যই তো আমি আমার ভালোবাসাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। আপনারা সময় করে আমার বাসায় আসবেন। আমাদের দোয়া করে যাবেন। আর আপনারা এখন সোজা বাসায় চলে যান।
দুলাভাই মুখ ভার করে বললেন,
—আপনি আমাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবেন না?
—প্রশ্নই আসে না। আমি বাসরঘরে বউকে একা বসিয়ে রেখে এসেছি। এখন রাত তিনটা বাজে। অলরেডি কয়েক ঘণ্টা নষ্ট করে ফেলেছি। বাকি রাতটা নষ্ট করতে চাই না। খোদা হাফেজ।

জয় সাহেব গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। আমি আর দুলাভাই হতাশ হয়ে চলে যাওয়া গাড়ির পেছনে তাকিয়ে রইলাম।

বিয়ে
প্রতীকী ছবি

বুঝলাম না কেন জানি খুব কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে দুলাভাইকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদি। সারা জীবন কোনো ব্যাপারেই সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে পাগলামি করতে করতেই কখন যেন সিরিয়াসলি মলিকে ভালোবেসে ফেলেছি।
দুলাভাই সম্ভবত আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনার সুরে বললেন,
—কান্না কইরো না।
—দুলাভাই আমি কান্না করছি না।
—কান্না করবা না কেন? একটু কাঁদো। কাঁদলে মনটা হালকা হবে। শোনো ভালোবাসা মানেই যে পেতে হবে তার তো কোনো মানে নেই, তাই না? কবি বলেছেন, বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।
আমি অবাক হয়ে দুলাভাইয়ের দিকে তাকালাম।
—এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
—মাই গড, দুলাভাই জীবনে এই প্রথম আপনি সঠিক জায়গায় সঠিক উদাহরণ দিলেন।
— ওই ব্যাটা, তোর বউরে নিয়া আরেক ব্যাটা বাসররাত করতাছে, কোথায় তুই কান্নাকাটি করবি। আর আমি তোরে সান্ত্বনা দিমু, তা না। তুই আমার উদাহরণ নিয়া গবেষণা করতাছিস। ব্যাটা ফাজিল।
দুলাভাইয়ের কথা শেষ হতেই, দুজনে একসঙ্গে হো হো করে হেসে উঠলাম। হাসতে হাসতে খেয়াল করলাম, দুলাভাই হাসলেও তার চোখ থেকে পানি ঝরছে। আমি হাসি বন্ধ করে দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বুঝলাম দুলাভাই আমার কষ্টে, আমার জন্য কাঁদছেন। আচ্ছা বলতে পারেন, এই মানুষটা এত ভালো কেন? চলবে...

*[email protected]